পদ্মা-মেঘনার ইলিশ ফের যাচ্ছে ও বাংলায়।
ভারত সরকারের অনুরোধে ইলিশ রফতানির ওপর থেকে বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তবে মাছের সাইজ অনুযায়ী ন্যূনতম একটি দর নির্দিষ্ট রাখার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। প্রস্তাব, রফতানির জন্য বাংলাদেশের ঘরোয়া বাজার থেকে সামান্য বেশি দর ঠিক করা হোক। বাণিজ্য মন্ত্রকের এর কর্তা বুধবার আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, দামের বিষয়টি চূড়ান্ত করে আগামী সপ্তাহেই ভারতে ইলিশ রফতানির ওপর বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা করা হবে। সে ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি থেকেই কলকাতার বাজারে মিলতে পারে বরিশাল বা ভোলার ইলিশ।
ঘরোয়া বাজারে ইলিশের জোগান বাড়িয়ে দাম মধ্যবিত্তের আয়ত্তে রাখার কারণ দেখিয়ে ২০০৭-এ ইলিশ ও অন্য মাছ রফতানি নিষিদ্ধ করেছিল বাংলাদেশের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। পরে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে ২০০৯-এ ইলিশ রফতানির নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহার করলেও সাইজ অনুযায়ী ইলিশের রফতানি-দর বেঁধে দেয়। কিন্তু দেশের বাজারে ইলিশের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় অনেকে রফতানি শুরুর সিদ্ধান্তকেই দায়ী করেন। এর পরে ২০১২-র ৩১ জুলাই ইলিশ রফতানিতে তিন মাসের পরীক্ষামূলক নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এর পরে আর তা ওঠেনি।
শেখ হাসিনা সরকারের নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গত মাসে ঢাকায় গেলে দিল্লির তরফে ইলিশ রফতানির ওপরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আর্জি জানানো হয়। ২২ জানুয়ারি ভারতীয় হাই কমিশনার পঙ্কজ সারন ঢাকায় বাংলাদেশের মৎস্য ও জলসম্পদমন্ত্রী মহম্মদ শায়েদুল হকের সঙ্গে দেখা করে ভারতে ইলিশ রফতানির ওপর সব রকম বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার আর্জি জানান। মন্ত্রী তাঁকে আশ্বাস দেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে শীঘ্রই এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত তিনি ঘোষণা করবেন।
বাংলাদেশ সরকারের এক কর্তা জানান, ভারতের আর্জি পাওয়ার পরে ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার ফলাফল খতিয়ে দেখা হয়। দেখা যায়, চাহিদা থাকায় ইলিশ চোরাপথে ঠিকই ভারতের বাজারে চলে যাচ্ছে। ফলে ঘরোয়া বাজারে যেমন দাম কমেনি, তেমনই বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। ইলিশ রফতানির সঙ্গে যুক্ত কয়েকশো ব্যবসায়ীও এই সিদ্ধান্তে জীবিকা হারিয়েছেন। সরকারি হিসেবে , ২০১১-১২ সালে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয়েছিল ৬১২৩.৬৫ টন ইলিশ, যার মূল্য ছিল ২৯৫ কোটি টাকা। এই সব বিবেচনা করেই ভারতে ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে।
কিন্তু এফবিসিসিআইয়ের সদস্যরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, রফতানি অবাধ করলে ডলারের লোভে ব্যবসায়ীরা রফতানিতেই জোর দেবেন। ফলে দেশের বাজারে ইলিশের দামে বাড়বে। তার চেয়ে ২০০৭-এর মতো ইলিশের সাইজ অনুযায়ী রফতানি-দর নির্ধারণ করা হোক। বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, বণিক সভার প্রস্তাব সরকারের মনে ধরেছে। আলোচনা করে দর নির্দিষ্ট করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ঢাকা চেয়েছিল ফেব্রুয়ারির প্রথমে সরস্বতী পুজোর সময়েই কলকাতার বাজারে ইলিশ পৌঁছাতে। কারণ জোড়া ইলিশ দিয়ে পুজো করার চল রয়েছে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বহু পরিবারের। কিন্তু দরের বিষয়টি ঠিক করে উঠতে না-পারায় তা হয়ে ওঠেনি। |