সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার দাবি খণ্ডন করতে সুপ্রিম কোর্টে নতুন রণকৌশল নিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেই জন্য একযোগে সারদা মামলা চালানোর ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে তারা। রাজ্য সরকার চায়, অন্যান্য রাজ্যে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা থেকে পশ্চিমবঙ্গে সারদার বিরুদ্ধে মামলাটি পৃথক করা হোক।
রাজ্য সরকারের তরফে আজ এই দাবি তোলা হলেও বিচারপতি টিএস ঠাকুর ও বিচারপতি সি নাগাপ্পন কোনও মন্তব্য করেননি। তবে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলে আবেদনকারীদের তরফে বলা হয়, সারদা কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত, সাংসদ কুণাল ঘোষের বয়ান নেওয়া হচ্ছে না। এই মামলার দ্রুত শুনানির বন্দোবস্ত হোক। ১৮ ফেব্রুয়ারি, ফের শুনানি হবে বলে জানায় আদালত।
সারদায় তছরুপের তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে মামলা করেছেন প্রতিম সিংহরায়, আবু আব্বাসউদ্দিন এবং সুব্রত চট্টরাজ। আর ওড়িশার বাসিন্দা অলোক জেনা ওই রাজ্যে বেআইনি লগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চেয়ে আবেদন করেছেন। দু’টি মামলাই একত্রে শোনা হবে বলে সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নেয়। আজ আবেদনকারীদের আইনজীবী অনুপ চৌধুরী অভিযোগ তোলেন, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করছে না। অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বয়ান দিতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁর বয়ান নেওয়া হচ্ছে না। ওড়িশার আবেনকারীদের আর্জি ছিল, তাঁদের বক্তব্য প্রথমে শোনা হোক।
এই সময়েই আপত্তি তোলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবী অনীপ সাচতে। তিনি আর্জি জানান, ওড়িশার থেকে পশ্চিমবঙ্গের মামলাটি পৃথক করা হোক। কারণ, ওড়িশা বা অন্য রাজ্যে বেআইনি লগ্নি সংস্থার কাজকর্মের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে সারদা কাণ্ডের সম্পর্ক নেই। তাই দু’টি আর্জি পৃথক ভাবে বিবেচনা করা হোক।
প্রশ্ন উঠেছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার অন্যান্য রাজ্যের অর্থ লগ্নি সংস্থার মামলা থেকে সারদার মামলাকে পৃথক করতে চাইছে কেন? আইনজীবী মহল মনে করছে, ওড়িশা বা অসমের মতো রাজ্য থেকে অভিযোগ এসেছে, সেখানেও সারদা সংস্থার কাজকারবার ছিল। তাই শুধু পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষে নিজেদের রাজ্যে বসে তদন্ত করা সম্ভব নয় বলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছে। যুক্তি দেওয়া হয়েছে, এই কারণেই সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন। সার্বিক ভাবে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির কাজকারবার, তার সঙ্গে কেন্দ্র বা রাজ্যের কেউ জড়িত কি না সব খতিয়ে দেখতেও সিবিআই তদন্তের দাবি উঠেছে। শীর্ষ আদালত এ-সব যুক্তি মেনে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হতে পারে। সেই জন্যই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনজীবীরা বাংলার বিষয়টি পৃথক করার দাবি তুলেছেন। ওড়িশা সরকারও অবশ্য সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করছে। |