এমনিতে জেলার বহু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নেই। সেগুলি চলে কারও বাড়ির উঠোনে, স্থানীয় কোনও ক্লাবে, প্রাথমিক স্কুলে অথবা গাছতলায়। অথচ বছর দু’য়েক আগে সংখ্যালঘু উন্নয়ন তহবিলের টাকায় খয়রাশোলের বাবুইজোড় শ্রীরামপুর অঙ্গনওয়াড়ি ভবন তৈরি হয়ে পড়ে থাকলেও সেটা এখনও ওই কেন্দ্রের হাতে আসেনি। যাথারীতি শ্রীরামপুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি চলছে অন্যের বাড়ির উঠোনেই। বসার জয়গা না থাকার ফলে বহু বছর ধরে শিশুদের পাঠ দেওয়া সম্ভব নয়। কোনওক্রমে খিচুড়ি রান্না করে তা মা শিশুদের বিলি করেই কাজ শেষ করতে বাধ্য হন কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকা। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, যে কেন্দ্রের ভবন তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে, সেই ঘরের দখল পেতে সামস্যা থাকবে কেন? যদি সমস্যা থেকেও থাকে তা মেটাতে কেন উদ্যোগী হয়নি প্রশাসন?
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবুইজোড় শ্রীরামপুর কেন্দ্রটি বহু বছর আগে চালু হয়েছে। বেশ কয়েক বছর স্থানীয় একটি ক্লাব ঘরে চলত। সেই ক্লাব ঘরটি জীর্ণ হয়ে পড়ায় প্রাথমিক স্কুল ঘেঁষা গ্রামের বাসিন্দা জান আলি তাঁর বাড়ির উঠান ও একটি ঘর কেন্দ্রের জন্য ছেড়ে দেন। সেখানেই ১২ বছর ধরে চলছে কেন্দ্রটি। বছর আড়াই আগে খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতি এমএসডিপি প্রকল্পের টাকায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের অদূরে গ্রামেরই বাসিন্দা জাকির খানের জায়গায় শ্রীরামপুর কেন্দ্রের একটি নতুন ভবন তৈরি শুরু হয়। বছর দু’য়েক আগে আনুমানিক সাড়ে চার লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভবনটি তৈরি হলেও জাকির খানের আপত্তিতেই ভবনটির দখল নিতে পারেনি প্রশাসন।
কেন জাকির খান বাধা দিলেন? তাঁর দাবি, “তৎকালীন সিপিএম পরিচালিত খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতি স্ত্রীকে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী পদে চাকরি করে দেবে, সেই শর্তে জায়গা নিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা না হওয়ায় আমি বাড়িটির দখল ছাড়িনি।” অন্য দিকে, খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সিপিএমের সমীর রায়ের দাবি, “ওঁর জায়গা ছিল। ওখানে কেন্দ্র গড়লে কোনও আপত্তি নেই প্রথমে এমন সম্মতি দেওয়ার কিছুদিন পরে হঠাৎ উনি বলেন, ‘তাঁর স্ত্রীকে সহায়িকা পদে নিয়োগ করতে হবে।’ তখনই আমি বলেছিলাম এমন কোনও শর্তে ওখানে কেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব হবে না। তারপরে কাগজে সই করে তাঁর আপত্তি নেই বলে জানিয়েছিলেন। তার পরেই কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভবন তৈরির পর জাকির খান আবার বেঁকে বসেন।” সমীরবাবুর আরও দাবি, “আগেও কেউ তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিল। এখনও কেউ তাঁকে পরামর্শ দেন। সে জন্যই সমস্যা তৈরি হয়েছে।”
জাকিরের পাল্টা দাবি, “আমি কোনও কাগজে সই করিনি। এর আগে হিংলো জলাধার গড়তে আমার জমি গিয়েছে। কোনও উপকার হয়নি আমার পরিবারের। আমার স্ত্রীকে সহায়িকা পদে নিয়োগ করতে হবে এই শর্তে এখানে জমি দিয়েছিলাম। এখন সেটা কেউ অস্বীকার করলে আমার কিছু করার নেই।” এই পরিস্থিতিতে এখন যেখানে কেন্দ্র চলছে সেই, গৃহস্থ আপত্তি না করলেও স্বল্প জায়গায় কেন্দ্র চালাতে অসুবিধা হচ্ছে। ওই কেন্দ্রের কর্মী সুলতা সেন বলেন, “বছর দু’য়েক ধরে কেন্দ্রের ঘর হয়েছে জানি। তবে যতক্ষণ না সেটা হাতে আসছে কোনও সুবিধা হবে না। একবার দফতরের নির্দেশ মেনে নতুন ভবনে ঢুকতে গিয়ে অশান্তি হয়েছিল। তার পর থেকে কষ্ট করেই চলছে মা-শিশু মিলিয়ে ৮০ জন উপভোক্তাকে নিয়ে এই কেন্দ্র। পঞ্চায়েত ও সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়েছি।”
গ্রামের বাসিন্দা জেরিপোশ বিবি, টিয়া মণ্ডল, পূর্ণিমা ভাণ্ডারী, মাধব চট্টরাজরা বলছেন, “জায়গার অভাবে পরিষেবা পেতে সমস্যা হচ্ছে। অথচ কেন্দ্রের জন্য বাড়ি তৈরি করিয়েও লাভ হয়নি। তা হলে কেন ওখানে এত টাকা খরচ করে ভবন নির্মিত হল?” খয়রাশেলের বিডিও মহম্মদ ইসরার বলেন, “বিষয়টি জানি। জটিলতা রয়েছে। চেষ্টা করব সমস্যা মেটাতে।” |