ডুবছে শিশু, সাইকেল থেকে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচালেন যুবক
নিজের চোখের সামনে কচুরিপানা ভর্তি পুকুরের মধ্যে মেয়েকে ডুবে যেতে দেখছিলেন মা। বছর তিনেকের মেয়ের শুধু মাথাটুকুই তখন দেখা যাচ্ছে। আতঙ্কে মায়ের তখন চিৎকার করার ক্ষমতাও নেই। সেই সময়ে, হঠাৎই রাস্তা থেকে নেমে জলে ঝাঁপ দিলেন এক যুবক। টেনে তুললেন ডুবন্ত মেয়েটিকে।
গল্প নয়। সত্যি। ঠিক এই ঘটনাই ঘটেছে মঙ্গলবার কালনা শহরের ছোটমিত্রপাড়ায়।
কল্পনা সাউ নামে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের এক গৃহবধূ মেয়ে বৃষ্টিকে নিয়ে দিন কয়েক আগে হাওড়ার বেলুড়ে তাঁর দাদার বাড়িতে এসেছিলেন। এ দিন সকালে সেখান থেকে অসুস্থ জামাইবাবুকে দেখতে দিদির বাড়ি কালনা শহরের ছোটমিত্রপাড়ায় যাওয়ার জন্য রওনা হন তিনি। বেলুড় স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন। বেলা প্রায় দশটা
অরূপ রায়।
—নিজস্ব চিত্র।
নাগাদ ট্রেন থেকে নেমে দিদির বাড়ির সামনে পৌঁছে যায় মা ও মেয়ে। সেই সময়ে মেয়ের প্রাকৃতিক প্রয়োজনে কল্পনাদেবী তাকে একটি পুকুরের পাশে নিয়ে যান। তখনই আচমকা পুকুরে পড়ে যায় বৃষ্টি। তখন ওই পুকুরের পাশের রাস্তা দিয়েই সাইকেলে করে অফিসে যাচ্ছিলেন কালনা ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির ডেটা এন্ট্রি অপারেটর অরূপ রায়। এই দৃশ্য দেখেই সাইকেল থেকে নেমে জলে ঝাঁপ দেন অরূপবাবু। উদ্ধার করেন ছোট্ট বৃষ্টিকে। ততক্ষণে আশেপাশে লোক জড় হয়ে গিয়েছে।
কল্পনাদেবী জানান, ওই পুকুরটিতে ঘন কচুরিপানা ভর্তি থাকায় এক ঝলক দেখে সেটিকে সবুজ ঘাসের স্তর বলে মনে হচ্ছিল। তাই বুঝতে না পেরে মেয়ে একটু এগিয়ে গিয়েছিল। তখনই বিপত্তি ঘটে। তিনি বলেন, “মেয়েকে নির্দিষ্ট জায়গা দেখানোর পরে কাঁধের ব্যাগটা রেখে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎই ঝুপ করে একটা আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখি মেয়ে পানার মধ্যে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। মেয়েকে তুলতে গিয়ে দেখি সে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। আতঙ্কে গলা দিয়ে ভাল করে স্বর বেরোচ্ছিল না। তার মধ্যেও চিৎকার করতে শুরু করি। সেই সময়েই এক যুবক দেবদূতের মত জলে ঝাঁপিয়ে আমার মেয়েকে বাঁচিয়েছে।”
দুর্ঘটনাটি যে এলাকায় হয় সেই এলাকাটি কালনা পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলার পেশায় চিকিৎসক গোকুলচন্দ্র বাইন ছোট্ট বৃষ্টির চিকিৎসা করেন। গোকুলবাবু বলেন, “মেয়েটি এখন ভাল রয়েছে। শুধু ওই মেয়েটিই নয়, ওকে বাঁচাতে গিয়ে ওঁর মাও তলিয়ে যেতে পারত।” অরূপবাবুকে পুরস্কৃত করার জন্য তিনি মহকুমা শাসককে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাসিন্দারা জানান, ঘটনার সময়ে অরূপবাবুর কাঁধে ছিল ব্যাগ। সেই নিয়েই তিনি জলে ঝাঁপ দেন। ফলে ব্যাগে থাকা নানা দরকারি নথি ভিজে যায়। নষ্ট হয়ে যায় পকেটে থাকা মোবাইল। মেয়েটিকে উদ্ধার করে তিনি বাড়ি গিয়ে ভিজে জামাকাপড় পাল্টে তার পরে পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে যান। ততক্ষণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মারফত পঞ্চায়েত সমিতিতে এই খবর পৌঁছে যায়। অরূপবাবু অফিসে আসার পরে সবাই এসে তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আসেন। কালনা-১ ব্লকের ইনফরমেটিভ অফিসার অসীমা তালুকদার বলেন, “উনি যে ভাবে নিজের জীবন বাজি রেখে একটি শিশুর প্রাণ বাঁচিয়েছেন তাতে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। ওঁর জন্য আমরা গর্বিত।” ওই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রাবণী পাল জানান, পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে অরূপবাবুকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
তবে এত কিছুর পরেও অবশ্য বর্ধমানের ইদিলপুর গ্রামের বাসিন্দা অরূপবাবু নিজে একেবারেই উচ্ছ্বাসহীন। পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে নিজের কাজ করতে করতে তিনি শুধু বলেন, “আমার নিজের সাত মাসের একটি মেয়ে রয়েছে। ওই মেয়েটিকে ডুবে যেতে দেখে নিজের মেয়ের মুখটি ভেসে উঠেছিল। তারপর কিছু না ভেবেই জলে ঝাঁপ দিই। ভবিষ্যতেও যদি এই অবস্থার মুখে পড়ি, তা হলে ফের ঝাঁপাব।”
এ দিন বিকেলে ছোটমিত্রপাড়ায় কল্পনাদেবীর দিদির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টিকে দেখতে আশেপাশের বাসিন্দাদের ভিড় জমে গিয়েছে। তাঁদের অনেকেই তার গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। সে দিকে অবশ্য ছোট্ট মেয়েটির কোনও নজর নেই। সে তখন নিজের মনে খেলায় ব্যস্ত। অঘটন আজও ঘটে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.