আমন্ত্রণ পত্রে নতুন পরিচালন সমিতিতে তাঁদের দলের নির্বাচিত প্রতিনিধির নাম না থাকায় স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুরে বসিরহাট হাইস্কুলে এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ালে ছাত্রছাত্রীরা ও তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবকেরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এ দিন অনুষ্ঠানের শুরুতেই তৃণমূল সমর্থকদের হুমকি, মাইকের তার ছিঁড়ে দেওয়া ও বিক্ষোভের জেরে ছাত্রছাত্রী ও অতিথিদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয়। |
অন্যদিকে বিক্ষোভকারীদের দাবি, সদ্য নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা না করেই আমন্ত্রণ পত্রে আগের পরিচালন সমিতির সম্পাদকের নাম ছাপিয়ে দেওয়া হয়। তাই প্রধান শিক্ষককে বলা হয়েছিল সকলকে নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তীতে অনুষ্ঠান করতে। বিক্ষোভ, হুমকি বা মাইকের তার ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। বসিরহাট টাউন তৃণমূল সভাপতি বিভূরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গণতান্ত্রিক ভাবে জয়ী অভিভাবকেরা চেয়েছিলেন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে অনুষ্ঠান হোক। কিন্তু তাতে কান দেননি প্রধান শিক্ষক। এ দিন অভিভাবকেরা সকলের সঙ্গে আলোচনা করে অনুষ্ঠানের কথাই বলতে গিয়েছিলেন। এর বেশি কিছু ঘটেনি।”
স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বসিরহাট হাইস্কুলে আগের পরিচালন কমিটির সম্পাদক ছিলেন কংগ্রেস নেতা অসিত মজুমদার। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে তৃণমূল ৫টি আসনে জয়ী হয়। কংগ্রেস পায় একটি আসন। সরকারি নিয়মে নতুন কমিটির গঠনের প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় এ দিন ছিল স্কুলের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। পাশাপাশি স্কুলে সদ্য নির্মিত কয়েকটি শ্রেণিকক্ষেরও উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। বসিরহাটের পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস নেত্রী কৃষ্ণা মজুমদার অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন এবং প্রধান শিক্ষক স্বপনকুমার রায় ও সম্পাদক অসিত মজুমদারের নাম দিয়ে আমন্ত্রণ পত্র ছাপিয়ে বিলি করা হয়েছিল। সেই মতো সকলেই এ দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শুরু হতেই হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে কয়েক জন বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তাদের অভিযোগ, ভুলে ভরা আমন্ত্রণ পত্র বাতিল করে পরিচালন সমিতির সকল সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করে ফের নতুন করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। ওই সময়ে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন মাইকের তার ছিঁড়ে দেয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে দেখে প্রধান শিক্ষক সকলকে তাঁর ঘরে ডাকেন। সেখানে আর এক প্রস্থ বিক্ষোভ হয়। এই অবস্থায় গণ্ডগোলের ভয়ে অভিভাবকেরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে বেরিয়ে যান। শিক্ষকদের অভিযোগ, আমন্ত্রণ পত্রে যদি ত্রুটি হয়েও থাকে, তাহলেও অনুষ্ঠানে অতিথিদের সামনে এমন অশোভন আচরণ না করে অনুষ্ঠানের শেষে তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারত। কিন্তু তার বদলে যা ঘটল তা একেবারেই অনভিপ্রেত।
প্রধান শিক্ষক স্বপনবাবু বলেন, “নতুন কমিটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত পুরনো কমিটিই বহলা থাকবে এমনই সরকারি নিয়ম রয়েছে। সেই অনুযায়ীই আমন্ত্রণ পত্রে পুরনো কমিটির সম্পাদকের নাম ছাপা হয়েছিল।” তিনি আরও জানান, এ দিন সকালেই এ ব্যাপারে তৃণমূলের এক সদস্য তাঁকে ফোন করেছিলেন। এর পরে তিনি শ্রেণিকক্ষের উদ্বেধেন অনুষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। শুধু বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠাই করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যা ঘটল তাতে স্কুলেরই সুনাম নষ্ট হল।
|