ঝাঁপ, গায়ে আগুনের হুমকি, সংসদে আজ তেলঙ্গানা যুদ্ধ
ংসদে কাল পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য গঠন বিল পেশ করার জন্য শেষ মুহূর্তে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মনমোহন সিংহ সরকার। কিন্তু তার আগে তেলঙ্গানা প্রশ্নে যে খণ্ডযুদ্ধ আজ লোকসভায় দেখা গেল, তাতে চরম উৎকন্ঠায় কংগ্রেস। কারণ, সীমান্ধ্র অঞ্চলের সাংসদরা আজ শুধু তাণ্ডব চালিয়েই থেমে যাননি, বরং কাল তাঁরা কী করতে পারেন, তারও নমুনা দেখিয়ে রেখেছেন! এমনকী, তাঁদের কয়েক জন আবার এমন হুমকিও দিয়েছেন যে, কাল লোকসভায় রাজ্য ভাগের বিল পাশ করানোর চেষ্টা হলে গায়ে আগুন দেবেন। কারও হুঁশিয়ারি, লোকসভায় দর্শক গ্যালারি থেকে ঝাঁপ দেবেন!
লোকসভার এমন বিশৃঙ্খল দশা দেখে প্রধানমন্ত্রীর খেদ, “সভায় যা ঘটছে, তাতে বুক ফেটে যাচ্ছে। শান্তি বজায় রাখার এত আবেদন সত্ত্বেও এমন ঘটনা গণতন্ত্রের পক্ষে দুঃখজনক।” শুধু ওই মন্তব্যেই থেমে না থেকে মনমোহন আজ অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ-সহ বিজেপি-র চার শীর্ষ নেতার সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সারেন বিল পাশের রাস্তা খুলতে।
কিন্তু তাতেও বা বরফ গলার ইঙ্গিত মিলল কোথায়!
আগের অবস্থানে অনড় থেকেই বিজেপি নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তাঁরা পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের পক্ষে। তবে শর্ত আছে দু’টি।
সীমান্ধ্রের জন্য যথাযথ প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে।
, সংসদে আলোচনা করে সুষ্ঠু ভাবে বিল পাশ করাতে হবে।
এই অবস্থায় কংগ্রেস নেতৃত্বই বুঝে উঠতে পারছেন না, সীমান্ধ্রের চরম বিরোধিতা ও সংসদে আলোচনার শর্ত এই জোড়া চাপ সামলে আদৌ তেলঙ্গানা বিল পাশ করানো সম্ভব কিনা। সংসদে এই বিল উঠলেই সীমান্ধ্রের সাংসদরা গোল পাকাবেন। তখন প্রতিবাদী সাংসদদের লোকসভা থেকে বের করে দিয়ে বা সাসপেন্ড করলেও যে সমস্যা মিটবে, তা-ও নয়। বিজেপি আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছে, তারা সাংসদদের সাসপেন্ড করার পক্ষপাতী নয়। ফলে কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, সুষ্ঠু ভাবে তেলঙ্গানা বিল পাশ করানোটা এখন প্রায় সোনার পাথরবাটির মতো। কারণ, বিজেপি নেতৃত্ব চান না লোকসভা ভোটের আগে তেলঙ্গানা বিল পাশ করিয়ে কংগ্রেস রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে যাক। আর সেই কারণেই নিত্য-নতুন ছুতো খুঁজছে বিজেপি।
কংগ্রেস যে এই অভিযোগ তুলতে পারে, সেই অঙ্ক কষে বিজেপি এ ব্যাপারে আগাম পাল্টা চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে। তারা বলে যাচ্ছে, কংগ্রেসই আসলে চায় না বিল পাশ হোক। যদিও বিজেপি সূত্রের খবর, তেলঙ্গানা নিয়ে তাদের দলে দু’রকম মত রয়েছে। একাংশের বক্তব্য, তেলঙ্গানা বিল এখনই পাশ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে তাদের আর এই ঝঞ্ঝাট পোহাতে হবে না। কিন্তু বড় অংশের মত, এই মুহূর্তের তাগিদটা উপেক্ষা করা চলে না। বিল পাশ হয়ে গেলে লোকসভা ভোটে তেলঙ্গানায় সুবিধা পেয়ে যাবে কংগ্রেস।
