কেচ্ছা-কাহিনির বয়স আঠারো বা উনিশ।
কাহিনির নায়িকা, হোয়াইট হাউসের সেই ২২ বছরের ইন্টার্ন ৪০ ছুঁয়েছেন। শিরোনামে আসার মতো খুব একটা কিছুই করেন না আজকাল। নায়ক, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মূলত সেবামূলক কাজকর্মে নিজেকে এখন জড়িয়ে রেখেছেন।
আর তৃতীয় জন? মার্কিন সেনেটর, বিদেশসচিবের মতো গুরুদায়িত্ব পালনের পরে ভবিষ্যতের মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে সামিল হয়েছেন তিনি।
মনিকা লিউইনস্কি, বিল ক্লিন্টন এবং হিলারি রডহ্যাম ক্লিন্টন নব্বইয়ের দশকে খবরের দুনিয়ায় যে তিনটি নাম আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল, সেই কেচ্ছা-কাহিনি নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে জল্পনা। এর ফলে এখন রাজনীতিতে যথেষ্ট সক্রিয় হিলারি ক্লিন্টনের কতটা অস্বস্তি তৈরি হতে পারে, বিতর্ক শুরু হয়েছে তা নিয়েও। |
মনিকা লিউইনস্কি। |
বিল এবং হিলারি ক্লিন্টন। |
|
সম্প্রতি রিপাবলিকান পার্টির কেনটাকির সেনেটর র্যান্ড পলকে হোয়াইট হাউসের সেই বিতর্কিত অধ্যায় নিয়ে বেশ কয়েক বার মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে। গত মাসেই সাংবাদিকদের পল বলেন, “এক জন কমবয়সি ইন্টার্নের সুযোগ নিয়েছিলেন ক্লিন্টন। যেটা অত্যন্ত অমানবিক, জান্তব আচরণের পর্যায়ে পড়ে।” সংবাদমাধ্যমও যেন বিল ক্লিন্টনের প্রেমে এক রকম সায় দিয়েছিল, অভিযোগ পলের।
গত সোমবার ওয়াশিংটনের একটি ওয়েবসাইট আবার হিলারি ক্লিন্টনের বান্ধবী ডায়ান ডি ব্লেয়ারের কাছ থেকে পাওয়া অনেক তথ্য প্রকাশ করেছে। ডায়ান মারা গিয়েছেন ২০০০ সালে। হিলারির সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের বিভিন্ন মুহূর্ত তিনি লিখেছিলেন ডায়েরিতে। তা ছাড়াও রয়েছে কিছু ব্যক্তিগত মেমো এবং চিঠি। এত দিন সে সব রাখা ছিল আরকানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালায়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই রাজনীতি নিয়ে পড়াতেন ডায়ান।
হোয়াইট হাউসে বিল-মনিকার অন্তরঙ্গতা নিয়ে সর্বত্র যখন চর্চা হতে শুরু করেছে, তখন কী অবস্থা হয়েছিল হিলারির? সংবাদমাধ্যম তা জানতে উৎসুক ছিল ভীষণই। কিন্তু ডায়ানকে তিনি বলেছিলেন, সাংবাদিকদের সামনে একেবারেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না। হিলারি বলতেন, “সাংবাদিকদের মাথায় কিছু নেই, কেবল অহং রয়েছে।” ১৯৯৬ সালে ব্লেয়ারকে তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের মন জয় করতে আমায় আরও পরিশ্রম করতে হবে। আমার কোনও মতামত নেই, এমন ভান করলেই ভাল হয়। কিন্তু আমি সেটা পারছি না। আমি জিততে অভ্যস্ত। এবং সেটা নিজের শর্তেই।”
হিলারির কাছে এটা স্পষ্ট ছিল, বিল-মনিকার সম্পর্ক নিয়ে লোকে যতই আঙুল তুলুক না কেন, পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতেই তাঁদের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল। নিজের বান্ধবীকে সে কথা বলেওছিলেন প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি। তবে মনিকাকে ‘আত্মমগ্ন লুনি টুন’ ছাড়া কিছুই মনে হত না হিলারির। ১৯৯৮-এর ডায়ানের সঙ্গে কথোপকথনে তাঁর প্রমাণ রয়েছে।
শুধু মনিকা নয়, বিলের ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গী হয়েছিলেন জেনিফার ফ্লাওয়ার্স নামে আর এক মহিলা। ’৯২ সালের একটি মেমোয় তারও উল্লেখ মিলেছে। ফ্লাওয়ার্সের দাবি, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তাঁর সঙ্গে ক্লিন্টনের ঘনিষ্ঠতা ছিল। গোপন মেমোর বক্তব্য, এই ধরনের রসালো গল্প বন্ধ করতে জনসমক্ষে ফ্লাওয়ার্সকে মিথ্যেবাদী, জাল এবং সম্ভাব্য অপরাধী হিসেবে তুলে ধরা প্রয়োজন। যদিও সোমবার ক্লিন্টনদের মুখপাত্রকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
কিন্তু এই সব তথ্য হঠাৎ এত দিন পরে প্রকাশ্যে আসায় তা হিলারি ক্লিন্টনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্নে কোনও প্রভাব ফেলবে কিনা, উঠছে সেই প্রশ্ন। যতই হোক, নব্বইয়ের দশক থেকে শুধু ফার্স্ট লেডি নয়, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে কম পরিশ্রম করেননি তিনি। পলের আক্রমণ আর ব্লেয়ারের কাগজপত্র পুরনো দিনগুলো আবার মনে করাবে ঠিকই। কিন্তু ২০১৬-য় হিলারির আরও এক বার হোয়াইট হাউসে ঢোকার ক্ষেত্রে সেই অতীত বাধা হবে না বলেই মত বিশেজ্ঞদের।
|