জমি নিয়ে টালবাহানার জেরে একটা সময় প্রকল্প ঘিরে সংশয় তৈরি হয়েছিল। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সরকারি জমির ব্যবস্থার কথা জানানোয় ফের আশায় বুক বাঁধছেন কাটোয়ার বাসিন্দারা।
২০০৬ সালে কাটোয়ায় এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। বাম আমলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যখন ৫৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল, তখন জমি বিক্রি করেছিলেন শ্রীখণ্ডের চাষি হাবল শেখ, দেব কুণ্ডু, অশোক ঘোষেরা। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা শুনে তাঁরা বলেন, “নানা বাধার মুখে পড়েও জমি দিয়েছিলাম। প্রকল্পটি হলে তো আমাদের ঘরের ছেলেরাই কোনও না কোনও ভাবে উপকৃত হবে।” প্রকল্পের জন্য জমি দিতে এনটিপিসি-কে সম্মতিপত্র দিয়েছেন রাজুয়া গ্রামের মুজিবর রহমান। এ দিন তাঁর প্রতিক্রিয়া, “জমি নেওয়া হবে কি না, তিন বছর ধরে টানাপোড়েন চলছে। অন্য কাউকে জমি বিক্রিও করতে পারছি না। নানা অসুবিধায় পড়েছি। তাই একটা সিদ্ধান্ত হওয়া খুব জরুরি ছিল।” |
আমরা শুরু থেকেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে। সেটি হলে পুরো এলাকার চিত্রই বদলে যাবে।
বিদ্যুৎ নন্দী, ব্যবসায়ী। |
আমরা জমি দিতে রাজি। কিন্তু এক বার জমি নেব, এক বার নেব না শুনে আমার মতো অনেকেই বিভ্রান্তিতে।
বাঁকাশ্যাম মণ্ডল, জমি দিতে সম্মত কৃষক। |
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রর জট কাটবে, এ তো ভাল খবর। প্রকল্পটি
হয়ে গেলে অনেক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান হবে।
দেবাংশু দাস, শিক্ষক। |
এলাকায় কর্ম সংস্থানের সুযোগ তৈরি হলে আমাদের মতো অনেকেরই খুব উপকার হবে।”
রাহুল সোম, ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র। |
এটা খুবই খুশির খবর। তবে এলাকার মানুষজনকে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া হলে খুশি হব।”
রমা চ্যাটার্জি, বধূ। |
|
বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই নিয়ে ইট ও সিমেন্টের কারখানা তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই কিছু সংস্থা এনটিপিসি-র কাটোয়া ফিল্ড অফিসে যোগাযোগ করেছে। তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে এলাকার পরিস্থিতি পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন কাটোয়ার ব্যবসায়ী থেকে পড়ুয়া, সকলেই। কাটোয়া মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির মুখপাত্র বিদ্যুৎ নন্দীর কথায়, “বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির দাবিতে আমরা রাস্তাতেও নেমেছি। প্রকল্পটি হলে এলাকার অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে।” ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র বিবেক ঘোষ বলেন, “এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়লে আমাদেরও উপকার হবে।”
এই প্রকল্প নিয়ে জট কাটলে বলগনা থেকে কাটোয়া রেললাইন ব্রডগেজ করার কাজেও হাত পড়বে বলে মনে করছেন কাটোয়াবাসী। চুক্তি অনুযায়ী, এই ২৮ কিলোমিটার লাইন ন্যারোগেজ থেকে ব্রডগেজ করার জন্য টাকা দিতে হবে এনটিপিসি-কে। তা তারা এখনও দেয়নি। ন্যারোগেজ লাইনে যাতায়াতের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। পূর্ব রেলের বিবি লুপ নিত্যযাত্রী সংগঠনের সভাপতি পুরবধি মুখোপাধ্যায়ের আশা, “এ বার বলগনা-কাটোয়া লাইন ব্রডগেজ হতেও বাধা থাকবে না।”
তবে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “আমরা প্রথম থেকেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পক্ষে। কিন্তু, ওই এলাকায় কতটা সরকারি জমি রয়েছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।” কাটোয়ার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, “সরকারি জমিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে তো ভালই। কিন্তু, প্রকল্প এলাকায় সরকারি জমি কোথায়?” রাজ্যের মন্ত্রী তথা বর্ধমান জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথের কটাক্ষ, “আমাদের সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে এগিয়ে এসেছে দেখে বিরোধীদের সহ্য হচ্ছে না। তাই এ সব বলছে।” |