এক নিমেষে বরণের আয়োজন বদলে গেল হাহাকারে
ববধূকে বরণ করতে তৈরি হচ্ছিলেন পরিজনেরা। একটা ফোনই বদলে দিল সবকিছু। খুশির মেজাজ নিমেষে বদলে গেল বুকভাঙা হাহাকারে।
নববধূর বরণ অনুষ্ঠানের জন্য পাত্রের পরিজনেরা রাত জেগে আয়োজন করেছিলেন। ভোররাতে প্রদীপ, আলতা, ফল ও মিষ্টি-সহ বরণকুলোও তৈরি হয়ে যায়। প্রতিবেশীরা নববধূকে দেখার জন্য সকাল থেকেই পাত্রের বাড়ির সামনে ভিড় করেছিলেন। কিন্তু সকাল ৬টা নাগাদ হঠাৎ তাল কেটে গেল। পাত্রের এক আত্মীয়ের মোবাইল ফোনে খবর এল, মালদহের ধূমাদিঘি এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে বরযাত্রীদের গাড়ির সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জন বরযাত্রীর।
৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
এই খবর আসা মাত্রই উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘি থানার মাগনাভিটা এলাকায় পেশায় চাষি, পাত্র সত্যম রাজবরের বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়।
শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা গ্রামে। সেইসঙ্গে গ্রামবাসীদের মধ্যে উদ্বেগও বাড়তে থাকে। যে সমস্ত প্রতিবেশীরা বরযাত্রী হিসেবে সত্যমবাবুর সঙ্গে সোমবার মালদহের রসিলাদহে গিয়েছিলেন, তাঁদের পরিজনেরা পরিচিতদের ফোন করে জানার চেষ্টা করতে থাকেন ঠিক কী ঘটেছে। একদল প্রতিবেশী সঙ্গে সঙ্গেই মালদহ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। বেলা ১১টা নাগাদ পাত্র সত্যম তাঁর নববধূ রাধা রামকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিজনেরা। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন নববিবাহিত স্বামী-স্ত্রীও।
ওই দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।
মালদহের রসিলাদহে শোকার্ত পরিজনেরা। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
তাঁরা হলেন পাত্র সত্যমবাবুর দাদা গৌতম রাজবর (৪২), জ্যাঠা গণেশ রাজবর (৫০) ও তাঁর ছেলে গোপীচাঁদ রাজবর(১৩)। আজ, বুধবার গৌতমবাবুর করণদিঘি থানায় সিভিক পুলিশের কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। পেশায় দিনমজুর গণেশবাবুর ছেলে গোপীচাঁদ স্থানীয় বেগুয়া হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশুনা করত।
বাকিরা হলেন প্রতিবেশী পেশায় দিনমজুর নিতু রাজবর (২৮), সন্তোষ রাজবর (২৬) ও পেশায় গাড়ি চালক সুভাষ রাজবর (৪৫)। পুলিশ জানিয়েছে, বাকি আরও যে ১০ জন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তাঁরা করণদিঘি, রায়গঞ্জ, চাকুলিয়া, মালদহ ও বিহারের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা প্রত্যেকেই পাত্রের পরিবারের লোকজনের দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও পরিচিত।
উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘিতে শোকার্ত পরিজনেরা। ছবি: তরুণ দেবনাথ।
আজ, বুধবার বৌভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে উত্তর দিনাজপুর ও বিহারের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৪০ জন আত্মীয় সত্যমবাবুর বাড়িতে এসেছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে অনেকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে যান। সত্যমের প্রতিবেশী ভোম্বল রাজবর বলেন, “আমি পিছনের গাড়িতে ছিলাম। ভোর ৬টা নাগাদ ধূমাদিঘিতে পৌঁছে দেখি আমাদের আগের ওই গাড়িটির সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে প্রতিবেশী ও সত্যমের বাড়ির লোকজনকে খবর দিই।” সত্যমের বাবা কার্তিকবাবু পেশায় চাষি। মা লীলাদেবী গৃহবধূ। তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “ছোট ছেলের বিয়েতে গিয়ে আমার বড়ছেলে, ভাসুর-সহ এতজনের যে অকালমৃত্যু হবে তা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না।” খবর পেয়ে নববধূর বাড়িতেও নেমে আসে শোকের ছায়া। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বধূর বাড়ির পরিজনেরা। দুর্ঘটনার পর সকাল নটা নাগাদ রসিলাদহে বধূর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ছাঁদনাতলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ফুলের মালা। বিয়ের অনুষ্ঠানের পরে সেই জায়গা সেই অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে। তখনও কেঁদে চলেছেন মেয়ের মা রাজিয়াদেবী।

(সহ প্রতিবেদন: পীযূষ সাহা)





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.