আর্থিক ক্ষতি ও কাঁচামালের অভাবে আড়াই বছরেরও বেশি সময় উত্তর দিনাজপুরের একমাত্র সরকারি শিল্প রায়গঞ্জের ওয়েস্ট দিনাজপুর স্পিনিং মিলের উৎপাদন বন্ধ। রাজ্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের অধীন মিলের কর্মীরা নিয়মিত বেতনও পাচ্ছেন না। অবশেষে মিলের পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়া শুরু করল রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে রাজ্যের শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে। সেই সঙ্গে মিলের ৭০০ কর্মীকে অন্য সরকারি দফতরে নিয়োগেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্পিনিং মিলের পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মিলের কর্মী ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে সরকারের কথা হয়েছে। কারও চাকরি যাবে না। মিলের কর্মীদের প্রয়োজন মতো অন্য সরকারি দফতরে কাজ দেওয়া হবে।”
স্পিনিং মিলের উৎপাদন চালুর দাবিতে আড়াই বছর ধরে আন্দোলন করছে মিলের ডান-বাম বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় খুশির হাওয়া কর্মীদের মধ্যে। সকলেই সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
স্পিনিং মিলে ৫১৪ জন স্থায়ী ও ১৭৯ অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। আর্থিক লোকসানে তুলো সরবরাহকারী দুটি সংস্থাকে কয়েক বছর ধরে তুলোর দাম বাবদ ৮ কোটি টাকা মেটাতে না পারায়, ২০১১ সালের এপ্রিল মাস থেকে সংস্থাগুলি তুলো সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ২০১১ সালের জুলাই মাস থেকে তুলোর অভাবে উৎপাদন বন্ধ হয়। উৎপাদন স্বাভাবিক থাকাকালীন প্রতিদিন ওই মিলে গড়ে ৭ হাজার কেজি সুতো উৎপাদন হত। রাজ্য সরকারের গাফিলতিতেই মিলটি রুগণ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ তুলে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে মিলের চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেন রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত। বর্তমানে ওই পদে চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমান।
মোহিতবাবু বলেন, “মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্পিনিং মিল নিয়ে ঠিক কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা না জেনে মন্তব্য করব না।” সিটু অনুমোদিত স্পিনিং মিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ দেব জানান, “মিলে কর্মীরা ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের বেতন এখনও পাননি। মিলের কর্মীরা কেউই বসে থেকে বেতন নিতে চান না। মুখ্যমন্ত্রী কর্মীদের অন্য দফতরে নিয়োগের কথায় আমরা খুশি। আমরা চাই মিলের উৎপাদন চালু হোক।” আই এন টি ইউ সি অনুমোদিত স্পিনিং মিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিল সরকার এই প্রসঙ্গে বলেন, “মিলের পুনরুজ্জীবন এবং মিল কর্মীদের অন্যত্র নিয়োগের ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করব, নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক রং বিচার করা হবে না।” আই এন টি টি ইউ সি জেলা সভাপতি অরিন্দম সরকারও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর স্পিনিং মিলের পুনরুজ্জীবন ও কর্মীদের জীবিকা সুরক্ষিত রাখার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে আমরা খুশি।” |