পাথর দিয়ে থেঁতলে ‘খুন’ ব্যবসায়ী, আতঙ্ক চৌরঙ্গিতে
ফের স্টোনম্যানের কায়দায় খুন। এ বার কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায়।
মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোটার আগেই ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের কাছে ফুটপাথের একটি দোকান থেকে উদ্ধার হল পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলানো অবস্থায় সেই দোকানমালিকের দেহ। ঘটনাস্থলের পাশেই পড়েছিল রক্তমাখা কংক্রিটের স্ল্যাব। গোয়েন্দাদের অনুমান, ওই স্ল্যাব দিয়ে মাথায় আঘাত করেই খুন করা হয়েছে ওই ব্যক্তিকে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম নুরুল ইসলাম (৫০)। প্রতিবন্ধী নুরুলের বাড়ি মেটিয়াবুরুজে। পুলিশ জানায়, প্রায় দশ বছর ধরে লেনিন সরণির মসজিদ গলির ওই জায়গাতেই বাঁশ ও ত্রিপল খাটিয়ে চা-সিঙাড়ার দোকান চালাতেন তিনি। রবিবার সকাল থেকে গোটা সপ্তাহ দোকানেই থাকতেন। প্রতি শুক্রবার রাতে বাড়ি যেতেন। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাতে দোকানেই শুয়েছিলেন নুরুল। মঙ্গলবার ভোর চারটে নাগাদ পাশের হোটেলের দরজা খুলতে আসেন এক কর্মী। তিনিই প্রথমে দেহটি দেখেন। পুলিশ জানায়, পাশের দোকানে কাঠের বাক্সের উপরে নুরুলের দেহটি ছিল। পাশে ছিল কংক্রিটের স্ল্যাব। মাথার পাশে রক্ত জমেছিল। এর পরেই খবর দেওয়া হয় বৌবাজার থানায়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ দেখে, নুরুল যে কাঠের বাক্সের উপরে শুয়েছিলেন, সেটি ভাঙা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই এলাকার বিভিন্ন দোকানে ভিন্ রাজ্যের বহু মানুষ কাজ করেন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকেও অনেকে কাজে আসেন। এঁদের অনেকেই দু’এক মাস অন্তর বাড়ি যান। তাঁদের রোজগারের টাকা নুরুলের কাছেই জমা থাকত। বাড়ি যাওয়ার সময়ে ওই টাকা ফেরত নিতেন তাঁরা। এ জন্য নুরুলের কাছে প্রায় সব সময়েই ১৫-২০ হাজার টাকা থাকত বলে স্থানীয় দোকানদারেরা জানান। ওই টাকা নুরুলের কাঠের বাক্সের ভিতরেই থাকত। তদন্তকারীরা অবশ্য ওই ভাঙা বাক্সে টাকা পাননি। মেলেনি নুরুলের মোবাইল এবং তাঁর হাতের রুপোর দুটো আংটি। চুরির জন্যই এই খুন, না এর পিছনে অন্য কারণ আছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, সোমবার রাত বারোটা নাগাদ ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল নুরুলের। ছেলে বাবরই পুলিশে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট জানাচ্ছে, মাথায় আঘাতের ফলেই মৃত্যু এবং রাত ২টো থেকে ভোর ৪টের মধ্যে খুন করা হয়েছে নুরুলকে। তাঁর বুকের পাঁজর ভাঙা ছিল। একাধিক আততায়ীর সঙ্গে ধস্তাধস্তির ফলে এই ঘটনা বলে অনুমান পুলিশের। আরও অনুমান, যে পাথরের স্ল্যাবের উপরে দাঁড়িয়ে রান্না করতেন নুরুল, তা দিয়েই খুন করা হয়েছে তাঁকে।
আর এই ঘটনার পরেই আবার ফিরে এসেছে ন’য়ের দশকের স্টোনম্যানের আতঙ্কের কাহিনি।
পুলিশ জানায়, স্টোনম্যানের হত্যাকাণ্ড শুরু হয় ১৯৮৯ সালের জুনে। পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে একের পর এক খুন হতে থাকে শহরে। ছ’মাসের মধ্যে কলকাতায় একই কায়দায় প্রায় ১২টি খুন হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারি পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া হত। তাই অপরিচিত ওই হত্যাকারীর নাম দেওয়া হয় “স্টোনম্যান।” আজ পর্যন্ত সেই সব খুনের কিনারা হয়নি। তবে এই ঘটনায় মহম্মদ একরাম নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। লালবাজারের কর্তারা জানান, আগের স্টোনম্যানের শিকার ছিলেন ফুটপাথে শুয়ে থাকা ভিখারি ও ভবঘুরেরা। নুরুলের খুনের ক্ষেত্রে যেমন তাঁর টাকা, মোবাইল, আংটি চুরির ঘটনা ঘটেছে, তেমন আগে হয়নি।
এই ঘটনার পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা জানান, কয়েক মাস আগেই ওই অঞ্চলের একটি দোকানে অ্যাসবেসটসের ছাদ ভেঙে চুরি হয়েছে। তার পরে এই খুন। ফলে যথারীতি আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পুলিশি প্রহরার দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে মিনিট দশেকের জন্য লেনিন সরণি অবরোধও করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.