ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের বিরুদ্ধে তাঁরই অধস্তন এক মহিলা চিকিৎসকের আনা যৌন হেনস্থার অভিযোগের বিভাগীয় তদন্ত-রিপোর্ট জমা পড়ল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে। মঙ্গলবার রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “তদন্ত হয়েছে। রিপোর্ট নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করা যাবে না।”
বসিরহাট ১ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) পরিমল মজুমদারের বিরুদ্ধে এর আগে একই অভিযোগে তদন্ত করেছিল বসিরহাট জেলা স্বাস্থ্য দফতর (বসিরহাট মহকুমাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে পৃথক স্বাস্থ্য জেলা)। মহিলা চিকিৎসকের অভিযোগ, ‘সুবিচার’ চেয়ে উঠেপড়ে লাগায় তাঁকে নানা ভাবে হেনস্থা শুরু করেন ওই বিএমওএইচ। কয়েক মাস আগে তিনি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এবং মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেন। পরিমলবাবুর বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় এর আগে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশও। ওই বিএমওএইচ আগাম জামিন নিয়েছেন বলে জানান উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়।
২০১৩-র মার্চে বসিরহাটের শিবহাটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দেন বারাসতের বাসিন্দা ওই মহিলা চিকিৎসক। ওই বিবাহিতা চিকিৎসকের অভিযোগ, কাজে যোগ দেওয়ার কিছু দিন পর থেকেই পরিমলবাবু তাঁর সঙ্গে শারীরিক ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন। কুপ্রস্তাব দেন। পৃথক অফিস ঘর থাকা সত্ত্বেও নিজের ঘরের টেবিলের সামনেই তাঁর বসার ব্যবস্থা করেন। তিনি বারবার বোঝানো সত্ত্বেও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ ওই মহিলা চিকিৎসকের। মহিলার আরও অভিযোগ, কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত মে মাসের শেষে তাঁর উপরে নানা ভাবে ‘চাপ’ বাড়াতে থাকেন বিএমওএইচ। কথা না শুনলে তাঁকে প্রত্যন্ত কোনও জায়গায় বদলির হুমকি দেন। অফিসের ফোন, গাড়ি ব্যবহার বন্ধ করে দেন। অফিসের কাগজপত্রও ওই মহিলাকে জেরক্স করতে হত নিজের টাকায়।
পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের দ্বারস্থ হওয়ায় ‘কর্তব্যে গাফিলতি ও দুর্ব্যবহার’-এর অভিযোগ তাঁকেই শো-কজ করা হয় বলে অভিযোগ ওই মহিলার। থানায় অভিযোগ জানানোর ক’দিন পরেই শো-কজে চিঠি হাতে পান তিনি। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য দফতরও তদন্ত শুরু করে। তদন্তে এলাকার বাসিন্দারা স্বাস্থ্য দফতরকে জানান, ওই মহিলা চিকিৎসকের ব্যবহার ও কর্তব্যে তাঁরা খুশি। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মহিলা কর্মীরা লিখিত ভাবে জানান, পরিমলবাবু নানা সময়ে তাঁদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন। বিএমওএইচের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন বসিরহাটের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পুষ্পেন সেনগুপ্ত। অভিযোগকারিণীর বক্তব্য, “তদন্ত কমিটি প্রথম থেকেই আমার কথায় গুরুত্ব দেয়নি। তদন্ত রিপোর্ট কেমন হবে, তা-ও স্পষ্ট।” পরিমলবাবু বলেন, “বিষয়টি বিচারাধীন। কিছু বলতে পারব না।” তাঁর সংযোজন, “মানুষকে সরকারি পরিষেবা দেওয়ার কাজ করছি। যাঁরা তা করতে চান না, তাঁরাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।” |