চারদিকে শাল আর সেগুনের সমারহ। একটু কান পাতলে দিনের বেলাতেও ঝিঝি পোকার ডাক শোনা যায়। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে তোর্সা নদী। যদিও নোংরা ও সংস্কারের অভাবে জলের গতি ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। একসময় এলাকাটি দুষ্কৃতীদের আড্ডাস্থল ছিল বলেও বাসিন্দারা বলাবলি করতেন। কোচবিহার শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরের ওই শালবাগানকে ঘিরে এবার পর্যটন কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বন দফতর। ইতিমধ্যে রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন এবং মুখ্য বনপাল নবীন চন্দ্র বহুগুণা এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন। প্রকল্পের রূপরেখা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।
বনমন্ত্রী বলেন, “ওই জায়গায় একটি পার্ক তৈরি করা হবে। গড়ে তোলা হবে পিকনিক স্পট। পাশের জলাশয়ে বোটিং করার ব্যবস্থাও করা হবে।” মন্ত্রী জানান, এলাকায় কটেজ তৈরির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মুখ্য বনপাল পুরো বিষয়টি দেখছেন। আশা করছি কোচবিহারের পর্যটন মানচিত্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে শালবাগান।
কোচবিহার শহরের রেল ঘুমটি হয়ে গোরস্থানের পাশ দিয়ে দুই কিলোমিটার গেলেই ক্যান সেন্টারের উল্টোদিকের রাস্তাতে পড়বে শালবাগান। শহর ঘেঁষা হলেও সেটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। বন দফতর সূত্রের খবর, ওই শাল বাগান রয়েছে প্রায় ২৮ হেক্টর জমির উপরে। শালের সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর সেগুন গাছও। একসময় ওই বাগান আরও ঘন ছিল। অভিযোগ, বন দফতরের নজরদারির অভাবে সেখান থেকে প্রচুর গাছ রাতের অন্ধকারে চুরি হয়ে যায়। তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা তো বটেই গোটা জেলায় ক্ষোভ রয়েছে। |
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একটা সময় সন্ধ্যার পর ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার উপায় ছিল না। এমনকি দিনের বেলাতেও দুস্কৃতীদের রমরমা ছিল এলাকায়। ওই বাগানকে ঘিরে দুস্কৃতীরা মদ, গাঁজার আড্ডা বসাত। এখন অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টেছে। ২০১০ সালে বাম সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় তৎকালীন বনমন্ত্রী অনন্ত রায় সেখানে প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। ২০১০ সালের ২২ এপ্রিল সেখানে কাজের শিলান্যাস করেন তৎকালীন পর্যটন মন্ত্রী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। ২০১১ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনের উদ্যোগে সেখানে বেশ কিছু কাজ হয়। এক একরের বেশি জমি কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে পাঁচিল তৈরি করা হয়। ভিতরে বসার কয়েকটি শেড তৈরি হয়। পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা হয়। কিন্তু সবকিছু তালাবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, শীতের সময়ে পিকনিকের জন্য বাসিন্দারা সেখানে যান। যে অংশটি পিকনিকের জন্য তৈরি করা হয় তা বন্ধ থাকার জন্য বাইরেই চলে যায় পিকনিক দলগুলি। গোটা এলাকা জুড়ে পিকনিকে ব্যবহার করা প্লাস্টিকের থালা সহ নানা সরঞ্জাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পরিষ্কারের ব্যবস্থা নেই। বন দফতর সূত্রে খবর, কর্মী নিয়োগ না করার জন্য এলাকা বন্ধ রাখা হয়েছে। |