সন্ধ্যা নামার কিছু পরেই আর বাস মেলে না। পাওয়া যায় না লোকাল ট্রেন। মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ পেরিয়ে বাড়ি ফিরতে সময় লেগে যায় অন্তত চার ঘণ্টা। গাড়ির ভাড়া গুণতে হয় কয়েক গুণ।
দিনের পর দিন এই সমস্যায় ভুগছেন চিত্তরঞ্জনের বাসিন্দারা। সমস্যা মেটাতে চিত্তরঞ্জন স্টেশনে কয়েকটি মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন থামানোর পাশাপাশি আসানসোল থেকে চিত্তরঞ্জন পর্যন্ত দু’টি লিঙ্ক ট্রেন চালুর দাবি করেছেন তাঁরা। রেল প্রতিমন্ত্রীকে একটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন কারখানার শ্রমিক-কর্মীরা।
পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকার শহর এই চিত্তরঞ্জনে প্রায় দশ হাজার রেল আবাসনে বাস করেন রেল ইঞ্জিন কারখানার শ্রমিক-কর্মীরা। তাঁরা নিয়মিত বিভিন্ন কাজে শহরের বাইরে যান। কিন্তু ফিরতে রাত হলেই আসানসোল থেকে বাড়ি পৌঁছনোর সমস্যার অন্ত থাকে না। কারণ, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে চিত্তরঞ্জনগামী বাস রাস্তা থেকে কার্যত উধাও হয়ে যায়। আসানসোল থেকে লোকাল ট্রেনও পাওয়া যায় না। যে ক’টি মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন এই লাইনে যাতায়াত করে তার অধিকাংশই চিত্তরঞ্জন স্টেশনে দাঁড়ায় না। ফলে, সেই ট্রেনে চড়তে পারেন না তাঁরা। একই সমস্যা চিত্তরঞ্জন লাগোয়া রূপনারায়ণপুরের লক্ষাধিক বাসিন্দারাও। |
এই সমস্যা মেটানোর আবেদন জানিয়ে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর দ্বারস্থ হয়েছেন চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার শ্রমিক-কর্মীরা। সম্প্রতি কারখানার আইএনটিইউসি অনুমোদিত ‘সিএলডব্লু ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সদস্য-সমর্থকেরা রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীকে একটি গণস্বাক্ষর করা দাবিপত্র তুলে দেন। তাঁদের দাবি, চিত্তরঞ্জন থেকে কলকাতা পর্যন্ত যে ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি চালু হয়েছিল পরে সেটি দেওঘর পর্যন্ত করা হয়। সেই ট্রেনটি ফের চিত্তরঞ্জন পর্যন্তই করা হোক। কারণ, দেওঘর থেকে আসা-যাওয়ার ফলে ওই ট্রেন দেরিতে চলে। ফলে, চিত্তরঞ্জন, রূপনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দারা সেই ট্রেনের সুবিধা পাচ্ছেন না।
যাঁরা শিয়ালদহ-আসানসোল ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস বা হাওড়া-আসানসোল অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ধরে আসানসোল হয়ে বাড়ি ফিরতে চান, তাঁদের জন্য আসানসোল থেকে চিত্তরঞ্জন যাওয়ার লিঙ্ক ট্রেনের ব্যবস্থা বা লোকাল ট্রেন চালুর দাবি জানানো হয়েছে।
ওই সংগঠনের তরফে আরও দাবি, পুরী-দ্বারভাঙা, হাওড়া-হরিদ্বার, কুম্ভ ভাগলপুর-যশবন্তপুর এক্সপ্রেসগুলিকে চিত্তরঞ্জনে দাঁড় করানো হোক। ‘সিএলডব্লু ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর নেতা তথা স্টাফ কাউন্সিল সদস্য নেপাল চক্রবর্তী বলেন, “আমরা রেলের কর্মচারী হয়েও ট্রেনের সুবিধা পাচ্ছি না। কষ্ট করে যাতায়াত করতে হচ্ছে।” রূপনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা অনাথবন্ধু চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “কলকাতা বা অন্য কোথাও থেকে ফিরতে একটু রাত হলেই আর ট্রেন বাস মেলে না। চড়া ভাড়ায় গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। যাঁদের সঙ্গে রোগী থাকে তাঁরা সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েন।”
আসানসোল থেকে চিত্তরঞ্জনে যাওয়ার জন্য শেষ বাস ছিল রাত সাড়ে ৯টায়। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে রাতের বাস আর নিয়মিত চলে না। বাস মালিকেরা জানান, চিত্তরঞ্জন রোডের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। তাই দুর্ঘটনার ভয়ে চালকেরা রাতে বাস চালাতে চাইছেন না।
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, “ওই আবেদন পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রেলের আধিকারিকেরা পুরো বিষয়টি দেখার পরে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন।” |