ধর্ষিতার মৃত্যু-জট কাটেনি দময়ন্তীর রিপোর্টে
পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ কাণ্ডে সফল তদন্তের পরে মধ্যমগ্রামের গণধর্ষণ ও ধর্ষিতার মৃত্যু নিয়েও তাঁকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু মধ্যমগ্রামের গণধর্ষিতা কিশোরীর মৃত্যুর কারণ কী, সোমবার হাইকোর্টে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে জমা দেওয়া রিপোর্টে তা জানাতে পারলেন না ডিআইজি (সিআইডি) দময়ন্তী সেন।
কেন এমন হল, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সরকারি জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে জানান, ওই কিশোরীর আগুনে পুড়ে যাওয়ার বিষয়ে তদন্তের সময় যা কিছু পাওয়া গিয়েছে, সবই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ফরেন্সিক দফতরে। এখনও ফরেন্সিক বিভাগের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তাই এই তদন্তে আরও কিছুটা দেরি হবে।
ওই কিশোরী ২৫ অক্টোবর মধ্যমগ্রামে প্রথম বার গণধর্ষিত হয়। থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরে ২৮ অক্টোবর দ্বিতীয় বার ধর্ষিত হতে হয় তাকে। তার পরে মধ্যমগ্রাম ছেড়ে সে এবং তার পরিবার এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় চলে আসে। সেখানে কিশোরীটি নিজের ঘরে আগুনে পুড়ে যায়। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩১ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে কিশোরী পুলিশকে জানায়, সে মোটেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেনি। তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ধর্ষিতার ট্যাক্সিচালক বাবা মেয়ের মৃত্যুর যথাযথ তদন্তের আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। হাইকোর্ট সেই তদন্তের দায়িত্ব দেয় ডিআইজি (সিআইডি) দময়ন্তীদেবীকে।
ধর্ষিত ও মৃত কিশোরীর বাবা মামলার আবেদনে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। জানুয়ারির প্রথমার্ধে রাজ্য সরকারের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় হাইকোর্টে আবেদন জানান, ওই তদন্তভার দেওয়া হোক দময়ন্তীদেবীকেই। মৃতার বাবার আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যও সেই প্রস্তাব সমর্থন করেন। আর্জি মঞ্জুর করেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। তিনি তাঁর নির্দেশে জানান, হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে দময়ন্তীদেবীর নেতৃত্বাধীন একটি দল ওই গণধর্ষণ ও নির্যাতিতার পুড়ে মৃত্যুর তদন্ত করবে। তদন্ত-দলে কে কে থাকবেন, সেটা ডিআইজি (সিআইডি)-ই ঠিক করবেন, রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে কোনও ভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। তদন্ত-দলের নেত্রী রিপোর্ট দেবেন কোর্টে।
কিশোরীর মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামেন দময়ন্তীদেবী। মেয়েটি যে-ঘরে অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল, তার দরজার আস্ত দু’টো পাল্লাই খুলে নিয়ে আসেন তিনি। কারণ, জবানবন্দিতে কিশোরী বলেছিল, রতন ও মিন্টা নামে দুই যুবক তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি আটকে দেয়। এই জবানবন্দি এবং মেয়েটির মায়ের বক্তব্যের মধ্যে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। নির্যাতিতার মা প্রথমে বলেছিলেন, তাঁর মেয়ে যখন জ্বলছিল, ঘরের দরজা তখন ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। তিনি অন্য কয়েক জনের সাহায্যে বাইরে থেকে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে মেয়েকে উদ্ধার করেন। পরে অবশ্য এই বক্তব্য থেকে সরে এসে মেয়েটির মা জানান, ঘটনার সময় তিনি বিষয়টি ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। দরজা বাইরে থেকেও বন্ধ থাকতে পারে। নিগৃহীতা এবং তাঁর মেয়ের দু’রকম বক্তব্যে ধন্দে পড়েন তদন্তকারীরা। সেই জন্যই দরজা-রহস্য ভেদ করতে চেয়েছিলেন ডিআইজি (সিআইডি)। কিন্তু তাঁর এ দিনের রিপোর্টে মেয়েটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানানো হয়নি।
মৃতার বাবার আইনজীবী বিকাশবাবু এ দিন আদালতে বলেন, প্রথম বার ধর্ষণের পরে পুলিশ যদি মেয়েটিকে নিরাপত্তা দিত, তা হলে দ্বিতীয় বার ধর্ষণের ঘটনা ঘটত না। তাই পুলিশ দু’বার এফআইআরের পরিপ্রেক্ষিতে কী তদন্ত করেছে, তা দেখা প্রয়োজন। সেই কারণেই ওই মামলার কেস ডায়েরি আবার আদালতে জমা দেওয়া দরকার।
বিচারপতি দত্ত জানিয়ে দেন, পরের শুনানির দিন (২৪ ফেব্রুয়ারি) সংশ্লিষ্ট দু’টি মামলারই কেস ডায়েরি হাইকোর্টে জমা দিতে হবে।
সরকার পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, ওই দু’টি মামলার চার্জশিট তো পেশ করা হয়েছে। তাই নতুন করে কেস ডায়েরি আনার প্রয়োজন কী?
বিচারপতি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, বিচারের স্বার্থেই পরবর্তী শুনানির দিন ওই দু’টি কেস ডায়েরি আদালতে জমা দিতে হবে। ২৪ তারিখে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্টও পেশ করতে হবে ডিআইজি দময়ন্তীদেবীকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.