কোচ আর্মান্দো কোলাসোর স্ট্র্যাটেজি নিয়েই কার্যত প্রশ্ন তুলে দিলেন এডে চিডি। আইএফএ শিল্ড সেমিফাইনালে হারের পর হতাশ-বিমর্ষ ইস্টবেঙ্গল স্ট্রাইকার বলে দিলেন, “এ দিন আমাদের দলের কোনও পরিকল্পনাই ছিল না। পুরো টিমই ছন্নছাড়া ফুটবল খেলেছে। কেউ যেন কাউকে চিনতেই পারছিল না।”
মাঠ থেকে ফিরে দীর্ঘক্ষণ ড্রেসিংরুমে বসে ছিলেন মোগা-অর্ণব-সুয়োকারা। মাঝেমধ্যে দরজা খোলার সময় শোনা যাচ্ছিল কোচ আর্মান্দোর গলা। পরে জানা গেল, গোয়ান কোচ জঘন্য পারফরম্যান্স নিয়ে বকাবকি করেছেন ফুটবলারদের।
সেখান থেকে বেরিয়েই চিডির ‘বিস্ফোরণ’। যুবভারতীর লম্বা করিডর ধরে হাঁটতে হাঁটতে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছিলেন নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার। “ সুয়োকা এ দিন খেলতেই পারছিল না। অনেক আগে ওকে তুলে নেওয়া উচিত ছিল। আমাদের এই ব্যর্থতার আরও একটা বড় কারণ, দীর্ঘদিন ধরে খেলা সেট টিমটাকে ভেঙে দেওয়া। এ দিন মাঠে আমাদের মধ্যে কোনও বোঝাপড়াই ছিল না। মনে হচ্ছিল যেন মরসুমের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছি।”
লাল-হলুদ স্ট্রাইকারের ক্ষোভ থামছিলই না। “মাঝমাঠ আর ডিফেন্স অত্যন্ত জঘন্য খেলেছে। কোনও বলই পাচ্ছিলাম না। যে জন্য আমাকে বারবার নীচে নেমে আসতে হচ্ছিল।” বলছিলেন চিডি। মাঝমাঠের দিকে আঙুল তুলেছেন অর্ণব মণ্ডলও, যিনি এ দিন লাল-কার্ড দেখেন। বলেন, “আমরা সবাই খারাপ খেলেছি, এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে মাঝমাঠ একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। ওদের কোনও সাহায্যই এ দিন ডিফেন্ডাররা পায়নি।”
ইস্টবেঙ্গলের মতো টিমকে সহজেই রিংয়ের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার পর যখন ধানমন্ডির প্রেসিডেন্ট দশ হাজার ডলার পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করছিলেন, তখন ম্যাচ হারের কাটাছেঁড়া চলছিল ইস্টবেঙ্গলে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম প্রধান কর্তা দেবব্রত সরকারও। শুরু থেকে শিল্ডকে একেবারেই গুরুত্ব দেননি লাল-হলুদ কোচ। আর এর প্রভাবই ফুটবলারদের খেলায় পড়েছে বলে মনে করছেন লাল-হলুদের অনেক কর্তাই।
ফুটবলাররাও কি পাঁচ বারের আই লিগজয়ী কোচের ওপর ক্রমশ আস্থা হারাচ্ছেন? চিডির কথা শুনে সেই ইঙ্গিতই মনে হল বেরিয়ে আসছে। “গত তিন বছর (মর্গ্যান জমানা) ইস্টবেঙ্গলের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী ছিল। কিন্তু এ বছর তা ক্রমশ নীচের দিকে নামছে।” এর সঙ্গেই তাঁর চাঞ্চল্যকর মন্তব্য, “মর্গ্যানের পর এমন একজন কোচ এলেন যিনি ফুটবলটাই ঠিক করে বোঝেন কি না সন্দেহ ছিল। তার পর...” বলেই সতর্ক হয়ে গেলেন। কথা ঘুরিয়ে নিয়ে এর পর বললেন, “আপনারা তো সবটাই জানেন। মর্গ্যানের চলে যাওয়াটা আমাদের কাছে একটা বড় মানসিক ধাক্কা ছিল।”
দশ বছরের বেশি সময় ধরে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত অ্যালভিটো ডি’কুনহা। তিনিও এ দিন ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্সে রীতিমতো অবাক। বলছিলেন, “এত খারাপ পারফরম্যান্স কখনও হয়নি আমাদের। সাম্প্রতিক অতীতে তো নয়ই। এ দিন সবাই মিলে একসঙ্গে খারাপ খেলেছে। তিনটি গোল ওরা করেছে আমাদের ভুলের সুযোগ নিয়ে।”
চিডি-অ্যালভিটোদের ক্ষোভে ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমের পরিবেশে কোনও প্রভাব পড়ে কি না, সেটাই এখন দেখার! |