কোথাও দলত্যাগী বিধায়কের পুতুল তৈরি করে, গলায় ঝোলানো হয়েছে জুতোর মালা এবং মদের বোতল। কোথাও আবার দলত্যাগী বিধায়ককে বহিষ্কারের দাবিতে কর্মী সমর্থকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে জেলা নেতাদের। ডুয়ার্সের আরএসপির দুই বিধায়কের রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া এবং তার পর দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগদানকে কেন্দ্র করে গত শনিবার থেকেই দলের সাধারণ কর্মীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এবারে সেই ক্ষোভের মুখে পড়তে হল জেলা নেতাদেরও।
তৃণমূলে যোগ দেওয়া কুমারগ্রামের বিধায়ক দশরথ তিরকিকে বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে গত রবিবার ডুয়ার্সের বীরপাড়ায় আরএসপির কর্মী-সমর্থকরা ধিক্কার মিছিল বের করেন। বিধায়কের পুতুল তৈরি করে জুতোর মালা, মদের বোতল ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ডুয়ার্সের রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার চব্বিশঘণ্টা পরে এ দিন সোমবারও ওই বিষয় নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নিয়েই সরগরম ছিল ডুয়ার্সের রাজনৈতিক বাতাবরণ। আরএসপি-র বীরপাড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক গোপাল প্রধান বলেন, “দশরথ তিরকেকে জন প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছিল আরএসপি। টাকা এবং মদের কাছে তিনি বিক্রি হয়ে গিয়েছেন। সাধারণ বাসিন্দারাও ক্ষুব্ধ।” সিপিএম নেতা রবিন রাইয়ের কথায়, “আরএসপি নেতা কর্মীরা যেমন বুঝেছেন, তেমন বিক্ষোভ করেছেন। সে বিষয়ে আমি কিছু বলব না।” বামপন্থীদের সুরেই প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য মান্না জৈন বলেন, “বিধায়ক দল ছেড়ে যাওয়াকে স্বাভাবিক ভাবেই আরএসপি কর্মীরা ভাল ভাবে মেনে নিতে পারেননি। বিধায়ক প্রতারণা করেছেন। কর্মী ও নেতারা ক্ষোভ উগরে দেবে, এটাই স্বাভাবিক।” তবে ফালাকাটার বিধায়ক তথা আলিপুরদুয়ার সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনিল অধিকারীর বিধায়কের নামে পুতুল তৈরি করে জুতোর মালা ও মদের বোতল ঝোলানোর ঘটনাকে নিন্দা করেছেন। তাঁর কথায়, “মদের বোতল বা জুতোর মালা নিয়ে বিক্ষোভ খুব নিম্ন রুচির পরিচয়। কুমারগ্রামের মত পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তিনি দলে যোগ দিয়েছেন।” বিধায়ক দশরথ তিরকেকে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, “ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলব।”
অন্যদিকে, ময়নাগুড়িতে দলের কর্মী সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে জেলা নেতাদেরও। দল ছেড়ে যাওয়া বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারীকে কেন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে, দলের নেতাদের কাছে তা জানতে চান সাধারণ কর্মীরা। রবিবার বিকেলের পরে বাছাই করা কর্মী ও নেতাদের নিয়ে ময়নাগুড়িতে বৈঠকে বসেন আরএসপি জেলা নেতৃত্ব। রাত পর্যন্ত বৈঠকে দলের কর্মীরা বিধায়ক দল ছাড়লেন কেন প্রশ্ন তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। আজ, মঙ্গলবার ঘটনার প্রতিবাদে ধিক্কার মিছিলের কর্মসূচি নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে জেলা নেতারা। দলের জেলা সম্পাদক সুনীল বণিক বলেন, “দলত্যাগী বিধায়ককে বহিষ্কারের বিষয়ে একটি কথাও বলব না। ওই বিষয়ে যা করার রাজ্য করবে । বিধায়ক প্রতারণা করেছেন। আমরা স্থানীয় নেতা কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে ঘটনার ধিক্কার জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” রবিবার বিকেল চারটার পরে শুরু থেকে দলের ময়নাগুড়ি-মালবাজার জোনাল কমিটির সভা নেতা ও কর্মীদের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, দলের নেতারা বিধায়ককে কাজে সহযোগিতা করতেন না। তাঁদের অভিযোগ, বিধায়ক ছাড়া অন্য নেতাদের সব সময়ে দলীয় দফতরে দেখাও যেত না। ওই কারণে বিধায়ক এতটাই ক্ষুব্ধ ছিলেন যে দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এর পরেও জেলা নেতারা চুপ করে বসে ছিলেন বলে তাঁদের অভিযোগ। সমর্থকদের আরেকটি অংশ জানতে চান, বিধায়ক দলত্যাগ করার পরেও এতদিন কেন বহিষ্কার করা হচ্ছে না? বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী সোমবার অবশ্য বলেন, “প্রকাশ্যে দলত্যাগ করেছি। ওঁরা আমাকে বহিষ্কার করল কিনা তাতে কিছু যায় আসে না।” |