এশিয়া কাপে ভারতের দল নির্বাচন দেখে আমার একটা ব্যাপার মনে হচ্ছে। সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার আগে ছাত্রদের যেমন দেখা যায়, না পড়া চ্যাপ্টারগুলো মন দিয়ে মুখস্থ করতে, ভারতীয় বোর্ডও যেন এখন ঠিক সেটাই করছে। যে চ্যাপ্টারগুলো এখনও ছুঁয়ে দেখা হয়নি, সেগুলো চাইছে যত তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলতে। সামনেই তো মহাপরীক্ষা।
কী? কেন, ক্রিকেট বিশ্বকাপ!
যত দূর মনে হচ্ছে এশিয়া কাপের টিমটাই মোটামুটি আগামী বছর বিশ্বকাপে খেলতে নামবে। কয়েকটা টুকটাক এ দিক ও দিক হতে পারে। কিন্তু বেশি পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। জাতীয় নির্বাচকরা বিশ্বকাপকে মাথায় রেখেই টিমটা করেছেন। যেমন, সুরেশ রায়নাকে পনেরো জনের টিমের বাইরে রাখা। বদলে চেতেশ্বর পূজারাকে নিয়ে নেওয়া।
শুধু এশিয়া কাপকে মাথায় রেখে যদি দল নির্বাচন হত, চেতেশ্বর পূজারার দরকার পড়ত না। রায়নাকে বাদ দেওয়ারও প্রয়োজন ছিল না। বাংলাদেশের উইকেটে উপমহাদেশীয় বোলিংকে ধ্বংস করতে কোনও সমস্যাই হত না রায়নার। পূজারা ছাড়াই কাজ চলে যেত ভারতের। কিন্তু বিশ্বকাপটা তো উপমহাদেশে নয়, হবে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। যেখানে রায়না নয়, পূজারার টেকনিক দরকার। তাই ওকে ওয়ান ডে টিমে রেখে ফর্ম্যাটটার সঙ্গে অভ্যস্ত করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ইশান্ত শর্মাকে যেমন এশিয়া কাপ আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিম (যেটাও মঙ্গলবার হল) দু’টোরই বাইরে রাখাটাও সঠিক সিদ্ধান্ত। সাম্প্রতিকে ইশান্তের পারফরম্যান্স মোটেও ভাল নয়। ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে রঞ্জি একদিনের টুর্নামেন্ট আছে। সেখানে খেলুক ইশান্ত। উইকেট তুলুক। |
এশিয়া কাপের টিমটাকে কেন ভাল বলছি জানেন? নির্বাচকরা অন্তত একটা বার্তা দিতে পেরেছেন যে সবই ক্যাপ্টেনের ইচ্ছেয় হবে না। রায়নার সঙ্গে ধোনির সম্পর্ক কতটা ভাল, রায়না কী ভাবে ম্যাচের পর ম্যাচে সুযোগ পায় ব্যর্থ হয়েও, তা নিয়ে কম কথা হয় না দেশের ক্রিকেটমহলে। হালফিলে ইশান্তকে নিয়েও একই কথা বলা হয়েছে। যে অধিনায়কের পছন্দের তালিকায় আছে বলে ম্যাচের পর ম্যাচ খেলে যাচ্ছে। নির্বাচকরা এ দিন একটা বার্তা দিতে পেরেছেন যে, যত বড় ক্রিকেটারই হোক, পারফর্ম না করলে তাকে বাইরে থাকতে হবে। রায়না-ইশান্ত জঘন্য পারফরম্যান্সের পরেও যদি টিমে থাকত তা হলে সেটা বাকিদের উপর অবিচার হত। এর পর এশিয়া কাপে স্টুয়ার্ট বিনিকে নিয়মিত সুযোগ দিয়ে দেখে নেওয়া যেতে পারে পেস অলরাউন্ডার হিসেবে ছেলেটা কেমন। বা ইশান্তের জায়গায় ঈশ্বর পাণ্ডে, বরুণ অ্যারন, মহম্মদ শামিকে নিয়ে তৈরি ইন্ডিয়ান পেস অ্যাটাক কেমন করছে।
যুবরাজ সিংহ-র প্রসঙ্গে এ বার আসি। এশিয়া কাপের টিমে ও নেই, টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিমে আছে। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওর টিমে থাকা নিয়ে উল্লসিত হওয়ার কারণ নেই। টি টোয়েন্টিতে যুবরাজ এখনও ম্যাচ উইনার। ভারতের শেষ টি-টোয়েন্টিতেও ও-ই ম্যাচ জিতিয়েছে। কিন্তু ওয়ান ডে? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ওয়ান ডে-তে যুবরাজের শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে। ভাবলে খারাপ লাগে যে, যুবরাজ তিন বছর আগেও বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিল। কিন্তু ওকে এখন ভাবা যাচ্ছে না। আসলে যে দিন থেকে ওয়ান ডে-তে ও বোলিংটা বন্ধ করে দিল, ভয়টা তখন থেকেই হচ্ছিল। যা দেখছি, যুবরাজ, গম্ভীর, সহবাগদের জন্য শেষ রাস্তা এখন আইপিএলে কিছু করে দেখানো। কারণ তার পর অক্টোবর মাসের আগে দেশের মাঠে কোনও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে না ওরা। আইপিএলে ভাল না হলে, যুবি-গম্ভীরদের উচিত কাউন্টি খেলতে চলে যাওয়া। দরকারে বিনা পারিশ্রমিকে। বিশ্বকাপের টিমে দু’একটা জায়গায় এর পরেও ক্রিকেটার ঢুকবে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, যুবিদের হাতে কয়েকটা মঞ্চ ছাড়া সুযোগও বেশি নেই।
|
এশিয়া কাপের দল
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (অধিনায়ক), শিখর ধবন, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, চেতেশ্বর পূজারা, অম্বাতি রায়ডু, অজিঙ্ক রাহানে, রবীন্দ্র জাডেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ শামি, বরুণ অ্যারন, স্টুয়ার্ট বিনি, অমিত মিশ্র, ঈশ্বর পাণ্ডে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (অধিনায়ক), শিখর ধবন, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, সুরেশ রায়না, যুবরাজ সিংহ, অজিঙ্ক রাহানে, রবীন্দ্র জাডেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ভুবনেশ্বর কুমার, মহম্মদ শামি, স্টুয়ার্ট বিনি, অমিত মিশ্র, মোহিত শর্মা, বরুণ অ্যারন। |