টিউশন থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তায় ওঠার আগে যে অন্ধকার গলিটা পড়ে, সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে ছেলেগুলো। কোনও রকমে জায়গাটা পেরোয় রিম্পা। সপ্তাহ তিনেক আগে বন্ধু ছন্দার ওড়নায় টান দিয়েছিল ওরা। চেঁচামেচি করায় ভেগে পড়ে ‘রোমিও’রা। এ সব বাড়িতে জানাতে পারেনি রিম্পা। জানলে দুশ্চিন্তায় মা টিউশন থেকে ছাড়িয়ে দেবেন। কী করবে, ভেবে কূল কিনারা পায় না সে।
এই ধরনের সমস্যারই সমাধান এ বার কিছুটা হলেও আসছে রিম্পাদের হাতে। স্কুলে-স্কুলেই তাদের খালি হাতে আত্মরক্ষার আট রকম কৌশলের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কলকাতা পুলিশের এই উদ্যোগের নামও ‘আত্মরক্ষা’। থাকবে ক্যারাটে, জুডো, তাইকোন্ড, উশু-র মতো কৌশল। গত বছর মার্চে কলকাতা পুলিশ এই নিয়ে প্রস্তাব পাঠায়। সম্প্রতি রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতর তাতে অনুমোদন দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এক বছরের জন্য প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে ওই দফতর। এ মাসেই শহরের ১৬টি মেয়েদের স্কুলে প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করবে পুলিশ। প্রসঙ্গত, পার্ক স্ট্রিটে দু’বছর আগে এক মহিলাকে গাড়িতে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। গত বছর কামদুনিতে এক কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুন করে দুষ্কৃতীরা।
লালবাজার সূত্রে খবর, ‘আত্মরক্ষা’র পাইলট প্রকল্পের জন্য পুলিশের আটটি ডিভিশনের প্রতিটি থেকে বাছা হয়েছে দু’টি করে স্কুল। নবম থেকে দ্বাদশ এই চারটি ক্লাসের মোট ২০ জন ছাত্রীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ক্যারাটে, জুডো, বক্সিং, কুস্তি, উশু-সহ আটটি সংগঠনের বিভিন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্রের মহিলা শিক্ষকেরা সপ্তাহে তিন দিন স্কুলে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন। চলবে টানা দু’মাস। তার পরে পুলিশ প্রশিক্ষিত ছাত্রীদের শংসাপত্র দেবে। প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ছাত্রীদের বিশেষ পোশাক দেওয়া হবে। প্রশিক্ষকদের দেওয়া হবে পারিশ্রমিক। পাইলট প্রকল্পের ২০টি স্কুলের পর ধীরে ধীরে শহরের বাকি স্কুলছাত্রীরাও ‘আত্মরক্ষা’য় সামিল হওয়ার সুযোগ পাবেন।
দু’বছর আগে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ কাশ্মীরের প্রায় এক হাজার স্কুলছাত্রীকে এ ভাবেই খালি হাতে আত্মরক্ষার পদ্ধতি নিয়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করে। তিরুঅনন্তপুরম পুলিশ ইজরায়েলের এক মার্শাল আর্ট বিশেষজ্ঞকে নিয়ে এসেছিল মহিলাদের খালি হাতে আত্মরক্ষার উপায় শেখাতে।
মহাদেবী বিড়লা ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষা অঞ্জনা সাহা বলেন, “অনেক সময়েই ছাত্রীদের একা যাতায়াত করতে হয়। এই উদ্যোগে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।” যাদবপুর গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা গৌরী ঘোষ সেনের বক্তব্য, “আমাদের ছাত্রীরা ওই প্রশিক্ষণ নিতে খুবই উৎসাহী।”
গত বছর শহরে ইভটিজিংয়ের অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে ৪১৮টি। ২০১২-তে ওই মামলার সংখ্যা ছিল ৩৭৭। শ্লীলতাহানির মামলাও ৪৮৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭১৯। ধর্ষণের মামলাও ২০১২-তে ১২১ থাকার পর ২০১৩-তে বেড়ে ১৫১ হয়েছে। তবে এক পুলিশকর্তার দাবি, মহিলা নিগ্রহের অভিযোগের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার সঙ্গে প্রশিক্ষণের উদ্যোগের সম্পর্ক নেই। পুলিশের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, মহিলাদের কাজকর্ম, গতিবিধি, রাতে ঘোরাফেরা সবই বেড়েছে। তা মাথায় রেখেই প্রশিক্ষণ হবে। ওই অফিসারের কথায়, “এতে ছাত্রীদের আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তা বাড়বে। আমরা যে তাদের পাশে আছি, তা-ও বোঝানো যাবে।” |