|
|
|
|
ঠোঁটকাটা |
স্বীকার করলেও সমস্যা। না করলেও। নায়িকাদের কসমেটিক
সার্জারি যেন শাঁখের করাত। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
‘হোঁটো পে অ্যায়সি বাত
ম্যয় দাবাকে চলি আয়ি...’
লতা মঙ্গেশকরের এই গানটা বোধহয় ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে উঠেছিল যখন সোমবার রাতে অনুষ্কা শর্মার টুইট ভেসে উঠল। এই প্রথম অনুষ্কা ফাঁস করলেন তাঁর ওষ্ঠরহস্য। বললেন, তিনি প্লাস্টিক সার্জারি করাননি। ‘লিপ এনহ্যান্সমেন্ট টুল’ ব্যবহার করেছেন। তাও আবার অনুরাগ কাশ্যপের ‘বোম্বে ভেলভেট’ ছবিতে অভিনয় করার জন্যই
|
‘ব্যান্ড বাজা বারাত’য়ে |
এই সিদ্ধান্ত। টুইটারে তিনি বলেছেন, “কিছু দিনের জন্য আমি টেম্পোরারি লিপ এনহ্যান্সিং টুল ব্যবহার করেছি। সেই সঙ্গে এক বিশেষ মেক আপ টেকনিক (যেটা আমি অনেক বছর ধরে শিখছি) তার জন্যই হয়তো আমার ঠোঁট একটু অন্য রকম দেখিয়েছে। তাই আমি আবারও বলছি, আমি কোনও প্লাস্টিক সার্জারি করাইনি বা কোনও ইন্ট্রুসিভ প্রোসিডিওরের মধ্যে দিয়েও যাইনি। এটা আমার সিদ্ধান্ত। আমার আগামী ছবি ‘বোম্বে ভেলভেট’য়ে চরিত্রের জন্যই এটা করেছি। এটা একটা পিরিয়ড ড্রামা। যেখানে আমি ১৯৬০-৭০-য়ের এক জ্যাজ গায়িকার চরিত্রে অভিনয় করছি। ওই সময়ের রেফারেন্সেই এটা করেছি।”
তবে অনুষ্কা যা বলেননি, তা হল এই ‘লিপ এনহ্যান্সমেন্ট টুল’ জিনিসটা কী? অনেকেই জানেন না যে এটা ছোট একটা জিনিস, যা নাকি মহিলারা নিজেদের পার্সেই রাখতে পারেন। ব্যবহার করাও বেশ সহজ। পাঁচটা ধাপ মানলেই লাস্যময়ী ঠোট হয়ে যাবে আপনার। কিন্তু তা টেম্পোরারি ব্যবস্থা।
প্রথম ধাপ: হাল্কা সাবান আর জল দিয়ে ঠোঁট পরিষ্কার করুন।
দ্বিতীয় ধাপ: ঠোঁট আর তার চারপাশটা এক্সফোলিয়েটও করে নিতে পারেন। এ বার মুখ জলে ভিজিয়ে নিন। ভিজিয়ে নেওয়াটা দরকারি নয়, কিন্তু এতে সাফল্যের হার বেশি।
|
|
‘কফি উইথ কর্ণ’য়ের সেটে অনুষ্কা। |
তৃতীয় ধাপ: লিপ এনহ্যান্সারকে আপনার ঠোঁট আর মুখে বসান। এ বার এনহ্যান্সার থেকে হাওয়া বের করে দিন, যাতে সেটা শক্ত করে বসে যায়।
চতুর্থ ধাপ: এই অবস্থায় কিছু সময় রেখে দিন। কত সময় রাখবেন সেটা প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা হয়। ধাপগুলো বারবার করুন যত ক্ষণ না মনের মতো ঠোঁট পাচ্ছেন।
পঞ্চম ধাপ: এ বার স্বাভাবিকের মতো কসমেটিক্স লাগিয়ে নিন।
অনুষ্কা হয়তো এমনই কোনও একটা পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন। তবে তিনি বলেছেন ‘কফি উইথ কর্ণ’য়ে যে তাঁকে অন্য রকম দেখতে লেগেছে, তার কারণ শুধু ঠোঁট নয়। “সবারই ভাল-খারাপ দিন থাকে। আমাকে কি ওই দিন দেখতে ভাল লাগছিল? না। আমার মনে হয়, অন্য রকমও করতে পারতাম। আর এই প্রসঙ্গে চর্চার মধ্যে আমি আবারও পরিষ্কার করে দিতে চাই— আমি প্লাস্টিক সার্জারি বা শরীরের অস্বাভাবিক দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনে বিশ্বাস করি না। এগুলো আমি সমর্থন করি না বা রেকমেন্ডও করি না।”
