কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে টানাপোড়েনে এগারো বছর আগে এক আন্দোলনের ফলে হলদিবাড়ি এবং বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন ফের আন্দোলন শুরু হয়েছে, অবিলম্বে হলদিবাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর বন্ধ হয়ে যায়। তার পরও সড়ক পথে যাতায়াত ছিল। হলদিবাড়ি থেকে ৩ কিলোমিটার গেলে ফিরিঙ্গির ডাঙা গ্রামে চেকপোস্ট ছিল। ও পারে বাংলাদেশের চিলাহাটি। এই পথে বৈধ ভাবে দু’দেশের বাসিন্দারা যাতায়াত করত। ২০০২ সালে কেন্দ্র রাজ্যকে জানিয়ে দেয় যে, এ পথ দিয়ে যত জন বাংলাদেশ থেকে ঢুকছে তাদের মাত্র ৩০ ভাগ লোক ফিরে যাচ্ছে। বাকি ৭০ ভাগ লোকের কোনও হদিস নেই। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তৎকালীন বাম সরকারে পুলিশ বিভাগের অভিবাসন দফতরের কাছে এই লোকদের খুঁজে বার করতে বলা হয়। রাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, হলদিবাড়ি থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অভিবাসন দফতর চালু রাখা সম্ভব না। এই দুয়ের টানাপোড়েনে ২০০২-এ হলদিবাড়ি ও কোচবিহার জেলার গীতালদহ দিয়ে ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত বন্ধ হয়।
সে সময় বামফ্রন্টের শরিক ফব-র তরফে অবিলম্বে এই পথ চালু করার দাবিতে অন্দোলন শুরু হয়। কেন্দ্র ও রাজ্যকে তারা স্মারকলিপি দেয়। ফব হলদিবাড়ি ব্লক সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ সিংহ বলেন, “আমরা আগেও আন্দোলন করেছি। এখনও দাবি করছি অবিলম্বে এই পথ দিয়ে যাতায়াত শুরু করা হোক।” তৃণমূল কংগ্রেসও একই দাবি করেছে। হলদিবাড়ি ব্লকের সভাপতি গোপাল রায় বলেন, “একসময় এই পথে রেল ও সড়ক যোগাযোগ ছিল। সে সময় হলদিবাড়ি অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত ছিল। ফের দু’দেশে যাতায়াত চালু হলে আবার সুসময় আসবে।
হলদিবাড়ি দিয়ে যাতায়াতে রাজ্য ও কেন্দ্রের যে দুটি দফতরের প্রয়োজন তা হল কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতর এবং রাজ্যের অভিবাসন দফতর। রাজ্যের পক্ষে হলদিবাড়ির পুলিশ সুপার অনুপ জয়সোয়াল বলেন, “এটা আন্তজার্তিক বিষয়। ২০০২ সালে কেন এ পথ বন্ধ করা হয়েছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” কেন্দ্রীয় শুল্ক বিভাগের পক্ষ থেকে ২০১২ সালে এক বার সমীক্ষা করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের শুল্ক বিভাগের শিলিগুড়ির উপ অধিকর্তা মণীন্দ্র লামা বলেন, “আমি অবস্থা ঘুরে না দেখে কিছু বলতে পারব না।” কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতরের অফিস আছে হলদিবাড়িতে। কর্মী-সংখ্যা কমেছে। তিনটি দোতলা বাড়িতে ১৮ আবাসন আগাছায় ভরে গেছে। হলদিবাড়ি পুরসভার কংগ্রেস চেয়ারম্যান গৌরাঙ্গ নাগ এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমি চাই অবিলম্বে ভারত- বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ চালু হোক। ওটা হলে এই এলাকার অর্থনৈতিক চেহারাটাই বদলে যাবে। আমরা দলগত ভাবে জেলা নেতৃত্বের মারফত কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই পথ চালু করার দাবি জানিয়েছি।” |