রক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই অধিকাংশ গ্রামীণ হাসপাতালে
ঙ্কটজনক রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন হলে তা মেলে না। রক্তের জন্য ছুটতে হয় মেদিনীপুর বা খড়্গপুরে। পরিস্থিতি দেখে জেলার ছ’টি গ্রামীণ হাসপাতাল-ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ‘ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট’ গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু, ওই উদ্যোগই সার! এর মধ্যে এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে মাত্র একটি ইউনিটই চালু করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ইউনিটের কাজ পরিকাঠামোগত সমস্যার ফাঁসে আটকে রয়েছে।
অথচ ওই হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট গড়ে উঠলে রোগীদের আর জেলা সদর হাসপাতাল অথবা মহকুমা হাসপাতালে ছুটতে হবে না। উপকৃত হবেন অসংখ্য রোগীর পরিবার। ঠিক কবে ওই ইউনিটগুলো চালু হতে পারে? প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার কাছে। তবে, দফতরেরই এক আধিকারিক আশ্বাস দিয়েছেন, “ন্যূনতম যে সব পরিকাঠামো জরুরি, সেগুলো দ্রুত গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। এক-দু’টি ইউনিট শীঘ্রই চালু হবে।”
চাপ বাড়ছে মেডিক্যালে
• জেলার ৬টি গ্রামীণ হাসপাতালে ‘ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট’ গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তৈরি হয়েছে একটিতে।
• প্রতি ইউনিটে একজন করে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (এমটি) এবং একজন মেডিক্যাল অফিসার (এমও) থাকার কথা। থাকার কথা প্রতি গ্রুপের অন্তত দুই ইউনিট (২ বোতল) রক্ত।
• মহকুমা হাসপাতালগুলিতে ব্লাড ব্যাঙ্কের অবস্থাও তথৈবচ। ফলে, গোটা চাপটাই এসে পড়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
• মেডিক্যাল কলেজ-সহ জেলার কোনও হাসপাতালে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থা নেই। এতে রক্তের অপচয় হয়।
• রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমছে। বাড়ছে সঙ্কট।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ২৯টি ব্লক রয়েছে। ৪টি মহকুমা রয়েছে। জনসংখ্যা সবমিলিয়ে ৬০ লক্ষের কাছাকাছি। জেলার সদর শহর মেদিনীপুরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। ঘাটাল এবং খড়্গপুরে মহকুমা হাসপাতাল রয়েছে। অন্য দিকে, ঝাড়গ্রামে স্বাস্থ্য জেলা গঠিত হয়েছে। ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল জেলা হাসপাতালে উন্নীত হয়েছে। জেলার ৪টি মহকুমাতেই ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে। তবে জেলার জনসংখ্যার অনুপাতে ৪টি ব্লাডব্যাঙ্ক যথেষ্ট নয়।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, চন্দ্রকোনা, ডেবরা, সবং, গড়বেতা, খড়িকামাথানি (নয়াগ্রাম) এবং তপসিয়ায় (গোপীবল্লভপুর ২) ‘ব্লাড স্টোরেজ ইউনিট’ গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে শুধুমাত্র চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালেই ওই ইউনিট চালু করা সম্ভব হয়েছে। পরিকাঠামোগত নানা সমস্যার জন্য বাকিগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “ডেবরায় যেমন ঘর নির্মাণ হয়েছে। বিদ্যুতের কাজ হয়েছে। তবে এখনও বাতানুকূল যন্ত্র বসানো হয়নি। তাই ইউনিট চালুর লাইসেন্স মেলেনি। অন্য দিকে, সবংয়ে বিদ্যুত্‌ লাইনের কাজই বাকি।” তিনি আরও বলেন, “এখন সবং, পিংলা, নারায়ণগড় ও তার আশপাশের এলাকার মানুষ রক্তের জন্য খড়্গপুরে আসেন। খড়্গপুরে রক্ত না-পেলে মেদিনীপুরে এসে খোঁজখবর করেন। সবংয়ে ওই ইউনিট চালু হলে মানুষের আর ভোগান্তির শিকার হতে হবে না।”
তবে শুধু ব্লাড স্টোরেজ ইউনিটই নয়, এছাড়াও অনেক সমস্যা রয়েছে এই হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে। ডেবরা গ্রামীণ হাসপাতালের কথাই ধরা যাক। শুধু ডেবরা নয়, আশপাশের সবং, পিংলা, খড়্গপুর গ্রামীণ, কেশপুর থেকেও বহু রোগী এখানে আসেন। হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ৪০টি। অথচ, রোগী ভর্তি থাকেন গড়ে ৬০-৬৫ জন। অগত্যা শয্যার অভাবে রোগীদের অনেককে মাটিতে থাকতে হয়! ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত হওয়ার পর এই হাসপাতালকে ‘ফাস্ট রেফারেল ইউনিট’ বলে চিহ্নিত করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। সেই মতো জানানো হয়, সবং-পিংলা থেকে কোনও রোগীকে ‘রেফার’ করতে হলে শুরুতে ডেবরা গ্রামীণ হাসপাতালে ‘রেফার’ করতে হবে। কিন্তু, বাস্তবে কাজ কিছুই হয়নি। গ্রামীণ হাসপাতালের যে পরিকাঠামো থাকা জরুরি, ডেবরায় তা গড়ে তোলা হয়নি বলেই অভিযোগ। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক মানছেন, “ডেবরায় ৩ লক্ষ মানুষের বসবাস। স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে ওই ইউনিট থাকা সত্যিই জরুরি।”
অন্য দিকে, রক্তের খোঁজে খড়্গপুর-মেদিনীপুরে এসেও অনেক সময় রক্ত মেলে না। কারণ, মাঝে-মধ্যে জেলায় রক্তের সঙ্কট চলে। প্রয়োজনীয় গ্রুপের এক ইউনিট (১ বোতল) রক্ত পেতেও হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়। কেন? জানা গিয়েছে, আগের থেকে এখন রক্তদান শিবিরে রক্তদাতার সংখ্যা কমেছে। এক সময় যেখানে শিবির পিছু গড়ে ৬০ জন রক্ত দিতেন, এখন সেখানে ৪০ জন রক্ত দেন। পরিস্থিতি দেখে মেদিনীপুর মেডিক্যালে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের (কম্পোনেন্ট সেপারেশন) ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু, এখনও এই ব্যবস্থা চালু হয়নি। অথচ, উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থা চালু হলে রক্তের সঙ্কট কিছুটা হলেও দূর হত। কারণ, তখন এক ইউনিট রক্ত তিন-চারজন রোগীকে দেওয়া যেত।
রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ ব্যবস্থা ঠিক কী?
কোনও ব্যক্তির রক্তদানের ফলে যে রক্ত সংগৃহীত হয়, তার পুরোটা অধিকাংশ রোগীরই প্রয়োজনে লাগে না। তাও দেওয়া হয়। কারণ, পশ্চিম মেদিনীপুরের কোনও হাসপাতালেই উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থা নেই। রোগীদের কারও ক্ষেত্রে প্যাটসেল, কারও প্লেটলেট, কারও বা প্লাজমার প্রয়োজন হয়। ফলে, উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থা থাকলে যাঁর যা উপাদান প্রয়োজন, তাঁকে সেই উপাদান দেওয়া সম্ভব হয়। তখন এক ইউনিট রক্ত একজনের বদলে তিন-চারজন রোগীকে দেওয়া সম্ভব। চিকিত্‌সকেরা উপাদান অনুযায়ী রিক্যুইজিশন পাঠাবেন। হাসপাতাল থেকে সেই মতো রক্ত সরবরাহ করা হবে। মেদিনীপুরে কেন এখনও উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থা চালু হল না? হাসপাতাল সুপার যুগল কর বলেন, “কিছু মেশিনপত্র আসা বাকি রয়েছে। ওই মেশিনপত্রগুলো এসে গেলেই উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থা চালু হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.