বিজেপি-তে দ্বিমত থাকলেও কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কিন্তু তেলঙ্গানা প্রশ্নে একমত। তাঁরা মনে করছেন, যে ভাবেই হোক বিল পাশ করাতে হবে। তা না হলে তেলঙ্গানা ও সীমান্ধ্র উভয় অঞ্চলেই লোকসভা ভোটে ভরাডুবি হবে কংগ্রেসের। গত দুই লোকসভা ভোটে এই দু’টি অঞ্চল থেকেই ৩০ জনেরও বেশি সাংসদ পেয়েছিল কংগ্রেস। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথরা তাই চাইছেন, সংসদে গণ্ডগোল হলে স্পিকারের মাধ্যমে সীমান্ধ্রের সাংসদদের সাসপেন্ড করে বিল পাশের চেষ্টা করতে। কারণ বিজেপি এই বিলে সমর্থন করবে বলে জানিয়ে রাখায়, সীমান্ধ্রের সাংসদরা না থাকলেও সাংসদ-সংখ্যায় টান পড়বে না। তাই সাংসদদের সাসপেন্ড করতে বিজেপি যাতে বাধা না দেয়, সে জন্য শেষ মুহূর্তেও তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন কংগ্রেসের ম্যানেজাররা।
কাল বিলটি পেশ করে অন্তর্বর্তী বাজেট পাশের পরে তা পাশ করানোর চেষ্টা করতে পারে সরকার। সরকারের সেই চেষ্টা ভেস্তে দিতে দলমত নির্বিশেষে সীমান্ধ্রের সাংসদরা আজ দুপুর থেকে দফায় দফায় নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। তাঁরা সভায় এমন নজিরবিহীন হাঙ্গামা করার পরিকল্পনা করছেন, যাতে সরকারের সব পরিকল্পনাই পণ্ড হয়ে যায়। অতীতে মহিলা সংরক্ষণ বিল ঠেকাতে যেমনটা হয়েছিল।
সীমান্ধ্রের সাংসদদের রুখতে লোকসভায় নিরাপত্তা রক্ষী এবং ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ডদের নিয়ে সেক্রেটারি জেনারেল আজ একটি বৈঠক করেন। ঠিক হয়, লোকসভায় ঢোকার সময় কোনও সাংসদের কাছে দাহ্য পদার্থ বা সে রকম কিছু যাতে না থাকে তার ওপর কড়া নজর রাখা হবে। সজাগ থাকবেন মার্শালরাও। সীমান্ধ্রের প্রত্যেক সাংসদের ওপর নজর রাখা হবে। সংসদের লবি থেকে শুরু করে সর্বত্র ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমেও চলবে নজরদারি।
যদিও কোনও সরঞ্জাম ছাড়াই সীমান্ধ্রের সাংসদরা কেমন তাণ্ডব চালাতে পারেন তার নমুনা আজ দেখা গিয়েছে সংসদে। তাঁদের হট্টগোলে রেল বাজেট পুরোটা পড়তে পারেননি মল্লিকার্জুন খার্গে। লোকসভার রিপোর্টারদের পেন-খাতা কেড়ে নিয়েছেন তাঁরা, ছিঁড়ে-ছুড়ে দিয়েছেন সংসদের কার্যসূচির তালিকা। এমনকী, স্পিকার মীরা কুমারের মুখ ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন পোস্টার তুলে ধরে। এক সময় তেলঙ্গানা ও সীমান্ধ্রের কংগ্রেস সাংসদদের মধেই হাতাহাতির উপক্রম হয়। মজার বিষয় হল, সীমান্ধ্রের সাংসদরা আজ যা করলেন, মাত্র এক বছর আগে আলাদা রাজ্য চেয়ে তেলঙ্গানার কংগ্রেস সাংসদরা সেটাই করেছিলেন। তেলঙ্গানা ওই সাংসদরাই আজ তৎপর ছিলেন হট্টগোল-হাঙ্গামা থেকে সনিয়া গাঁধীকে বাঁচাতে। যাতে কংগ্রেস সভানেত্রীর গায়ে এসে কিছু না পড়ে।
অন্ধ্রপ্রদেশেরই দু’টি পক্ষের এমন মরিয়া মেজাজের মাঝখানে সরকার কি পারবে এ যাত্রায় তেলঙ্গানা বিল পাশ করাতে? ঘোর সংশয়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।

সভায় যা ঘটছে, তাতে বুক ফেটে যাচ্ছে। শান্তি বজায় রাখার
এত আবেদন সত্ত্বেও এমন ঘটনা গণতন্ত্রের পক্ষে দুঃখজনক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.