সারদা-কাণ্ডের পরে গঠিত বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশন স্থির করেছিল, সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বিক্রি করা হবে। কিন্তু সে এক্তিয়ার কমিশনের নেই বলে সোমবার জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে সম্পত্তি বিক্রির অর্থে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের প্রয়াস কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। হাইকোর্টের এ-ও নির্দেশ, সারদা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলা এক জায়গায় আনার লক্ষ্যে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে। দেখতে হবে, কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) যেন রাজ্য সরকারের তদন্তকারীদের কাছ থেকে যথাযথ সহযোগিতা পায়।
শ্যামল সেন কমিশন যে ভাবে সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কেন্দ্রীয় ইডি তাতে আপত্তি তুলেছিল। হাইকোর্টকে তারা বলেছিল, সারদা-সম্পত্তি এ ভাবে বাজেয়াপ্ত করে বেচে দেওয়ার কোনও আইনি অনুমোদন কমিশনের নেই। তাদের দাবি, আইন মোতাবেক একমাত্র কেন্দ্রীয় ইডি-ই কাজটা করতে পারে। এ দিন সারদা-মামলার শুনানিতে ইডি-র যুক্তিটি মেনে নিয়েছে হাইকোর্টের বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ।
আর তারই পরিণামে আদালতের নির্দেশ, কমিশন সারদার কোনও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বিক্রি করতে পারবে না। যা শুনে আইনজীবীদের একাংশের অভিমত, সেন কমিশন গঠনকালে তাদের হাতে সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও বিক্রিরও যে অধিকার রাজ্য সরকার তুলে দিয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষাপটে তার আর কোনও যৌক্তিকতা থাকছে না। কমিশন ইতিমধ্যে সারদা গোষ্ঠীর হাতে থাকা তিনটি বৈদ্যুতিন চ্যানেল বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা নিয়ে কথাবার্তাও অনেকটা এগিয়েছে বলে কমিশন-সূত্রের খবর। কথা রয়েছে, চ্যানেল বিক্রির টাকা সারদা-কাণ্ডের ভুক্তভোগীদের মধ্যে বিলি করা হবে।
কিন্তু সে প্রক্রিয়া চালু থাকবে কি না, স্বভাবতই তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে কমিশন কী বলছে? রাজ্যেরই বা কী বক্তব্য?
কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শ্যামল সেনের প্রতিক্রিয়া, “রায়ের প্রতিলিপি না-দেখে কিছু বলব না।” হাইকোর্টের নির্দেশের কপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত এ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে রাজি হননি প্রশাসনের কোনও কর্তা।
এ দিকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন আদালতে যে ভাবে সারদা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত হরেক মামলার শুনানি চলছে, তা নিয়েও হাইকোর্টের কাছে আপত্তি জানিয়েছিল ইডি। তাদের প্রস্তাব, সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব ক’টা মামলা এক ছাতার তলায় আনা হোক, তা হলে বিভিন্ন পক্ষকে এখানে-ওখানে নিত্য ছোটাছুটি করতে হবে না। হাইকোর্ট ইডি-র প্রস্তাবের যৌক্তিকতা মেনে নিয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ও তার ‘ছায়াসঙ্গী’ দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে চাইলেই জেরা করতে পারবে ইডি। ইডি-র কৌঁসুলির অভিযোগ ছিল, বিধাননগর থানা সুদীপ্ত-দেবযানীকে জেরার সুযোগ ইডি’র অফিসারদের দিচ্ছে না। বস্তুত রাজ্যের গড়া স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) সারদা-তদন্তে ইডি-কে কোনও রকম সাহায্য করছে না বলে হাইকোর্টের কাছে অভিযোগ পেশ করেছিলেন ইডি’র আইনজীবী সোমনাথ বসু। যার পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, সারদা-তদন্তে ইডি যাতে পুলিশের তরফে যাবতীয় সহযোগিতা পায়, রাজ্য প্রশাসনকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
সারদা-কাণ্ডে সিবিআই-তদন্তের আর্জি জানিয়ে বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চে এই মামলার সওয়াল শুরু করেছিলেন আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পরে তিনি মামলাটি ডিভিশন বেঞ্চ থেকে তুলে নিতে চান। বিচারপতি জানাননি, মামলাটি তিনি প্রত্যাহার করবেন কি না। সুব্রতবাবু অবশ্য বলছেন, ডিভিশন বেঞ্চের এ দিনের রায়ে ইডি-র হাতে অনেকখানি ক্ষমতা এল। ফলে সারদা-তদন্তে কিছু স্বচ্ছতা আসার সুযোগ রইল বলে মনে করছেন সুব্রতবাবু। |