আর সার্জারি নিয়ে তাঁর এই বক্তব্যকে ঘিরে শুরু হয়েছে আরও কথা চালাচালি। এই মন্তব্য নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন রাখি সাওয়ান্ত। বলেছেন, “বলিউডের প্রায় সব প্রথম সারির অভিনেত্রীই প্লাস্টিক সার্জারি করান। আমি স্বীকার করি। অন্যরা করেন না। আরে বাবা, এটা তো আমার দেহ। তাকে নিয়ে আমি যা ইচ্ছে তাই করতে পারি। এতে লজ্জা পাওয়ার কী আছে? আমি কারও নাম বলব না। কিন্তু আমি হিরোইনদের ছবি দেখেই বলে দিতে পারি কে কী ধরনের সার্জারি করিয়েছেন। প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে আমার পিএইচ ডি আছে। কোন ইনজেকশন দিয়ে গাল ঠিক করিয়েছেন, কে ‘ফ্ল্যাট টামি’ বানিয়েছেন, কে ‘সিক্স প্যাকস’ করেছেন— সেটাও আমার নখদর্পণে,” বলছেন রাখি।
আজ থেকে আট বছর আগে রাখি নিজে ‘ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট’ করিয়েছিলেন। “সিলিকন ইমপ্ল্যান্ট করিয়েছিলাম। সাত বছর ছিল। কোনও অসুবিধা হয়নি। লাফানো, ঝাঁপানো— সব কিছু করতাম। সাত বছর পর্যন্ত রেখেছিলাম। এক বছর হল খুলেছি। প্রয়োজনে আবার লাগাতেও পারি। সিলিকন ইমপ্ল্যান্ট করলে ব্রেস্ট ফিডিংয়েও সমস্যা হয় না,” বলছেন তিনি।
|
|
|
“কই কেউ তো বলে না, বয়স্ক-বয়স্ক নায়কদের কেন চুল ওঠে না? মুখে কোনও রিঙ্কল নেই কেন?” |
“সাত বছর পর্যন্ত সিলিকন ইমপ্ল্যান্ট-টা রেখেছিলাম... প্রয়োজনে আবার লাগাতেও পারি।” |
—কোয়েনা মিত্র |
— রাখি সাওয়ান্ত |
|
ভাল ডাক্তারের হাতে পড়লে কোনও কাটাছেঁড়ার দাগ থাকে না, বলছেন রাখি। “দেখেন না সব হিরোইনদের একেবারে ফ্ল্যাট পেট। ওটা এমনি এমনি হয় না কি? ছোট একটা প্রিক দিয়ে ‘ইয়োলো ফ্যাট’ বের করে নেয়। ব্যস, তার পর যাকে বলে একেবারে ‘ওয়াশবোর্ড অ্যাবস’। কত হিরোইনদের দেখবেন প্রথম দিককার ছবিতে মুখটা ছোট আর গোল। পরে ছুঁচলো মুখ। বুঝি এ তো ডাক্তারবাবুদের কারসাজি,” বলছেন রাখি।
বলিউডের অনেক তারকার শরীর নিয়ে কাটাছেঁড়া করেন ডা. পরাগ তেলাঙ্গ। তাঁর কাছে প্রতি মাসে ৬/৭ জন তারকা আসেন ‘সিক্স প্যাক অ্যাবস’-এর জন্য। তাঁর মতে, “রাখির মতো সব্বাই বলতে চান না। হয়তো সেই সেলিব্রিটি আমার কাছে এসে, এক রাত থেকে ‘সিক্স প্যাকস’ বানিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু পেপারে সাক্ষাৎকার দিলেন যে, এ সব ডায়েট, ব্যায়াম আর জিম করে হয়েছে। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি আর স্কারলেট জোহানসেনকে দেখে তো সাধারণ মেয়েদেরও এখন ফোলা ঠোঁট দরকার। প্রত্যেক দিনে দু’টো করে ‘ফ্ল্যাট টামি’ করতে হয় আমাকে। মাসে ১০-১৫ টা ব্রেস্ট আগমেনটেশন।”
কিন্তু তারকারা কেন এ বিষয়ে কথা বলতে এত লজ্জা পান?
