ছাদের একটি অংশ জুড়ে ফাটল। কোথাও পলেস্তরা খসে পড়ছে। সিলিং জুড়ে মাকড়সা’র জাল। লোহার গ্রিলের গেটে রঙের পোঁচ পড়েছে। তবে তা বেঁকে রয়েছে। মেঝে ও সিঁড়ির অনেকটাই ভেঙে গিয়েছে। যাত্রীদের বসার ব্যবস্থাও প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। শৌচালয় থাকলেও তা অনেক সময়ই থাকে ভীষণ নোংরা। সীমানা প্রাচীরের একটি অংশ জুড়ে দিনভর চলছে গণ মূত্র বিসর্জন। কিছু এলাকায় গন্ধে এবং নোংরায় দাঁড়ানোই দায়। রবার, ইউক্যালিপটাস গাছের বাগানের তার জালির রেলিং ভেঙে মাটি গড়াগড়ি খাচ্ছে। যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে গরু বা কুকুর। রাতে আলোর সংখ্যা খুবই কম। দু’মাসেরও বেশি সময় বন্ধ যাত্রীদের ডরমেটরির ব্যবস্থা। ঢোকা বা বার হওয়ার রাস্তার অবস্থাও তথৈবচ।
এই ভাবেই দিনের পর দিন চলছে শিলিগুড়ির কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস ‘তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস’। উত্তরবঙ্গের অন্যতম বড় সরকারি বাস টার্মিনাস এটি। যাত্রীদের পাশাপাশি টার্মিনাসের ভিতর ও বাইরের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত এক দশক ধরে টার্মিনাসটির এই বেহাল দশা। অথচ গোটা রাজ্যের তো বটেই লাগোয়া অসম, বিহার, সিকিমে বাসে যাতায়াতের জন্য এই টার্মিনাসটিই ভরসা। শৌচালয় মেরামতি, পানীয় জল এবং বসার কিছু ব্যবস্থা করা হলেও তা অপ্রতুল বলেও অভিযোগ। |
১৯৮৯ সালে তৈরি এই টার্মিনাসের সামনে অংশ উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিহবণ নিগমের (এনবিএসটিসি) জন্য বরাদ্দ। সরকারি নথিতে টার্মিনাসটি এনবিএসটিসি-র। পিছনের অংশে রয়েছে আরেকটি বাসস্ট্যান্ড। সেটি বিভিন্ন জেলার মধ্যে চলাচলকারী বেসরকারি বাসের। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রতি মাসে বেসরকারি বাস মালিকদের থেকে প্রায় ২ লক্ষ টাকা আদায় করে কর্তৃপক্ষ। নর্থ বেঙ্গল প্যাসেঞ্জার ট্রান্সপোর্ট ওনার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক প্রণব মানি বলেন, “নিয়মিত এনবিএসটিসিকে টাকা দেওয়া হলেও নর্দমা, জঞ্জাল ঠিকমত পরিস্কার হয় না।”
কেন মেলে না পরিষেবা?
এনবিএসটিসি চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “নিগমের আর্থিক সমস্যা, সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবুও টার্মিনাসের সংস্কারের জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে দু’দফায় টাকায় বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ২৩ লক্ষ মত দেওয়া হয়েছে। আবার ৯০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। টার্মিনাসের নকশা, তথ্য সব শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে থাকায়, তাঁরাই কাজটি করবেন। আশা করছি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে টার্মিনাসের ভোল বদল করা সম্ভব হবে।” মন্ত্রী জানান, আগামী আর্থিক বছরে টার্মিনাসকে বাণিজ্যিকভাবে আরও লাভবান করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেখানে মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করা হবে।
তবে মন্ত্রী আশ্বাস দিলেও ভোগান্তি চলছেই যাত্রীদের। রায়গঞ্জে ঠিকাদারের অধীনে কাঠের কাজ করেন কোচবিহারের বাসিন্দা মৃণাল বর্মন, অসীম রায়, ভক্ত রায়’রা। কাজ সেরে রায়গঞ্জ থেকে মাঝেমধ্যেই বাস ধরে শিলিগুড়ি পৌঁছন রাতে। কোচবিহারের বাস ধরার জন্য অনেক সময়ই গভীর রাত বা ভোর অবধি টার্মিনাসে অপেক্ষা করতে হয়। তাঁরা জানান, এ বার শীতের রাতে ডরমেটরি খোলা না থাকায় অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে মাটিতে খবরের কাগজ পেতে চাদর মুড়িয়ে বসে থাকতে হয়েছে। দ্রুত কেন ডরমেটরি সংস্কার করা হচ্ছে না তা পরিস্কার নয়।” মালদহের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক সঞ্জীব মাহাত স্ত্রী এবং বৃদ্ধা মা’কে নিয়ে শিলিগুড়িতে এসেছিলেন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে। ফেরার বাস ধরতে যান টার্মিনাসে। ব্যাগ পেতে বসে ছিলেন টার্মিনাসের ট্যারমাকে। সঞ্জীববাবুর কথায়, “মা’র পায়ের সমস্যা রয়েছে। টার্মিনাসে মাত্র কয়েকটা হাতে গোটা চেয়ার। যাত্রী চাপে সব সময়ই তা ভরা থাকে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দেখা দরকার।” |