এক প্রসূতির মৃত্যুকে ঘিরে মঙ্গলবার সকালে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাতৃসদন। মৃতের নাম হাসিবা বিবি (২২)। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, একাধিকবার হাসপাতালের শয্যা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে হাসিবার। ওই ঘটনায় নার্স ও আয়াদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালান ওই প্রসূতির আত্মীয়েরা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি মাতৃসদনের একমাত্র সিক নিওনেটাল স্টেবিলাইজেশন ইউনিটও। ওই ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি তৈরি করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বহরমপুরের আইসি মোহায়মেনুল হক বলেন, “হাসপাতালের এক নিরাপত্তারক্ষীকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওই প্রসূতির পরিবারের লোকজনকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে।” |
গত রবিবার সকালে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ, মাতৃসদনে ভর্তি হন ইসলামপুরের গোয়াসের গজপাড়ার বাসিন্দা হাসিবা বিবি। ওই রাতেই অস্ত্রোপচার করে তাঁর একটি পুত্রসন্তান হয়। সোমবার রাত এগারোটা নাগাদ তিনি হাসপাতালের শয্যা থেকে পড়ে যান বলে অভিযোগ। হাসিবার স্বামী আনারুল শেখ বলেন, “সোমবার সন্ধ্যায় হাসিবার সঙ্গে কথা বলে বহরমপুর থেকে বাড়ি ফিরেছি। মা ও ছেলে দুজনেই সুস্থ ছিল। কিন্তু আয়া ঠিক মত দেখভাল করছে না বলে হাসিবা অভিযোগ করেছিল। পরে অবশ্য দু’জন আত্মীয়কে রেখে বাড়ি ফিরে আসি।” আনারুলের অভিযোগ, “রাতেই আমার স্ত্রী শয্যা থেকে তিন বার পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল থেকে রাতে কিছুই না জানিয়ে ভোরে মৃত্যুর কথা জানায়।” |
নাতনি হাসিবা বিবির দেখাশোনার জন্য হাসপাতালের বাইরে গাছতলার নিচে রাত কাটাচ্ছিলেন উরফা বিবি ও সুরমা বিবি। তাঁদের কথায়, “মাতৃসদনে রোগীর ভীষণ চাপ রয়েছে। তিনটে শয্যা পাশাপাশি সাজিয়ে সেখানে সাত জন প্রসূতিকে রাখা হয়েছিল। শয্যার একেবারে ধারে ছিল হাসিবা। রাতের ঘটনা আমাদের ভোরে জানানো হয়। এমনকী জোর করে টিপ সই-ও দিয়ে নিয়েছে নার্স দিদিরা।”
খবর পেয়ে ইসলামপুর থেকে ছুটে আসেন মৃতের পরিবারের লোকজন। অভিযোগ, উত্তেজিত হয়ে হাসপাতালে ভাঙচুর চালান তাঁরা। হাসপাতালের ভিতরে ঢুকতে বাধা দিলে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তিও হয়। এক নিরাপত্তারক্ষী হাসিবা বিবির বাবা আনোয়ার শেখকে মারধর করে বলে অভিযোগ। তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তিনি অবশ্য জোর করেই ‘ছুটি’ নিয়ে বাড়ি চলে যান বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। |
ঘরের পথে: সদ্যোজাতকে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন এক আত্মীয়া। ছবি: গৌতম প্রামাণিক। |
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মৃতের পরিবারের লোকজন ব্যাপক ক্ষিপ্ত হয়ে হাসপাতালের দরজা-জানালার কাচ ভাঙচুর করে। এক নার্সকেও মারধর করা হয়। আক্রমণের নিশানা থেকে বাদ যায়নি সিক নিওনেটাল স্টেবিলাইজেশন ইউনিটও। সেখানকার দরজায় লাথি মেরে ভেঙে ফেলার চেষ্টা হয়। কাচের টুকরো ছিটকে ‘ওয়ার্মার’- এর উপরে গিয়ে পড়ে। ওই ইউনিটের দায়িত্বে থাকা এক নার্স বলেন, “সেই সময়ে ওয়ার্মারে বেশ কয়েকজন নবজাতক ছিল। কাচের টুকরো ছিটকে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত।” খবর পেয়ে বহরমপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই প্রসূতি ঠিক কী কারণে মারা গিয়েছেন তা তদন্তেই জানা যাবে। তদন্তে কোনও গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আর তিনটে শয্যায় সাত জন রোগী রাখার অভিযোগ প্রসঙ্গে মণিময়বাবু বলেন, “হাসপাতালে শয্যার তুলনায় রোগী ভর্তির চাপ থাকে অনেক বেশি। ফলে সব রোগীকে আলাদা শয্যা দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে সোমবার রাতে প্রসূতি বিভাগে ক’টি শয্যায় কতজন প্রসূতি ছিলেন তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |