শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার কনভেন্ট স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন অভিভাবকেরা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই নিরাপত্তার দাবি তুলে স্কুল চত্বর ঘেরাও করে রাখেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত অভিভাবকদের বিক্ষোভ সামলাতে তিন দিন স্কুল ছুটির কথা ঘোষণা করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে বুধবার বিকেলে অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ দিকে অভিযুক্ত রণদীপ ওরফে রাজেশ এক্কাকে শিলিগুড়ি আদালতে তোলা হলে তার পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন বিচারক। এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে ধর্ষিতার মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়। তাতে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে বলে পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার বলেন, “পরীক্ষার রিপোর্ট আমি দেখিনি। তবে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ মেনে নেওয়া যায় না। অবরোধকারীদের বুঝিয়ে বলাতে ওঁরা তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।” |
এ দিন সকাল থেকেই স্কুল ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকদের একাংশ। স্কুলের অধ্যক্ষার প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা এবং তাঁদের সঙ্গে এসে দেখা করে আলোচনা করার দাবি জানান তাঁরা। দাবি পূরণ না হওয়ায় প্রায় তিনশো অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা স্কুলের কাছেই ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখেন প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা। পরে পুলিশ কমিশনার নিজে এসে অবরোধ উঠিয়ে দেন। তাও স্কুল চত্বরে অভিভাবকদের বিক্ষোভ চলতেই থাকে। সকলেই দাবি করেন, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত স্কুল ছুটি দিতে হবে। বেগতিক দেখে বুধবার বিকেলে অভিভাবকদের সঙ্গে বসতে রাজি হয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। ঠিক হয় বুধবার বিকেল চারটায় অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন অধ্যক্ষা সহ স্কুল পরিচালন কমিটির সদস্যরা। নিরাপত্তার দাবিতে কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করা হয় অভিভাবকদের পক্ষ থেকে। পরে অধ্যক্ষা বৈঠকে রাজি হলে অভিভাবকেরা ফিরে যান। ঘটনার নিন্দা করেন তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের জেলা চেয়ারম্যান নাসির আহমেদও। তিনি দোষীর কড়া শাস্তি দাবি করেন। |
অভিভাবকদের পক্ষ থেকে এদিন ৬টি দাবি পেশ করা হয়েছে। স্কুলের সমস্ত অশিক্ষক কর্মচারীদের মহিলা হতে হবে, প্রতি বাসে মোবাইল ফোন সহ এক জন করে মহিলা কর্মী রাখতে হবে, প্রতিটি ছাত্রীর জন্য গেট পাসের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রতিটি গেটে মহিলা নিরাপত্তা রক্ষী রাখতে হবে, স্কুলের বিভিন্ন জায়গায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগাতে হবে, তা নিয়মিত নজরদারি করতে হবে, প্রতিটি স্কুল কর্মীর জন্য পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে বলে দাবি করা হয়েছে। শিলিগুড়ি অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক সন্দীপন ভট্টাচার্য এই দিন বলেন, “আমাদের দাবি শুনতে চাইছিলেন না অধ্যক্ষা। চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখানোর পর শেষ পর্যন্ত কথা বলতে রাজি হন। আমাদের দাবি পেশ করেছি।” স্কুলের অধ্যক্ষা বলেন, “ওঁরা একটি লিখিত দাবি জানিয়েছেন। তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। বুধবার বিকেল সাড়ে চারটে সময় ঠিক করেছি। সেখানেই সমস্ত আলোচনা হবে।” ডিওয়াইএফ জেলা সম্পাদক শঙ্কর ঘোষের এক আত্মীয়ের মেয়ে এই স্কুলের ছাত্রী। তাঁকে এ দিন অভিভাবকদের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। তিনি বলেন “কনভেন্ট স্কুলে পরিচালন সমিতিতে অভিভাবক প্রতিনিধি রাখা হোক। তা হলে স্কুল একক ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।”
|