কলকাতার ডা. মনোজ খন্না জানাচ্ছেন যে, সে সব দিন চলে গিয়েছে যখন মানুষ ভাবতেন এই সব করলে কে কী বলবে। “সারা বিশ্ব জুড়ে কসমেটিক সার্জারি এখন ইন ডিমান্ড। কোনও সাইড এফেক্ট নেই। কিছু কমপ্লিকেশন মাঝেমধ্যে হয়ে থাকে। কিন্তু সেগুলো সবই ট্যাকল করা সম্ভব। আসল ব্যাপার হল, সব্বাই চায় নিজেকে ভাল দেখতে লাগুক। দে ওয়ান্ট টু ফিল গুড টু। তা সে পেটের চর্বি কমানো হোক কী হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট। কারও ক্ষেত্রে সেটা দেখেই বোঝা যায় কারণ পরিবর্তনটা বড্ড বেশি চোখে পড়ে। কারও ক্ষেত্রে সেটা অত সহজে বোঝা যায় না। বলিউডের নায়করা যখন অল্পবয়সি হিরোইনদের সঙ্গে অভিনয় করেন তখন তাঁরা নিশ্চয়ই কিছু ট্রিটমেন্ট করেন যাতে বয়সের ছাপ তাঁদের চেহারাতে ধরা না পড়ে। কিন্তু অনেকে সেটা স্বীকার করেন না তাদের ‘ভ্যানিটি’র জন্য,” বললেন তিনি। |
খোদার উপর খোদকারি |
লিপ এনহ্যান্সমেন্ট |
৪৫ হাজার থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা |
সাইজ জিরো |
৭৫ হাজার থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা |
জ’ কনটুরিং |
৭৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা |
সিক্স প্যাকস |
১ লক্ষ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা |
সূত্র: ডা. পরাগ তেলাঙ্গ |
|
অভিনেত্রী কোয়েনা মিত্রর নাম কসমেটিক সার্জারি প্রসঙ্গে বারবার উঠে আসে। তাতে বেশ বিরক্ত হন তিনি। বলছেন, “তিন বছর আগে এই ঝামেলা হয়েছে। আমার সার্জারিটা ‘ডিজাস্টার’ ছিল না। কিন্তু সব জায়গায় এ ভাবেই হেডলাইন করা হয়েছিল। আমার বডি রিঅ্যাক্ট করেছিল বলে সমস্যা হয়েছিল। আমি তার পরেও মিডিয়াতে এ নিয়ে স্টেটমেন্ট দিয়েছি। তবু লোকে আজও আমাকে ‘জাজ’ করে। কেন? কারণ আমাদের দেশের প্রবলেম। মিডিয়ার প্রবলেম। ছানি অপারেশনেও সমস্যা হয়। তাই বলে কি, যে অপারেশন করায় তাকে বলা হয়, ‘তুমি পাপ করেছ’? হয় না। কসমেটিক সার্জারি করলেই এমন চর্চা হয়, যে এটা যেন একটা পাপ।”
মেয়েরা যদি প্রয়োজনে কসমেটিক সার্জারি করায়, তবে কেন এত জাজমেন্ট দেওয়া হবে, প্রশ্ন কোয়েনা-র। “যদি চোদ্দো বছরের একটা মেয়ের চুল পড়ে যায়, আর তার বাবা তার ‘হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট’য়ের ব্যবস্থা করেন তাতে আপত্তি কোথায়? এটা তো তার প্রয়োজন। এর জন্য তো তাকে খোঁটা দেওয়া উচিত নয়। আমি যখন কসমেটিক সার্জারি করেছিলাম তার আগে আমাকে অনেক পরিচালক বলেছিলেন যে আমার শরীরের গঠন অনুযায়ী আমার নাকটা টিকোলো হওয়া উচিত। সেই সময় আমার ওটা প্রয়োজন ছিল। নাক নিয়ে সমস্যা হওয়ার পরে কারেক্টিভ সার্জারি হয়। আমি লস এঞ্জেলেস-এ গিয়ে দু’টো ছবি করি। আমার নামে মিল্ক শেক লঞ্চ হয়েছে। মুম্বইতে বিউটি ক্লিনিক এনডোর্স করি। ‘ভাইল্যান্ড’ বলে একটা হিন্দি ফিল্ম করছি এখন। আমাকে যাঁরা এত কাজ দিয়েছেন তাঁরা কি সব অন্ধ না ইডিয়ট? স্টেটমেন্ট দিয়েছিলাম। পরে এত ধরনের কাজ করলাম। তাও আজও লোকে আমাকে কটাক্ষ করে,” বিরক্ত কোয়েনা বললেন।
প্রিয়ঙ্কা চোপড়া থেকে গওহর খান। শিল্পা শেঠি থেকে মিনিশা লাম্বা— অনেকের নামই উঠে এসেছে সার্জারি-চর্চায়। এ লিস্টে রাখি তাঁর নাম দেখে আশ্চর্য নন। বরং হেসে বললেন, “অনুষ্কা যা বলেছে বা করেছে, সেটা ওর ব্যাপার। আমি আজও বিশ্বাস করি যে, যা ভগবান দেননি, তা দেওয়ার জন্য রয়েছেন ডাক্তাররা।”
তবে কোয়েনা শেষে একটা অন্য প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন। জিজ্ঞেস করলেন, “আমাদের দেশে নায়িকাদের শরীর নিয়েই কেন এত চর্চা? টুইটারে ভূরি ভূরি কমেন্ট আমাদের নিয়ে। কই কেউ তো বলে না, বয়স্ক-বয়স্ক নায়কদের কেন চুল ওঠে না? মুখে কোনও রিঙ্কল নেই কেন? কী করে তাঁরা তাঁদের চিরযৌবন ধরে রাখেন? যত ‘দোষ’ সবই যেন নায়িকাদেরই!”
নিন্দুকেরা শুনছেন কি? |
|
|
|
|
|