মিউচুয়াল ফান্ড
ছোট কিন্তু ছোট নয়
যা ইতিমধ্যেই সেরা বা অন্যদের থেকে ভাল হওয়ার শিরোপা পেয়ে গিয়েছে, তার খোঁজ সবাই করে। কিন্তু ভরসা জেতার মানদণ্ডে যে- কোনও ক্ষেত্রেই মাঝারি বা ছোটদের জায়গা তুলনায় অনেক কম। যে-কারণে মিউচুয়াল ফান্ডের বাজারে পা রেখে বেশির ভাগ লগ্নিকারীই হাতড়ে বেড়ান সেই সব ফান্ড (ইক্যুইটি বা শেয়ার-ভিত্তিক ফান্ড হলে বা ফান্ডের একাংশ শেয়ারে খাটাতে হলে), যেগুলি বড় ও দামি সংস্থার শেয়ারে তহবিল খাটায়। অথচ ছোট ও মাঝারি সংস্থার শেয়ারে তহবিল ছড়িয়ে দেয়, এমন কিছু ফান্ডও তাক লাগানোর মতো রিটার্ন দিতে পারে। কারণ তাদের বড় ও দামি হওয়ার পথ লম্বা হওয়ায়, মুনাফা করার সম্ভাবনাও থাকে তুলনায় অনেকটা বেশি। ভাল রিটার্ন পাওয়ার জন্য আপনাকে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই এগুলির উপর একটু আস্থা রাখতে হবে।

ছোট কারা
লার্জ (বড়) ক্যাপ স্টক, মিড (মাঝারি) ক্যাপ স্টক, স্মল (ছোট) ক্যাপ স্টক শেয়ার বাজারের চলতি শব্দ। কোন সংস্থা কতটা বড়, সেই অনুযায়ী তার শেয়ারের এই শ্রেণি বিভাগ। এখানে বড় বা ছোট সংস্থার শেয়ারের এই বিভেদটা হয় বাজারে সংস্থার মোট শেয়ার মূল্যের (মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন) বিচারে। প্রসঙ্গত, বাজারে একটি সংস্থার যতগুলি শেয়ার রয়েছে, তার সঙ্গে শেয়ারটির বর্তমান দরকে গুণ করলে ওই শেয়ার মূল্য পাওয়া যায়।
বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড আবার এ রকমই বড়, ছোট ও মাঝারি, নানা শ্রেণির শেয়ারে তহবিল ছড়িয়ে দেয়। সে ক্ষেত্রে একটি ফান্ড যে-শ্রেণির শেয়ারে তার তহবিল খাটানোর পন্থা নেয়, তার নামকরণও সেই অনুযায়ী হয়। যেমন, লার্জ ক্যাপ ফান্ড, মিড অ্যান্ড স্মল ক্যাপ ফান্ড ইত্যাদি।

উদাহরণ
আরও স্পষ্ট ভাবে, ছোট ও মাঝারি শেয়ার ব্যাখ্যা করার জন্য একটি উদাহরণ দিচ্ছি।
যেমন, শেয়ার মূল্যের বিচারে বাজারে শীর্ষ স্থান তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস-এর। গত ১৭ ডিসেম্বর ওই মূল্য ছিল ৪,০২,৩১৮ কোটি টাকা। আর সেই বিচারে ৫০ নম্বর স্থানে ছিল বশ ইন্ডিয়া। সে দিন বশের শেয়ার মূল্য ছিল মাত্র ২৮,১০৯ কোটি। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে বড় সংস্থার তকমা পাওয়া শেয়ার অর্থাৎ লার্জ ক্যাপ ও ছোট-মাঝারি সংস্থার শেয়ার অর্থাৎ মিড অ্যান্ড স্মল ক্যাপের মাঝের দূরত্বটা অনেকখানি।

আজ ছোট, কাল বড়
ছোট যে সব সময়ে ছোটই থাকবে তার কোনও মানে নেই। বরং তাদের সামনে বড় হওয়ার লম্বা পথ থাকে বলেই লগ্নিকারীদের পকেট বেশি ভরার সম্ভাবনাও এ ক্ষেত্রে বেড়ে যায়। কেন?
কারণ, ছোট-মাঝারি শেয়ারগুলি পথ চলা শুরু করছে অনেক নীচে থেকে। যেহেতু বড় সংস্থার তুলনায় বাজারে তাদের শেয়ার মূল্যের পরিমাণ অনেকটাই কম হয়। কিন্তু অতি সাধারণ একটি সংস্থাও ভবিষ্যতে ব্যবসার নতুন মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলতে পারে। আর সেটা হলে তার শেয়ার দর নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। তখন দ্রুত বাড়তে থাকবে সংস্থাটির শেয়ার মূল্য। লগ্নিকারীদের একাংশ মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করার সময়ে মাথায় রাখেন এই সমীকরণ। তাঁরা ছোট/মাঝারি শেয়ারের ফান্ডে লগ্নি করতে চান চড়া রিটার্নের লক্ষ্য পূরণ করতেই। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাগুলিও এর উপর ভিত্তি করেই তাদের ছোট ও মাঝারি ফান্ডগুলি তৈরি করে।

