দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর মহকুমা সদর বুনিয়াদপুরকে পুরসভা শহরে উন্নীত করল রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে রাজ্য সরকারের শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৯৯৪ সালে মহকুমা সদর ঘোষণার পর থেকেও বাসিন্দারা ওই দাবি তুলছিলেন। দীর্ঘ ২০ বছর পর ওই দাবি পূরণ হল। এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “এই দিনের বৈঠকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বুনিয়াদপুরকে পুরসভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণার খবরে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় গৃহবধূ থেকে স্কুল পড়ুয়া ও ব্যবসায়ী মহল খুশির হাওয়া। জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে সমস্ত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। দ্রুত সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পরবর্তী প্রশাসনিক কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।” গঙ্গারামপুরের মহকুমা শাসক দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, “বুনিয়াদপুরে পুরসভা গঠনে শীঘ্রই সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করবে।” |
বুনিয়াদপুরের তৃণমূল নেতা তথা জেলাপরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ প্রদীপ সেন বলেন, “দারুণ খুশির ব্যাপার। মুখ্যমন্ত্রী বুনিয়াদপুরকে পুরসভা ঘোষণার মধ্য দিয়ে এলাকার নাগরিকদের দীর্ঘ দাবির প্রতি সম্মান জানালেন।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা আইন পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্র বলেন, “বাম আমলে গঙ্গারামপুর মহকুমার সদর বুনিয়াদপুরে পুরসভা গঠনের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি উপেক্ষিত ছিল। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী যে কথা দেন, তা কার্যকর করেন, তা আবারও প্রমাণ হল।”
গত বছরের ২৭ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডিতে এসে বুনিয়াদপুরকে শীঘ্রই পুরসভা শহরের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে বলে বাসিন্দাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বাসিন্দাদের বক্তব্য, মহকুমা সদর ঘোষণার পরেই এটা করতে হত না। বাম আমলে তা করা হয়নি। প্রশাসনিক উদ্যোগও ছিল না। পুরসভা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বুনিয়াদপুরে দমকল কেন্দ্র, মহকুমা সংশোধনাগার এবং মহকুমা আদালতের ভবন তৈরি করা দরকার। বণিক সভার সম্পাদক নারায়ণ মণ্ডল বলেন, “বুনিয়াদপুর এলাকার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। এখানে ৪ টি হাইস্কুল-সহ একটি কলেজ, একটি নির্মিয়মাণ আইটিআই কলেজ রয়েছে। রেল স্টেশনের পাশাপাশি আছে মহকুমা আদালত, ট্রেজারি অফিস-সহ প্রায় সমস্ত সরকারি দফতর। দীর্ঘদিনের দাবি রাজ্য সরকার পূরণ করায় আমরা যারপরনাই আনন্দিত।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলার বংশীহারি ব্লকের গোটা শিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে সদর বুনিয়াদপুর গঠিত। প্রায় ৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে লোকসংখ্যা ৪০ হাজারের উপর। কৃষির উপর নির্ভর নয় এমন ৫০ শতাংশের উপর বাসিন্দার বাস বুনিয়াদপুরে। পুরসভা গঠনের জন্য ৩৫ হাজার জনসংখ্যা এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৫০ শতাংশের উপর অকৃষি জমি থাকাটা জরুরি। বুনিয়াদপুরে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৭৫০ জন লোক বাস করেন।
|
পুরসভা হচ্ছে বুনিয়াদপুর |
বুনিয়াদপুরে পুরসভা ঘোষণার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। পুরসভা গঠনের ফলে পরিষেবা আরও উন্নতি হবে। দাবি পূরণ হওয়ায় আমরা খুব খুশি। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সন্তোষ ঘোষ, নাগরিক সমিতির সম্পাদক |
দীর্ঘদিনের অবহেলার অবসান হল। উত্তরকন্যাতে প্রথম বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রীর ওই সিদ্ধান্তে আমরা আনন্দিত। উনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আলি মর্তুজা শেখ, শিক্ষক |
১৯৯৪ সালের পর থেকে পুরসভা গঠনের জন্য আন্দোলন হলেও কেউ আমল দেননি। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পুরসভা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়ে বাসিন্দাদের দাবিকে সম্মান দিলেন।
সুধীর মণ্ডল, প্রবীণ বাসিন্দা |
মুখ্যমন্ত্রী পুরসভা ঘোষণা করায় আমাদের আশা পূরণ হল। এবারে বেহাল রাস্তাঘাট, সুষ্ঠু নিকাশি, পানীয় জল, পথবাতি সহ পরিষেবার অনেক উন্নতি হবে বলেই আশা করছি।
অর্পিতা শীল, বধূ |
মহকুমা সদরকে পুরসভার মর্যাদা দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। পুরসভা তৈরির দীর্ঘদিনের দাবি খুব অল্প সময়ের মধ্যে উনি পূরণ করলেন। উন্নত পরিষেবার সুযোগ তৈরি হল।
অনামিকা মিশ্র, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী |
পুরসভা ঘোষণার ফলে নাগরিক পরিষেবার সুযোগ বৃদ্ধির সঙ্গেই বুনিয়াদপুরে মহকুমা আদালতের ভবন সহ সরকারী দফতরগুলির স্থায়ী অফিস তৈরির সম্ভাবনাও খুলে গেল।
অভীক সিংহ, আইনজীবী |
|