উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা ‘হেল্থ ডিরেক্টরেট’কে ঘিরে আশার আলো দেখছেন বাসিন্দারা। কেন না জেলা হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে পরিকাঠামো ও পরিষেবার মানে ঘাটতি রয়েইছে। চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম বা ওষুধের জন্য স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন করেও দীর্ঘদিন বসে থাকতে হয়। একই পরিস্থিতি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ বা শূন্যপদ পূরণ নিয়েও। আলাদা হেল্থ ডিরেক্টরেট-এর অধীনে উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিষেবার বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হলে এ সব সমস্যা এখান থেকেই মেটানোর ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাতে পরিষেবা এবং পরিকাঠামোর মান অনেকটাই বাড়ানো সম্ভব হবে বলে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী থেকে সাধারণ বাসিন্দাদের অনেকের ধারণা। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মতে প্রচারের উদ্দেশ্যেই এ সব ঘটা করে বলা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রই জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গে ৭টি জেলা হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন ব্লক হাসপাতাল এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলির কোনও ব্যাপারে এই নতুন ডিরেক্টরেট সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তবে কয়েকজন প্রবীণ চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা মনে করছেন ডিরেক্টরেট চালু করার সঙ্গে ওই দফতরের সেক্রেটারিয়েট বা সচিবালয়ও করা জরুরি। তা না হলে কেবল সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে। অথচ সেগুলির অনেক ক্ষেত্রে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থ অনুমোদনের জন্য ওই সমস্ত প্রস্তাব ফের কলকাতায় পাঠাতে হবে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “এই ধরনের উদ্যোগ ভাল। তবে হেল্থ সেক্রেটারিয়েট না করলে যে উদ্দেশ্যে তা করা সেই কাজ সম্পূর্ণ ভাবে সার্থক হবে না।” সে কারণে ডেপুটি ডাইরেক্টরেট অব হেল্থ সার্ভিস বা ওই পদমর্যাদার আধিকারিক থাকা দরকার বলে তাঁরা দাবি করেন। জলপাইগুড়ির কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা বলেন, “প্রচারের উদ্দেশ্যে এ সব ঘোষণা করা হচ্ছে। এমনিতেই স্বাস্থ্য দফতরের তিনটি ডিইরেক্টরেট রয়েছে। এখনও পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের রাস্তাঘাট-সহ কোথায় কী উন্নয়ন হয়েছে তা বাসিন্দারা সহজেই বুঝতে পারছেন।”
জেলা হাসপাতাল, ব্লক হাসপাতাল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ থেকে ওষুধের বরাত দেওয়া, যন্ত্রাংশ কেনার মতো বিভিন্ন বিষয় এতদিন কলকাতায় স্বাস্থ্য দফতরে পাঠাতে হত। সেই কাজের তদ্বির করতেও বিস্তর ছোটাছুটি করতে হত। উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা ডিরেক্টরেট চালু হলে এ বার থেকে সেখানেই তারা সমস্ত সমস্যার কথা জানাবেন। এখান থেকেই সেই সমস্ত সমস্যা সমাধানের কাজ সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার উত্তরকন্যায় ক্যাবিনেট বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণাকে তাই সাধুবাদ জানিয়েছেন তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত প্রগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের শিলিগুড়ি শাখার সভাপতি শীর্ষেন্দু পাল। তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গের সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে। চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যাপারে বোর্ড তৈরি বা অন্যান্য অনেক ব্যাপারে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সে সব চটজলদি করা সম্ভব হবে।” একই মত স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের কর্মকর্তা প্রশান্ত সরকারদের। প্রশান্তবাবু জানান, নতুন ব্যবস্থায় অনেক কম সময়ে কর্মীদের সমস্যাগুলি এই ডিরেক্টরেটের মাধ্যমেই মেটানো সম্ভব হবে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলিতে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, জেলা হাসপাতাল এবং ব্লক হাসপাতালগুলিতে কাজকর্মের তদারকি করতে সুবিধা হবে এই ডিরেক্টরেটের মাধ্যমে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সব অভাব অভিযোগ রয়েছে তা মেটানো যাবে। |