আজ বৈঠক, তবে এখনই ভিসা নয় মোদীকে
গামিকাল গাঁধীনগরে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক ন্যান্সি পাওয়েলের। আজ সন্ধ্যায় গুজরাতের রাজধানী পৌঁছে গিয়েছেন ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। কিন্তু এই বৈঠক ঘিরে এ দেশে রাজনীতির অলিন্দে যতই জল্পনা হোক না কেন, আমেরিকা আজ স্পষ্টই জানিয়ে দিল, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে তাদের ভিসা নীতির এখনই বদল হচ্ছে না।
মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র জেন সাকির কথায়, “এই বৈঠক কোনও নীতি বদলের প্রতিচ্ছবি নয়। এটা ভারতের মাটিতে শুধুই একটা বৈঠক, যার সঙ্গে অন্য কোনও কিছুর সম্পর্ক নেই।”
মার্কিন কূটনীতিকদের তরফেও মোদীকে এ কথা জানানো হয়েছে। আমেরিকার বক্তব্য, ভারতে লোকসভা নির্বাচন আসন্ন, এবং মোদীকে তাঁর দল প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করেছে। এখন তাঁর সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্ত নিলে এটা মনে হতে পারে যে, লোকসভা ভোটের ফল সম্পর্কে আমেরিকা আগাম কোনও অবস্থান নিচ্ছে। সেই কারণেই আগামিকালের বৈঠকে ভিসা প্রসঙ্গ তোলা হবে না। কথা হবে গুজরাতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আরও মজবুত করা নিয়েই।
তবে সরকারি ভাবে আমেরিকা এই অবস্থান নিলেও তাদের বিদেশ দফতর যে দীর্ঘদিন ধরে মোদী সম্পর্কে অবস্থান নরম করার পক্ষপাতী, তা মানছেন একাধিক মার্কিন কূটনীতিক। মোদীর প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশেষ করে ব্রিটেনের মনোভাব যাতে নরম হয়, সে জন্য সক্রিয় ছিল বিদেশ দফতর। সে কাজে সাফল্যও এসেছে। মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেই এর আগে দিল্লিতে নিযুক্ত ব্রিটেনের হাইকমিশনার গুজরাতে গিয়ে মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
মার্কিন কূটনীতিক সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে কনফেডারেশন অব ব্রিটিশ ইন্ড্রাস্ট্রিজ এবং গুজরাতি শিল্পমহলের চাপও কাজে এসেছে। কারণ, গুজরাত সরকার সে দেশের প্রচুর লগ্নি আটকে দিয়েছিল।
কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসের বড় অংশ এখনও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে কট্টর মোদী-বিরোধী। ফলে গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর বিজেপি মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার আগেই তাঁর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেও সফল হয়নি মার্কিন বিদেশ দফতর।
ব্যর্থতাটা এক অর্থে নরেন্দ্র মোদীরও। মার্কিন ভিসা না-পাওয়াটা যে তাঁর পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন নয়, সেটা মোদী বিলক্ষণ জানেন। সেই কারণে মার্কিন মুলুকে নিজের হয়ে সওয়াল করতে গত কয়েক বছর ধরেই একটি জনসংযোগ সংস্থাকে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। বহু অনাবাসী গুজরাতি শিল্পপতিরাও এ বিষয়ে সক্রিয় ছিলেন। আমেরিকায় প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে বিজেপি-র শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে। সক্রিয় ছিল তারাও। বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহও সম্প্রতি আমেরিকা গিয়ে নিজের মতো করে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মোদীকে ঘিরে আমেরিকার ৯ বছরের ভিসা নীতি বদলের কোনও সম্ভাবনা এখনই চোখে পড়ছে না।
মার্কিন কংগ্রেস কড়া অবস্থান নিলেও বিদেশ দফতর অবশ্য তাদের এক্তিয়ারে থেকে মোদীর সঙ্গে সম্পর্ক যতটা সম্ভব সহজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত জুলাই-অগস্ট মাস থেকে এই বরফ গলানোর কাজ শুরু করেন দক্ষিণ এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত দুই সহকারী সচিব রবার্ট ব্লেক এবং জিওফ প্যাট। গুজরাত সরকারের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের সেই নেপথ্য দৌত্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি।
গোড়ায় মোদীকে দিল্লি এসে পাওয়েলের সঙ্গে বৈঠক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। দিল্লিতে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে মোদী এবং পাওয়েল দু’জনেই আমন্ত্রিত ছিলেন। মার্কিন বিদেশ দফতর বলেছিল, সেই অনুষ্ঠানের ফাঁকেই একান্ত সাক্ষাৎকার হতে পারে। কিন্তু মোদী রাজি হননি। তিনি গাঁধীনগরে বৈঠক করার কথা বলেন। তাতে সম্মতি দিয়েছে মার্কিন বিদেশ দফতর। যাকে কৌশলী কূটনীতি বলেই মনে করা হচ্ছে।
একাধিক কূটনীতিকের বক্তব্য, পাওয়েল গাঁধীনগরে গিয়ে বৈঠক করায় জনমানসে এই বার্তা গিয়েছে যে, এতে মোদীরই জয় হল। রাজনীতিক হিসেবে সেই বার্তা দেওয়ার দায়ও রয়েছে মোদীর। আর তাঁকে সেই বার্তা দিতে সাহায্য করে কূটনৈতিক চালে অনেকটাই এগিয়ে গেল মার্কিন বিদেশ দফতর।
কূটনৈতিক চালের অঙ্গ হিসেবেই আজ গোটা বিষয়টির সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের যোগাযোগ নিয়ে ধোঁয়াশা বজায় রাখতে চেয়েছে মার্কিন বিদেশ দফতর। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বা বিদেশসচিব জন কেরি এই বৈঠকের বিষয়ে জানেন কি না, তা খোলসা না-করতে চেয়ে সাকি বলেছেন, “এই সব সিদ্ধান্ত সব সময় শীর্ষস্তরে নেওয়া হয় না। তবে এটা ঠিক, যাঁদের মতামত প্রয়োজন, তাঁরা সকলেই একমত হয়েছেন যে, এই বৈঠক হওয়া দরকার।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.