|
|
|
|
ফের গুলি চলল নন্দীগ্রামে, জখম বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সমর্থক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
তৃণমূল নেতা সমর মাইতি খুনের ঘটনার রেশ কাটার আগেই ফের গুলি চলল নন্দীগ্রামে। সোমবার রাতে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের সামসাবাদ এলাকার আমগেছিয়া গ্রামের বৃদ্ধ ফজলুর রহমানকে গুলি করে পালায় আততায়ীরা। বছর ষাটের বৃদ্ধ ফজলুর নিজেকে তৃণমূলের বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠীর সমর্থক বলে জানিয়েছেন।
তমলুক জেলা হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ফজলুরের কথায়, “আমি আগে সিপিএম করতাম। জমিরক্ষা আন্দোলনের সময় থেকে তৃণমূলের সমর্থক। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় আমাদের এলাকায় তৃণমূলের বিক্ষুদ্ধরা কংগ্রেস প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছিলেন। আমিও ওই কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করেছিলাম।”
তবে, তৃণমূলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরোধিতা করার জন্যই গুলি করা হয়েছে কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব ঘটনাটিকে পারিবারিক গণ্ডগোলের জের বলে দাবি করেছেন। নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান বলেন, “এই ঘটনায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও ব্যপার নেই। পারিবারিক কারণে এই ঘটনা ঘটতে পারে।” ফজলুর রহমানের ছেলে আশরাফুল অবশ্য বলেন, “পারিবারিক বিষয়ে কারও সঙ্গে আমাদের গোলমাল ছিল না। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা তৃণমূলের বিক্ষুদ্ধ হিসেবে দাঁড়ানো কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করেছিলাম। ভোটে ওই প্রার্থী জিতে যায়। এর পর দলের কিছু লোক আমাদের হুমকি দিয়েছিল। তার জেরে এই ঘটনা হতে পারে।”
কারণ যা-ই হোক না কেন, পুলিশের মাথাব্যাথা বারেবারে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে। সরস্বতী পূজার দিন নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের বয়াল-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান সমর মাইতিকে তেরপেখ্যা বাজারের কাছে গুলি করে পালিয়েছিল আততায়ীরা। এক সপ্তাহ কাটার আগেই ফের নন্দীগ্রামের সামসাবাদে গুলি চলার ঘটনায় এলাকায় বেআইনি অস্ত্র মজুত থাকার প্রমাণ জোরালো হয়েছে।
বস্তুত ২০০৭ সালে জমিরক্ষা আন্দোলনের সময় নন্দীগ্রামে প্রচুর বেআইনি অস্ত্র মজুত হয়েছিল। জমিরক্ষা আন্দোলন পর্বের পরেও যে অস্ত্রগুলো রয়ে গিয়েছে এলাকায়। নন্দীগ্রামে একাধিক রাজনৈতিক নেতাকে খুন ও আক্রমণের ঘটনায় ওই বেআইনি অস্ত্র ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে বারবার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তা মেনে নেন, “ওই সময় নন্দীগ্রামের রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত ছিল সকলে। আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি রাজনীতির তলায় চাপা পড়ে গিয়েছিল। ওই রকম একটা পর্বের পরে অস্ত্র-উদ্ধারে যতটা সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল, নানা বাধ্যবাধকতায় তা সম্ভব হয়নি।” জমি আন্দোলন পর্বের পর ২০০৮ সালের ৬ অগস্ট কেন্দেমারি এলাকায় সিপিএম নেতা নিরঞ্জন মণ্ডলকে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করে খুনের ঘটনা ঘটে। এরপর ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সোনাচূড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান নিশিকান্ত মণ্ডলকে স্থানীয় গাংড়া গ্রামে গুলি করে খুন করে আততায়ীরা। ওই ঘটনায় স্টেইনগান ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। যার সূত্রে খুনের পিছনে মাওবাদীদের যোগ খুঁজে বার করে পুলিশ। পরবর্তীকালে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের দুই তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান ও আবু তাহেরের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে দলীয় সমর্থকদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়নি। তবে, ২০১০ সালের ১২ মে ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান সরোজ ভুঁইয়াকে পঞ্চায়েত অফিসের কাছেই গুলি করে খুনের চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। সমর মাইতিকেও গুলি করেই খুন করা হয়। এ ক্ষেত্রে পাইপগান ব্যবহার করা হয়েছিল। সোমবার রাত আটটা নাগাদ সদানন্দ বাজার থেকে হেঁটে আমগেছিয়া গ্রামে বাড়ি ফেরার পথে ফজলুরকেও পিছন থেকে গুলি করা হয়। গুরতর আহত অবস্থায় ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে প্রথমে নন্দীগ্রাম ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “ওই ঘটনায় কারও নামে অভিযোগ হয়নি। তদন্ত শুরু করেছি আমরা।” নন্দীগ্রামে আগ্নেয়াস্ত্র মজুত থাকার অভিযোগও মানতে চাননি এসপি। তাঁর কথায়, “মাত্র কয়েকটা ঘটনা থেকে নন্দীগ্রামে অস্ত্র আছে, এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াটা ঠিক নয়। জেলা জুড়েই অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলে। নন্দীগ্রামেও অভিযান করেছি আমরা।” |
|
|
|
|
|