প্রিমিয়াম ট্রেন চালু করে
আয় বাড়ানোর নয়া পন্থা
নাম ‘প্রিমিয়াম ট্রেন’। অন্তর্বর্তী রেল বাজেটে তা চালু করার প্রস্তাব পেশ করলেন রেলমন্ত্রী। পরিষেবা যা-ই হোক, এই ট্রেনের ভাড়া ঠিক হবে বিমানের কায়দায়। অর্থাৎ যে দিন থেকে এই ট্রেনে আসন সংরক্ষণ শুরু হবে, সেই দিন থেকে যাত্রার সময় যত এগিয়ে আসবে, ভাড়াও তত বাড়তে থাকবে।
ভাড়ার এই পদ্ধতির নাম ‘ডায়নামিক ফেয়ার স্ট্রাকচার সিস্টেম’। সাধারণ ট্রেনে ৬০ দিন আগে থেকে আসন সংরক্ষণ করা যায়। সম্পূর্ণ বাতানুকূল এই প্রিমিয়াম ট্রেনগুলির ক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণ শুরুই হবে যাত্রার ১৫ দিন আগে থেকে। এবং এই ট্রেনে সংরক্ষণের প্রথম দিনের ন্যূনতম ভাড়াই রাজধানী বা শতাব্দী এক্সপ্রেসের তৎকাল ভাড়ার থেকে বেশি হবে। যেমন, রাজধানীর এসি থ্রি টায়ারে তৎকালে টিকিট কাটতে যা খরচ হয়, আসন সংরক্ষণ শুরুর দিনেই প্রিমিয়াম ট্রেনের এসি থ্রি টায়ারের ভাড়া তার চেয়ে একটু বেশি হবে। তার পরে সময় ও চাহিদা অনুযায়ী টিকিটের দাম আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করবে। ঠিক কী হিসেবে এই ভাড়ার অঙ্ক কষা হবে, তা শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে বলে রেল কর্তারা জানিয়েছেন।

বাড়তি ভাড়া তো বটেই, পাশাপাশি সাধারণ ট্রেনের আরও কয়েকটি সুবিধেও প্রিমিয়াম ট্রেনে পাওয়া যাবে না। প্রবীণ নাগরিক বা অন্য কোনও কোটায় যাত্রী-ভাড়ায় কোনও ছাড় নেই। যাত্রীদের কেবলমাত্র কনফার্মড টিকিটই দেওয়া হবে। কোনও ওয়েটিং লিস্ট বা আরএসি টিকিট হবে না। এমনকী কোনও যাত্রী টিকিট বাতিল করলেও তিনি দাম ফেরত পাবেন না বলে জানিয়েছে রেল মন্ত্রক।
রেল-সূত্রে বলা হচ্ছে, আমেরিকা ও ব্রিটেনের বেশ কয়েকটি ট্রেনে এই ধরনের ভাড়ার পদ্ধতি রয়েছে। ভারতে তা এই প্রথম। এর আগে নীতীশ কুমারের আমলে কিছু ট্রেন বেছে নিয়ে তাতে টিকিটের চাহিদা অনুযায়ী ভাড়া কম-বেশি করা হয়েছিল। অর্থাৎ যে মরসুমে টিকিটের চাহিদা বেশি, তখন ভাড়া বেশি। আবার যে মরসুমে চাহিদা কম, তখন ভাড়া কম। কিন্তু দেশজোড়া সমালোচনায় এই নিয়ম স্থায়ী হয়নি। অনেকেই বলেছিলেন, রেলের মরসুম ১২ মাস। সব ট্রেনেই সারা বছর অপেক্ষমান যাত্রীর তালিকা থাকে। তাই দু’তিন মাসের মধ্যেই এই পদ্ধতি তুলে দেওয়া হয়।
এর পর গত বছর বড়দিনে নয়াদিল্লি থেকে মুম্বই পর্যন্ত রাজধানী এক্সপ্রেসের মতোই একটি বিশেষ বাতানুকূল ট্রেন চালায় রেল বোর্ড। তাতে আসন সংরক্ষণের জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে ওই ‘ডায়নামিক ফেয়ার স্ট্রাকচার সিস্টেম’ চালু করা হয়েছিল। মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই রুটে রাজধানী চালিয়ে যা আয় হয়, ওই ক’দিনে বিশেষ ট্রেনটি চালিয়ে তার থেকে প্রায় ৪৮ শতাংশ বেশি আয় হয়েছিল।
প্রাথমিক পরিকল্পনা খেটে যাওয়ায় এ বারের অন্তর্বর্তী রেল বাজেটে সমস্ত জোন মিলিয়ে মোট ১৭ জোড়া প্রিমিয়াম ট্রেনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছে চারটি হাওড়া-পুণে, হাওড়া-মুম্বই, শিয়ালদহ-জোধপুর এবং হাওড়া-কাটরা। এ ছাড়া দু’টি প্রিমিয়াম ট্রেন রাজ্যকে
ছুঁয়ে যাবে কামাখ্যা-নিউ জলপাইগুড়ি-নয়াদিল্লি এবং কামাখ্যা-নিউ জলপাইগুড়ি-হাওড়া-চেন্নাই। রেলের বক্তব্য, যেখানে যেখানে টিকিটের চাহিদা বেশি বা যাত্রী থাকা সত্ত্বেও ট্রেন কম রয়েছে, সেই সব রুটেই প্রিমিয়াম ট্রেন চালানোর কথা বলা হয়েছে।
কবে চালু হবে এই ট্রেন? বাজেটে তার উল্লেখ নেই। রেল-সূত্রের দাবি, এপ্রিলের আগে নয়। তবে যাত্রীদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, অনেকগুলো টাকা বেশি দিয়ে এবং কোনও ছাড় না পেয়ে এমন টিকিট তাঁরা কাটবেন কেন? বিমানের মতো ভাড়ার কাঠামো যখন, তা হলে কি যাত্রার সময়ে পরিষেবাটাও বিমানের মতো হবে, যেখানে প্রায়শই কোনও না কোনও ভাবে রেলের নিরাপত্তা ও পরিষেবায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে?
এর চেয়েও বড় কৌতূহল, প্রিমিয়াম ট্রেনের ভাড়া কি বিমানভাড়াকে ছুঁয়ে ফেলবে? এখানে অভয় দিয়েছেন রেলকর্তারা। বলেছেন, তেমন সম্ভাবনা নেই। ভবিষ্যতে কী হয়, সেটাই দেখার।

প্রিমিয়াম পরিচয়
• বিমানের কায়দায় ‘ডায়নামিক ফেয়ার স্ট্রাকচার সিস্টেম’, অর্থাৎ আসন সংরক্ষণ শুরুর দিন থেকে যাত্রার সময় যত এগোবে, ভাড়াও তত বাড়বে।
• প্রথম দিনে সংরক্ষণের ন্যূনতম ভাড়াই রাজধানী-শতাব্দীর তৎকালের চেয়ে বেশি।
• যাত্রার ১৫ দিন আগে থেকে আসন সংরক্ষণ শুরু।
• কোনও রকম কোটা নেই।
• কেবলমাত্র কনফার্মড টিকিট, ওয়েটিং লিস্ট-আরএসি নেই।
• টিকিট বাতিল করলেও ভাড়া ফেরত নয়।
• ১৭ জোড়া ট্রেনের রাজ্য পেয়েছে ৪টি, ঘুরপথে আরও দু’টি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.