গ্রিক দেবতা অ্যাপোলোর এক বিশাল মূর্তি গত বছর হঠাৎই খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল গাজায়। এমন একটা আবিষ্কারে যখন খুশি হয়ে উঠেছিলেন সারা বিশ্বের প্রত্নতত্ত্ববিদেরা, ঠিক সে সময়ই আসে খারাপ খবরটা। সকলের চোখের সামনে রাতারাতি কী করে যেন উবে যায় সেই অ্যাপোলো মূর্তি। ছোট্ট গাজা তোলপাড় হয়ে যায় মূর্তি চোরের সন্ধানে। তবে বৃথাই চেষ্টা, খোঁজ মেলে না কারোরই না মূর্তির না চোরের। আরও চমক বাকি ছিল তখনও। বহুদিন বাদে ব্রোঞ্জের অ্যাপোলোর বিজ্ঞাপন বেরোয় একটি অনলাইন শপিং সাইটে। শেষমেশ তার সূত্র ধরেই হদিস মিলেছে গ্রিক দেবতার।
মাথা ভর্তি কোঁচকানো চুল। সুঠাম দেহ। ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি অ্যাপোলোর ওজনও বেশ অনেকটাই, প্রায় পাঁচশো কিলোগ্রাম হবে। মূর্তিটা উদ্ধারের গল্পটাও বড় অদ্ভূত। জলের পাড়ে মূর্তিটা প্রথম নজরে আসে এক জেলের। পুড়ে যাওয়া কোনও বিকৃত দেহ ভেবে প্রথমটা বিশেষ আমল দেননি তিনি। পরে কী মনে করে যেন এগিয়ে যান। জল থেকে টেনে তোলেন বিশালাকার সেই মূর্তি। ঈশ্বর খুশি হয়ে কোনও দেবতাকে তাঁর কাছে পাঠিয়েছেন, এই ভেবে গাধার পিঠে চাপিয়ে বাড়িও নিয়ে আসেন তাঁকে। কিন্তু বাদ সাধেন তাঁর মা। সুগঠিত পুরুষ শরীর, লম্বা পা, পেশীবহুল হাত অথচ জামাকাপড়ের লেশ মাত্র নেই! “কী যে আপদ ঘরে নিয়ে এলি,” ছেলেকে এমন একটা জিনিস কাঁধে করে আনতে দেখে রাগে গজগজ করে উঠেছিলেন বৃদ্ধা। |
হালকা খয়েরি গায়ের রং। একটা সবজেটে আভাও যেন রয়েছে। সোনা-টোনা হতে পারে, এই ভেবে মূর্তির একটা আঙুল কেটে নিয়ে সোজা স্যাকরার কাছে যান ওই জেলে। নিজে পরখ করবে বলে তাঁকে না জানিয়ে আরও একটা আঙুল কেটে নিয়ে যায় তাঁর আর এক ভাই। দু’দুটো আঙুল গলিয়েও কণামাত্র সোনা মেলেনি। গ্রিক দেবতা উদ্ধারের কাহিনি ছড়িয়ে পড়ে সেখান থেকেই।
তার পর মূর্তিটি কোথায় গেল, সে খবর আর পাওয়া যায় না। এত বড় মূর্তি সবশুদ্ধ হঠাৎই গায়েব হয়ে যায়। সবাই যখন এক রকম আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখনই একটি অনলাইন শপিং সাইটে বেরোয় বিজ্ঞাপনটি। পাশে দাম লেখা ৩ কোটি ১১ লক্ষ টাকা। তবে শর্ত একটাই, ক্রেতাকে গাজায় এসে নিয়ে যেতে হবে মূর্তিটা।
ইজরায়েল আর মিশরের নানা কড়াকড়ির মধ্যে গাজায় বিদেশি কারোর ঢোকা এক রকম অসম্ভব। তাই আগ্রহী কেউ শেষ পর্যন্ত যোগাযোগ করেছিলেন কি না তা এখনও জানা যায়নি। তবে বিজ্ঞাপনটি চোখে পড়ে যায় পুলিশের। মূর্তিটি উদ্ধার করে এনেছে তারা।
অ্যাপোলোকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। তাঁদের অনুমান, খ্রিস্টপূর্ব ৫ থেকে প্রথম শতকের মধ্যে কোনও এক সময় তৈরি করা হয়েছিল এই মূর্তি। তাঁদের হিসেব সত্যি হলে দু’হাজার বছরেরও বেশি বয়স হয়ে গিয়েছে এই অ্যাপোলো মূর্তির। অতীতে কখনও রোমান, কখনও মিশরীয় কখনও বা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের চাকা গড়িয়েছে এই গাজার উপর দিয়ে। ইতিহাসবিদদের আশা, ভাল করে খুঁজে দেখলে হয়তো আরও পুরনো কোনও ইতিহাসের সাক্ষী উঠে আসবে বালির তলা থেকে। |