ঝুঁকির হিসেব

ছোট ও মাঝারি সংস্থার শেয়ার ভিত্তিক ফান্ড কিনলে আপনি যেমন চড়া রিটার্নের আশায় বুক বাঁধবেন, তেমনই কিন্তু বড় ঝুঁকি বহন করার জন্যও মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে আপনাকে। কারণ
যে-কোনও সময়ে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে না-পারার একটা আশঙ্কা থাকে (লিক্যুইডিটি রিস্ক) এ ক্ষেত্রে। ধরুন, আপনার ফান্ড ম্যানেজার অনেক শেয়ার একসঙ্গে বেচতে চান ভাল দাম পাচ্ছেন বলে। কিন্তু এটা হতে পারে যে, অত শেয়ার কেনার মতো লোকই নেই বাজারে। এটাই হল লিক্যুইডিটি রিস্ক। অর্থাৎ ইচ্ছে না-থাকা সত্ত্বেও কিছু শেয়ার তাঁকে ধরে রেখে দিতে হতে পারে পরের সুযোগে বিক্রির করার জন্য। এমনকী এটাও হতে পারে যে, পরের বার হয়তো মনমতো দামও পাওয়া গেল না। এ সবের প্রভাব পড়বে আপনার ফান্ডের মূল্যেও।
ভাল সংস্থা না-বাছতে পারলে তহবিল মার খাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাজেই ফান্ড ম্যানেজারকে অত্যন্ত সতর্ক হয়ে, খুঁটিনাটি দেখেশুনে শেয়ার বাছতে হয়।

উদাহরণ
এ বার এ রকম একটি ফান্ডের কথাই আপনাদের সামনে তুলে ধরব আমি। তবে আগেই সাবধান করে রাখি, আমি কিন্তু এখানে কোনও ফান্ডের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছি না। কিংবা মনে করবেন না, সেটা পরোক্ষে আপনাদের কেনার জন্য বলছি। শুধুমাত্র চেষ্টা করছি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শেয়ার নির্ভর ফান্ডের পারফর্ম্যান্স সম্পর্কে আপনাদের একটা ধারণা দিতে। আর কিছু নয়।
ফান্ডের নাম: ফ্র্যাঙ্কলিন ইন্ডিয়া স্মলার কোম্পানিজ ফান্ড
চরিত্র:
১) ওপেন এন্ডেড। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোনও মেয়াদ নেই। যখন ইচ্ছে কেনা-বেচা যায়।
২) ডাইভার্সিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ড। অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের শেয়ারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয় এর তহবিল।
৩) নামের মধ্যেই ‘স্মলার কোম্পানিজ’ কথাটি রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, এই ফান্ড শুধুমাত্র ছোট সংস্থার শেয়ারেই টাকা ঢালে। এখানে ছোট সংস্থা বলতে বোঝানো হয়েছে যে, সিএনএক্স ৫০০ ইনডেক্সের আওতায় থাকা ১০০তম শেয়ারটির থেকে যাদের শেয়ার মূলধনের পরিমাণ কম, সেই সংস্থাগুলিকে।
উদ্দেশ্য:
ফান্ডের অন্যতম লক্ষ্য, ভবিষ্যতে উন্নতির সম্ভাবনা বেশি, এমন ছোট সংস্থাকে চিহ্নিত করা। আগামী দিনে যেগুলি বাজারের প্রথম সারির সংস্থার দলে ঢুকে পড়তে পারে। এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যাদের শেয়ার মূলধনের পরিমাণও বাড়তে পারে চোখে পড়ার মতো হারে।
এই ফান্ড সেই সব লগ্নিকারীদেরই নিশানা করে, যাঁদের বেশি রিটার্ন পাওয়ার জন্য একটু বেশি ঝুঁকি নিতে অস্বস্তি বা আপত্তি থাকে না।
লম্বা মেয়াদে তহবিল বাড়ায় এই ফান্ড। তাই ঝুঁকি থাকলেও লম্বা মেয়াদে (অন্তত ৩-৫ বছর) লগ্নি করার পক্ষপাতী যাঁরা, এটি তাঁদের জন্য।
ফান্ড কেনার পর মাঝের সময়টাতে ফান্ডের মূল্যে প্রবল ওঠা-নামা দেখতে হতে পারে। সুতরাং ভাল রিটার্নের খিদে থাকার পাশাপাশি লগ্নিকারীর ঝুঁকির চাপ সহ্য করার ক্ষমতাও থাকতে হবে।

লেখক মিউচুয়াল ফান্ড বিশেষজ্ঞ
(মতামত ব্যক্তিগত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.