প্রথম দু’টি ইউনিট বহু আগে থেকেই বন্ধ। এ বার পরের তিনটি ইউনিটও বন্ধের উঠল দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডে (ডিপিএল)। আরও প্রস্তাব, ষষ্ঠ ইউনিটের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ করতে হবে পরিচালন বোর্ড অনুমোদন করার পরেই। এমন পরিস্থিতি রাজ্য সরকারের এই বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থায় শুধু মাত্র তিনশো মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সপ্তম ইউনিটই ভরসা। তা-ও সেটি মাঝে মাঝেই বন্ধ রেখে মেরামতির কাজ চলছে। সব মিলিয়ে ডিপিএলের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে শ্রমিক-কর্মীরা।
১৯৬০ সালে ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি ইউনিট চালু হয়। ১৯৬৪ সালে যোগ হয় ৭৭ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও দু’টি ইউনিট। দু’বছর পরে গড়ে ওঠে ৭৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার পঞ্চম ইউনিট। ১৯৮৭ সালে ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ষষ্ঠ ইউনিটটি গড়ে ওঠে। ২০০৮ সালের মে মাসে যোগ হয় ৩০০ মেগাওয়াটের সপ্তম ইউনিটটি। পুরনো হয়ে পড়ায় ও কারিগরি সংক্রান্ত কারণে প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহু দিন আগেই। উৎপাদন খরচ বেশি বলে পঞ্চম ইউনিটটি চালানো হয় আপৎকালীন সময়ে। প্রধান ভরসা ষষ্ঠ ও সপ্তম ইউনিট দু’টি। গত কয়েক মাস ধরে সেই ইউনিট দু’টি নানা কারণে নিয়মিত উৎপাদন করতে পারছে না। |
দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড। |
ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণ জনিত কারণে বেশ কয়েক দিন বন্ধ থাকার পরে ডিসেম্বরের শেষ দিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম ইউনিট দু’টি চালু করা হয়েছিল। কিন্তু ডিসেম্বরের শেষ দিন থেকে ফের বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংস্থার উৎপাদন ক্ষমতা শূন্যে নেমে যায়। তখন থেকেই তৃতীয় ইউনিটটি চালু করার চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু তার উৎপাদন ব্যয় যে দামে বিদ্যুৎ ডিপিএল বিক্রি করে তার থেকে ইউনিট পিছু এক টাকার থেকেও বেশি। ফলে, সেটি চালানো মানে লোকসানে চলা সংস্থার লোকসান আরও বাড়ানো। সংস্থারই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন অবস্থায় ডিপিএলের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ইউনিটটি বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন রাজ্যের বিদ্যুৎ সচিব তথা ডিপিএল পরিচালন বোর্ডের চেয়ারম্যান গোপাল কৃষ্ণান। তিনি জানিয়েছেন, বয়সজনিত কারণে এই ইউনিটগুলির উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। ফলে, চালানো মানে লোকসানের বহর আরও বাড়বে। তা ছাড়া, ষষ্ঠ ইউনিটটির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে এখনই সেটির মেরামতির জন্য অতিরিক্ত খরচ না করার ব্যাপারে কড়াকড়ি জারি হয়েছে। বোর্ডের অনুমোদন না নিয়ে সেটির পিছনেও খরচ করা যাবে না।
বিদ্যুৎ উৎপাদন নয়, বর্তমানে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ কিনে তা সরবরাহ করছে ডিপিএল। সম্প্রতি বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত ডিপিএল পরিদর্শনে এসে জানান, টানা বন্ধ রেখে সপ্তম ইউনিটের মেরামতি হবে। তবে নির্মীয়মাণ অষ্টম ইউনিটটি মাস দুয়েকের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু সব মিলিয়ে ডিপিএলের বর্তমান পরিস্থিতি মোটেও সুখের নয় বলে মনে করছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। ডিপিএলের আইএনটিইউসি নেতা দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “বর্তমান পরিস্থিতি মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। কর্মীরা চিন্তায় আছেন।” |