ব্যবসার টিপস
আপনার কর্মীদের প্রাপ্য সুবিধা দিচ্ছেন তো?
ব্যবসা করতে চাইলে প্রথম থেকেই কোন পথে এগোতে হবে, সেটাই আমি এক-একটি পর্বে বলে দিচ্ছি। এর আগে ব্যবসার লাইসেন্স নেওয়া ও প্রফেশন ট্যাক্স দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নিয়ে কথা বলেছি। এ বার আপনাদের জানা উচিত, যাঁদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন বা করাবেন, তাঁদের প্রাপ্য অধিকার দেওয়ার বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই অধিকার না-দিলে কিন্তু আইনের বিচারে আপনি অপরাধী। চলুন এই নিয়েই আলোচনাটা সেরে ফেলি আজ।

প্রাপ্য অধিকার দিতে
ব্যবসা দাঁড় করাতে আপনি যদি কর্মী রাখেন, তা হলে তাঁর ন্যায্য অধিকারটাও আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে। এই অধিকার বলতে বোঝাচ্ছে প্রাপ্য বেতন, নিয়োগপত্র, ছুটি, কাজের সময়-সহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া। আপনি কর্মী নিয়োগ করার সময়ে যা যা সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, পরেও তা ঠিক মতো পালন করছেন কি না, সেটা দেখা রাজ্য সরকারের কাজ। আমাদের রাজ্যে এ জন্য আছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল শপ্স অ্যান্ড এস্টাব্লিশমেন্টস অ্যাক্ট, ১৯৬৩’। এই আইন অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যবসাস্থলের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা দোকানের মালিককে বাধ্যতামূলক ভাবে একটি রেজিস্ট্রেশন করাতে হয় ব্যবসা শুরুর ৩০ দিনের মধ্যেই। যাতে কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তার কর্মীদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে কি না, সে ব্যাপারে তাদের উপর নজরদারি চালাতে পারে সরকার।

কোথা থেকে পাবেন?
কলকাতায় এই রেজিস্ট্রেশন দেয় চিফ ইন্সপেক্টরের দফতর। শহরের মধ্যে থানা অনুযায়ী অঞ্চল ভাগ করে ওই সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
ঠিকানা অফিস অব চিফ ইন্সপেক্টর, ওয়েস্ট বেঙ্গল শপস অ্যান্ড এস্টাব্লিশমেন্টস ডিরেক্টরেট (আন্ডার দ্য ডিপার্টমেন্ট অব লেবার, গভর্নমেন্ট অব ওয়েস্ট বেঙ্গল), ৬ চার্চ লেন, থার্ড ফ্লোর (তৃতীয় তল), কলকাতা- ১
প্রতিটি জেলায় রয়েছে শপস অ্যান্ড এস্টাব্লিশমেন্টসের আঞ্চলিক দফতর। ব্যবসা যেখানে অবস্থিত, সেই এলাকার দফতরই রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেয়।
কী ভাবে নেবেন?
প্রত্যেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা দোকানের মালিককে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে হয় সংশ্লিষ্ট শপস অ্যান্ড এস্টাব্লিশমেন্টস ইন্সপেক্টরের কাছে।
সে জন্য নির্দিষ্ট ফর্ম-বি (পার্ট ওয়ান) পূরণ করে জমা দিতে হয় তিন কপি।
সব ঠিক থাকলে ফর্ম-বি (পার্ট টু)-তে সার্টিফিকেট অব রেজিস্ট্রেশন মঞ্জুর করা হয়।
রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ তিন বছর।
যদি ওই সার্টিফিকেট নেওয়ার পর ব্যবসা অন্য কোথাও সরে যায়, তা হলে ১৫ দিনের মধ্যে সেটা জানিয়ে দিতে হয় রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার জন্য।
ব্যবসাস্থল বদলে যাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে নতুন তথ্য দিয়ে ফের রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা যায়।
মালিক যদি রেজিস্টার্ড প্রতিষ্ঠান বা দোকানের কোনও শাখা খুলতে চান কিংবা ব্যবসা বাড়াতে বা কমাতে চান, তা হলে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট সংশোধন করতে হয়। এর জন্য ফর্ম-সি দাখিল করে আবেদন করতে হয়।

সঙ্গে যা লাগে
রেজিস্ট্রেশন বা নথিভুক্তির জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়
ফর্ম-সেভেনে টিআর৬ চালান, যার মাধ্যমে ফি জমা দেওয়া হয়েছে (দু’কপি)।
ট্রেড লাইসেন্স। আসল এবং কপি। আসলটি ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়।
মেমর্যান্ডাম অ্যান্ড আর্টিকল অব অ্যাসোসিয়েশন অব দ্য কোম্পানি-র কপি।
সংস্থার রসিদ সমেত আরওসি ফর্ম-১৮ অ্যান্ড ৩২-র কপি।
পার্টনারশিপ সংস্থার ক্ষেত্রে তার দলিলের কপি।
সংস্থার ডিরেক্টর বা পার্টনারদের ঠিকানা, নাগরিকত্ব ও নিয়োগের তারিখ-সহ নামের তালিকা। তিন কপি।
আবেদনপত্র হিসেবে ফর্ম-বি। ৩ কপি।
দু’কপি করে ফর্ম-জি ও এইচ।
প্রতিটি কর্মীর জন্য ফর্ম-এক্স। তিন কপি করে।
নিয়োগের তারিখ, বেতন, পদ ইত্যাদি তথ্য-সমেত কর্মীদের নামের তালিকা। তিন কপি করে।

