অধীর চৌধুরীকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি করে গত কালই তৃণমূলকে কঠিন লড়াইয়ের বার্তা দিতে চেয়েছেন রাহুল গাঁধী। এ বার তৃণমূল সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে প্রচারের জন্য বামেদের হাতও শক্ত করতে নামলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাজ্যে একশো দিনের কাজ প্রকল্প রূপায়ণে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ব্যর্থতার দিকগুলি আজ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে চিঠি দিয়ে জানালেন রাহুল ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ।
কেন্দ্রের কাছে তথ্য জানতে অবশ্য সূর্যকান্তবাবুই উদ্যোগী হন। গত কাল বিধানসভায় বক্তৃতায় একশো দিনের প্রকল্পে রাজ্য সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরেছিলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, গত অর্থবর্ষে এই প্রকল্প রূপায়ণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আরও ৯% এগিয়ে গিয়েছে রাজ্য। যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। তা ছাড়া প্রকল্প বাবদ সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। রাজ্যপালের ওই বক্তৃতা, রাজ্য মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে। তাই রাজ্যের এই দাবি কতটা সত্য, তা জানতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকে গত কালই চিঠি পাঠিয়েছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। সেই সঙ্গে প্রকৃত পরিসংখ্যান চেয়ে অনুরোধ করেন।
সূর্যকান্তবাবুর যেটুকু জিজ্ঞাসা ছিল স্রেফ তার উত্তর জয়রাম দিলে বাম নেতৃত্বকে হতাশই হতে হত। কারণ, গত অর্থবর্ষে প্রকৃতপক্ষেই শ্রমদিনের হিসেবে শ্রম বাজেটের ১১০% সাফল্য অর্জন করে মমতার সরকার। যদিও সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা প্রকল্প বাবদ খরচ হয়নি। প্রকৃত খরচ হয়েছিল ৩,৪৯৩ কোটি টাকা। কিন্তু তা-ও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৩% বেশি।
কিন্তু জয়রাম এটুকু জানিয়ে ক্ষান্ত থাকেননি। বরং সূর্যকান্তবাবুকে লেখা চিঠিতে বোঝাতে চেয়েছেন, কবে ভালমন্দ খেয়েছে, এখনও হাতে তার গন্ধ শুঁকছে রাজ্য সরকার। প্রথমত গত আর্থিক বছরে যতই সরকার লক্ষ্যমাত্রা পার করুক, প্রকল্প রূপায়ণে অনেক ত্রুটি ছিল। চলতি আর্থিক বছরে এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৭% পূরণ করতে পেরেছে রাজ্য। যে সব পরিবার কাজ চেয়েছিল তার মধ্যে মাত্র এক শতাংশকে বছরে পুরো ১০০ দিন কাজ দিতে পেরেছে। তা ছাড়া যাঁরা কাজ পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ২৪ শতাংশের মজুরি দিতে এক মাসের বেশি দেরি করেছে। রাজ্যের এমন ৮৬০টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে যেখানে প্রকল্পের আওতায় এক কোটি টাকা করে গড়ে খরচ হয়েছে। রমেশের দাবি, এই হিসেবও সন্দেহজনক ও তদন্তসাপেক্ষ। চিঠিতে জয়রাম শুরুতেই স্বীকার করে নেন গত আর্থিক বছরের সাফল্য নিয়ে যে দাবি করছে রাজ্য তা ঠিক। কিন্তু একই সঙ্গে জানান, ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে রাজ্যে একশো দিনের প্রকল্পে মহিলাদের অংশগ্রহণের হার ছিল মাত্র ৩৪ শতাংশ। যে সব পরিবার কাজ চেয়েছিল তার মধ্যে ৪ শতাংশকে পুরো একশো দিন কাজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। মজুরি দেওয়ার ব্যাপারে অন্তত ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে এক মাসের বেশি দেরি হয়েছে।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে দেওয়া জয়রামের এই চিঠির জবাবে রাজনীতি দেখছেন অনেকেই। তাঁদের মতে, লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ। এই অবস্থায় তৃণমূলকে রাজনৈতিক ভাবে চাপে ফেলতে এখন তৎপর কংগ্রেস। সে জন্য বামেদের সাহায্য করতে বা তাঁদের সাহায্য নিতেও দ্বিধা করছে না তারা। |