বন্ধ এবং রুগণ চা বাগানের শ্রমিকদের রেশন বিলিতে যাতে কোনও সমস্যা না থাকে সে কারণে বাগানেই রেশন দোকান খুলতে চলেছে খাদ্য দফতর। ডুয়ার্সের ৫টি বন্ধ চা বাগানে প্রথম রেশন দোকান খোলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ওই বাগানগুলির শ্রমিকদের ২ টাকা কেজি দরে চাল এবং গম সরবারহের সিদ্ধান্তও হয়েছে। মঙ্গলবার উত্তরকন্যায় রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে এ দিন উত্তরকন্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ডুয়ার্সের ৫টি চা বাগান মাঝেমধ্যেই বন্ধ থাকে। অনেক সময়েই কর্মীরা খেতে পান না। তাই ঠিক করেছি, ওই বাগানগুলিতে একটি করে রেশন দোকান খুলব। সেখান থেকে ২ টাকা কেজি দরে চাল-গম দেওয়া হবে। দ্রুত ওই প্রক্রিয়া শেষ করতে বলা হয়েছে।” খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলার রেডব্যাঙ্ক, ঢেকলাপাড়া, সুরেন্দ্রনগর, দলমোড় এবং কাঁঠালগুড়ি চা বাগানে খাদ্য দফতরের নিজস্ব রেশন দোকান খোলা এবং দু’টাকা কেজি দরে খাদ্যশস্য বিলির সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। চলতি ব্যবস্থায় বাগানের পরিচালন কর্তৃপক্ষের উপরেই শ্রমিকদের রেশন বিলি, বণ্টনের ভার ছিল। সে কারণে বাগান বন্ধ হয়ে গেলে, বা মালিকপক্ষ বাগান ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে রেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপরে শ্রমিকদের রেশন বিলির দায়িত্ব না থাকায় যথাযথ বিলিও হয় না বলে দফতর সূত্রেই জানানো হয়েছে। বাগানে স্থায়ী রেশন দোকান থাকলে ওই সমস্যা হবে না বলেই মনে করছে রাজ্য সরকার।
এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে ৬ জেলার খাদ্য দফতরের আধিকারিক, রাইস মিল মালিকদের সংগঠনের প্রতিনিধি-সহ অনান্যদের দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক পৃথক বৈঠক করেছেন। ৫টি চা বাগানে রেশন দোকান খোলার প্রক্রিয়া তদারকি করার সঙ্গে বন্ধ এবং রুগ্ন চা বাগানে জাল রেশন কার্ড নিয়ে তদন্তের প্রক্রিয়া কতটা এগিয়েছে তারও খোঁজখবর নেন মন্ত্রী। ডুয়ার্সের বন্ধ চা বাগানে প্রায় ১ লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড রয়েছে বলে সন্দেহ করে গত বছরই খাদ্য দফতর বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে। গত এক বছরে বন্ধ চা বাগানের প্রায় ৯ হাজার রেশন কার্ডকে ‘ভুয়ো’ চিহ্নিত করে বাতিল করেছে দফতর। এখনও প্রায় ৯১ হাজার ভুয়ো কার্ড রয়ে গিয়েছে বলে দফতরের সন্দেহ।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “এখনও বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের বলে দফতরের নথিতে যে ৯১ হাজার রেশন কার্ড রয়েছে, এবং নিয়মিত সেই কার্ডগুলিতে খাদ্যশস্য বরাদ্দও হচ্ছে। তদন্ত চলছে। ওই কার্ডগুলিও চিহ্নিত করে বাতিল করা হবে।” এ দিন মন্ত্রী জানিয়েছে, সেই সঙ্গে ওই কার্ডে বরাদ্দ রেশন কোথায় পৌঁছেছে তা নিয়েও তদন্ত চলছে। চা বাগানে ডিজিটাল রেশন কার্ডের প্রক্রিয়া আগামী মাসে শুরু হবে। সে সময়েই জাল কার্ড বাতিল করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে কোচবিহারে ৬৪ জনকে কেরসিন তেলের ‘হকার লাইসেন্স’ বিলি করার প্রক্রিয়া নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই লাইসেন্স বিলিতে অনিয়ম হয়েছে বলে সম্প্রতি দফতরের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। |