ডাকাত ধরতে বেরিয়ে মিলল ধেড়ে ইঁদুর।
তারাই নৃত্য করছিল ব্যাঙ্কের ভল্টের সামনে রাখা টেবিলের উপরে। বিশেষ যন্ত্র মারফত যে খবর পৌঁছে যায় বারাসত পুলিশ কন্ট্রোল রুমে। ‘ভল্টে বিপদ’ সঙ্কেতটা ছিল এমনই। কিন্তু সেই বিপদের সন্ধানে নেমে এমন ‘মূষিক প্রসব’ হবে, ধারণা করতে পারেনি পুলিশও। যে কারণে সোমবার রাত ১টা থেকে ঘণ্টাখানেক পুলিশের একাধিক গাড়ি দেগঙ্গার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটোছুটি করেছে। শেষমেশ একটি সমবায় ব্যাঙ্কের ভল্টের সামনে দেখা মেলে ধেড়ে ইঁদুরদের। |
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি বিশেষ এক ধরনের যন্ত্র এসেছে পুলিশের হাতে। যা পরীক্ষামূলক ভাবে দেগঙ্গা-২ পঞ্চায়েতের তেলিয়া কৃষি সমবায় সমিতিতে লাগানো হয়েছিল সোমবার দুপুরেই। ব্যাঙ্কের ভল্টের সামনে লাগানো ‘নিমোনি ডিভাইস’ নামে ওই যন্ত্রের কাজ হল, ব্যাঙ্ককর্মীদের অনুপস্থিতিতে ভল্টের ভিতরে সামান্য কিছু নড়াচড়া হলেও তার সঙ্কেত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কন্ট্রোল রুমে পৌঁছে দেওয়া। সেই সঙ্গে তীব্র সাইরেনের শব্দে এলাকার লোকজন সতর্ক হওয়ার সুযোগ পাবেন। রাতবিরেতে চোর-ডাকাতের হাত থেকে ব্যাঙ্কের টাকা সুরক্ষিত করতেই এই ব্যবস্থা।
সোমবার রাতেই যন্ত্র কাজে নেমেছে। কিন্তু, ইঁদুর আর ডাকাতে তফাত করার ট্রেনিং ছিল না তার! অন্য গোলমালও ছিল। দেগঙ্গা ব্লকে রয়েছে ৩২টি কৃষি সমবায় সমিতি। যে সংস্থা যন্ত্রটি লাগিয়ে গিয়েছিল তেলিয়া সমবায়ে, তারা ঠিকানা স্পষ্ট উল্লেখ করেনি। ফলে সঙ্কেত বারাসত থানার কন্ট্রোল রুমে পৌঁছলেও বোঝা যায়নি দেগঙ্গার কোন সমবায় সমিতিতে ডাকাত পড়েছে।
রাত ১টা নাগাদ বারাসত কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, দেগঙ্গা কৃষি সমিতিতে ডাকাত পড়েছে। এমন খবর পেয়ে চুপচাপ বসে থাকা যায় না। কিন্তু ঠিকানা স্পষ্ট না থাকায় অন্ধকারে ঢিল ছোড়া ছাড়া উপায় ছিল না। সকালে যদি সত্যি খবর আসে কোনও না কোনও ব্যাঙ্কের ভল্ট সাফ করে দিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা, তা হলে রক্ষে নেই। বড়কর্তাদের চোখ রাঙানির ভয় তো আছেই। তার উপরে পাবলিকের শাপ-শাপান্ত।
ফলে একের পর এক গাড়ি নিয়ে হামাদামা, শেখপুর, বেড়াচাঁপা, কলসুরে ছড়িয়ে পড়ে পুলিশ। ভাগ্য ভাল, হঠাৎই এক পুলিশকর্মীর মনে পড়ে যায়, তেলিয়ার সমবায়ে সোমবারই যন্ত্র বসানোর কথা ছিল। দেরি না করে গাড়ির ঘোরানো হয় সে দিকেই। গিয়ে দেখা যায়, তত ক্ষণে সাইরেন শুনে এলাকা লোকে লোকারণ্য। ডাকাত পড়েছে ধরে নিয়েছে সকলেই। রামজিৎ ঘোষ ও আজান আলি নামে দুই ব্যাঙ্ককর্মীর বাড়ি কাছেই। তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়। তালা-চাবি খুলিয়ে বন্দুক উঁচিয়ে পুলিশকর্মীরা ভিতরে ঢোকেন। নিঃশব্দে ভল্টের (যেখানে লাগানো হয়েছিল অত্যাধুনিক সেই যন্ত্র) কাছে গিয়ে ধাঁ করে টর্চের আলো ব্যাটারা আবার গুলি-টুলি ছুড়ে না বসে!
কোথায় কী? জনমনিষ্যি নেই। খালি উল্টো দিকের টেবিলে হুটোপুটি বাধিয়েছে খানকতক ধেড়ে ইঁদুর। দেখে পুলিশকর্মীরা হাসবেন না কাঁদবেন, সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এ কেমন যন্তর যে ইঁদুর দেখলে কেঁপে ওঠে? রোজ রাতেই এই চলবে? খাকি উর্দিরও মুখ ফসকে বেরিয়ে পড়ে ধন্দ।
দেগঙ্গার ওসি পলাশ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন “দোষটা যন্ত্রের নয়। ভল্টের সামনে কিছু নড়াচড়া করলেই ওই যন্ত্রের সেন্সার সক্রিয় হয়ে বার্তা পাঠায়। ডাকাত না ইঁদুর, তা আলাদা করে বোঝার ক্ষমতা তার নেই।” কিন্তু বিপদসঙ্কেত কোথা থেকে আসছে, সেটা জানা থাকলে তো রাতবিরেতে এত হয়রান হতে হত না? সেই দায় অবশ্য যন্ত্র বসানোর দায়িত্বে থাকা কর্মীদেরই বলে জানিয়েছে পুলিশ। সমবায়ের ম্যানেজার শম্ভুনাথ ঘোষ মঙ্গলবারই খবর দেন সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। বুধবার তারা এসে জানিয়ে দেয়, ভল্টের সামনে কাঠের দরজা লাগানো দরকার। না হলে এমন ঘটনা পরেও ফের ঘটতে পারে।
ইঁদুর আবিষ্কারের পরেও সারারাত পুলিশ ছিল সমবায়ের পাহারায়। যন্ত্র যখন বেজেছে চোখ খোলা না রেখে উপায় কি? পালে যদি এক দিন সত্যিই বাঘ পড়ে? |