মধ্য রাতে বালিগঞ্জ ফাঁড়ি এলাকায় মত্ত এক মহিলাকে সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছিল পুলিশকে। সেই মহিলার হাতে প্রহৃত হয়ে বার বার থানায় ফোন করে মহিলা পুলিশ পাঠানোর আর্জি জানিয়েছিলেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মী। তবে থানায় যথেষ্ট সংখ্যক মহিলা পুলিশ না থাকায় অবশেষে ফুটপাথবাসী মহিলাদের সাহায্য নিয়ে ওই মত্ত মহিলাকে সামলায় পুলিশ।
এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শহরের থানাগুলিতে মহিলা পুলিশের সংখ্যা যে অত্যন্ত কম, তা প্রমাণিত হয়েছে বারংবার। তবে সেই ঘাটতি যে কিছুটা পূরণ করা গিয়েছে, তা জানালেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশের প্রধান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মহিলা কনস্টেবলদের ১৭তম ব্যাচের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে কমিশনার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুলিশের অনেক কর্তাই।
সুরজিৎবাবু জানান, গত বছরের অগস্ট মাসে মোট ২৩৮ জন মহিলাকে কনস্টেবল প্রশিক্ষণের জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল। সেই পর্বই শেষ হল মঙ্গলবারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান দিয়ে। তিনি জানান, কলকাতা পুলিশের প্রধান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে এই প্রথম এত সংখ্যক মহিলা পুলিশ পাশ করে বেরোচ্ছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে আবেদনকারী মহিলাদের মধ্যে থেকে বেছে নিয়ে নিয়োগপত্র পাঠানো হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যয়ের ছাত্রীরা সুযোগ পেয়েছেন। জেলাগুলির মধ্যে সর্বাধিক (৫৫) মহিলা কনস্টেবল নিয়োগ হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে।
কলকাতা পুলিশের আওতায় থাকা থানাগুলিতে মহিলা পুলিশের সংখ্যা যে কম, বিভিন্ন ঘটনায় এ কথা বহু বার স্বীকার করেছেন খোদ পুলিশকর্তারাও। এ বিষয়ে লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “বর্তমানে কলকাতা পুলিশে ২৬১ জন মহিলা কনস্টেবল রয়েছেন। এ দিন নিয়োগ হলেন আরও ২৩৮ জন। এখনও প্রায় ৫৪৩ জনের পদ খালি রয়েছে।” এই ঘাটতি পূরণের জন্য সম্প্রতি আরও আড়াইশো-তিনশো জন মহিলা কনস্টেবল নিয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে হলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।
এ দিনের অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী মহিলা পুলিশদের উদ্দেশে কমিশনার বলেন, “আমি অভিভূত। তবে, ‘মেট্রোপলিটন পুলিশিং’-এর ধরন আলাদা। ছোট ঘটনাও নিমেষে বড় আকার নিয়ে ফেলতে পারে। তাই কোনও ঘটনাকেই ছোট করে না দেখে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সব সময় শারীরিক ও মানসিক ভাবে তৈরি থাকতে হবে। পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কর্তব্য পালন করে তোমাদের দেখাতে হবে যে, মহিলারাও কোনও অংশে কম নন। এটাই তাঁদের কাছে চ্যালেঞ্জ।”
অনুষ্ঠানের শেষে এক বছরের মেয়েকে কোলে জড়িয়ে ধরে বনগাঁর সান্ত্বনা ওরাওঁ (২১) বলেন, “ছ’মাস মেয়েকে ছেড়ে রয়েছি। শুধুমাত্র ওর কথা ভেবেই সব ভয় কাটিয়ে উঠে এই পরিশ্রম করতে পেরেছি। ভাবতে ভাল লাগছে, কাল থেকে আমি স্বাবলম্বী হয়ে আমার কর্তব্য পালন করতে পারব।” শহরে দিনে দিনে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে, সেখানে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব এ বার থেকে আপনারও। উত্তরে সান্ত্বনা বললেন, “যে করেই হোক, পারতেই হবে।” |