ছাড় পাবে যারা
কিছু কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অবশ্য এই রেজিস্ট্রেশন নেওয়ার দরকার পড়ে না। যেমন, ওষুধ বা চিকিৎসার যন্ত্রপাতির বিপণি, সংবাদপত্রের দফতর, ডাক্তার বা আইনজীবীর চেম্বার, শিক্ষা সংক্রান্ত পরিষেবা সরবরাহকারী, সব্জি- মাছ-মাংসের মতো পচনশীল পণ্যের দোকান, পেট্রোল পাম্প, চা-পান-সিগারেটের দোকান, ২৫ জনের বেশি কর্মী নিযুক্ত ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ব্যাঙ্ক, পর্যটন, বিনোদন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।

কর্মীদের অধিকার
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল শপস অ্যান্ড এস্টাব্লিশমেন্টস, ১৯৬৩’ আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা দোকানের কর্মীদের যে-সব অধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, এ বার সেগুলির উপরই একবার চোখ রাখব।

বাধ্যতামূলক ছুটি
জাতীয় ছুটি হিসেবে বছরে ৫ দিন ছুটি দেওয়া বাধ্যতামূলক। ২৩ জানুয়ারি, ২৬ জানুয়ারি, ১ মে, ১৫ অগস্ট, ২ অক্টোবর।

কর্মীদের জন্য
কর্মীদের দিনে সাড়ে ৮ ঘণ্টার বেশি বা সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে বাধ্য করানো যায় না।
কর্মীদের সাধারণ কাজের সময় এবং অতিরিক্ত কাজের সময় (ওভারটাইম) মিলিয়ে দিনে মোট ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ বা বছরে ১২০ ঘণ্টার বেশি ওভারটাইম করানো আইন বিরুদ্ধ।
কাউকে দিয়ে দিনে একটানা ৬ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যায় না, যদি না ন্যূনতম ১ ঘণ্টার বিশ্রাম দেওয়া হয়।
হোটেল, রেস্তোরাঁ, খাবারের দোকান, ক্যাফে রাত ১টার বেশি খোলা রাখা যায় না।
বছরে ন্যূনতম ১৪ দিন পুরো বেতনে বিশেষ ছুটি (প্রিভিলেজ লিভ), ১৪ দিন অর্ধেক বেতনে অসুস্থতার ছুটি (সিক লিভ), ১০ দিন পুরো বেতনে ক্যাজুয়াল লিভ মঞ্জুর করতে হয়। দিতে হয় মাতৃত্বকালীন ছুটিও।

প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব
কর্মীদের নিয়োগের আগে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা দোকানের মালিক তাঁদের নিয়োগপত্র (ফর্ম-এক্স) দিতে বাধ্য।
সপ্তাহের কবে প্রতিষ্ঠান পুরো বন্ধ ও কবে অর্ধেক, তার নোটিস (ফর্ম-জি) সকলের চোখে পড়ার মতো জায়গায় টাঙাতে হয়। একটি কপি শপস অ্যান্ড এস্টাব্লিশমেন্টস দফতরে জমা দিতে হয়।
কর্মীরা কোন দিন পুরো এবং কোন দিন অর্ধেক ছুটি পাবেন, সেটাও লিখে (ফর্ম-এইচ) টাঙিয়ে রাখতে হয়।
দিনে কর্মীদের কত ঘণ্টা কাজ করানো হল এবং কত ঘণ্টা বিশ্রাম দেওয়া হল তার খাতা রাখতে হয় (ফর্ম-আই)।
হিসেব রাখতে হয় (ফর্ম-জে) অগ্রাধিকার ছুটি, অসুস্থতার দরুন ছুটি, সাধারণ ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটিরও।
মহিলা কর্মীরা মাতৃত্বকালীন সুবিধা পেতে পারেন আবেদন (ফর্ম-কে) করে।
দু’জন সাক্ষী-সহ বেতনের খাতা (ফর্ম-এম) রাখতে হয়।
রাখতে হয় ওভারটাইম কাজ করানোর খাতা (ফর্ম-ইউ)।
কর্মীদের সাম্প্রতিক বিভিন্ন তথ্যও লিখে (ফর্ম-ডব্লিউ) রাখতে হয়।
কাউকে দিয়ে ওভারটাইম করাতে হলে, অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে শপস অ্যান্ড এস্টাব্লিশমেন্ট দফতরকে ফর্ম-টি দিয়ে জানাতে হয়। তা সম্ভব না-হলে ওই কাজ শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা ডাক মারফত জানানো যায়।
ছুটিছাটা সংক্রান্ত সংস্থার নিজস্ব নীতি (লিভ পলিসি) দাখিল করতে হয়।

না-মানলে জরিমানা
আইন মেনে কর্মীদের প্রাপ্য অধিকার দেওয়া না-হলে শাস্তি অবধারিত। ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও সর্বাধিক ৩ মাসের হাজতবাস হতে পারে সংস্থার মালিকের।

লেখক আইনজীবী ও কর বিশেষজ্ঞ


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.