পিছোল মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, বিতর্কেই শুরু হল অধিবেশন
বিতর্ক দিয়েই শুরু হল বাজেট অধিবেশন!
প্রথম বিতর্ক, বিধানসভা অধিবেশনের শুরুতে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের উপস্থিতিতে জাতীয় সঙ্গীত বেজে যাওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রীর সভা কক্ষে ঢোকা নিয়ে। দ্বিতীয় বিতর্ক, রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কের শেষে মুখ্যমন্ত্রীর জবাবি বক্তৃতার নির্ধারিত সূচি পিছিয়ে রাজ্য বাজেটের সঙ্গে একই দিনে ফেলা নিয়ে!
রাজ্য বাজেট পেশ এবং মুখ্যমন্ত্রীর জবাবি বক্তৃতা একই দিনে, এটা বিধানসভার সচরাচর রীতি নয়। মুখ্যমন্ত্রীর জবাব দিয়ে বিতর্ক-পর্ব মিটে গেলে আলাদা দিনে শুধু বাজেট পেশই দস্তুর। এই দুই ঘটনা নিয়েই সোমবার সরব হয়েছে বিরোধীরা।
নির্ঘণ্ট মেনে বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনে বিকাল তিনটেয় বক্তৃতা শুরু করার কথা ছিল রাজ্যপালের। পুলিশ ব্যান্ডের আবহ সঙ্গীতে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন রাজ্যপালকে নিয়ে বিধানসভায় ঢুকে যাওয়ার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর আসনে ছিলেন না। রাজ্যপালের উপস্থিতিতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন হয়ে যাওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে বিরোধী বেঞ্চে গুঞ্জনও শুরু হয়েছিল। তখনই সভায় ঢুকে রাজ্যপালের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই দেরিতে আসা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। যার জবাবে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পাল্টা বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় নিজের ঘরে ছিলেন। রাজ্যপালের আসার কথা বিকাল তিনটেয়। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, রাজ্যপাল ঢুকে পড়েছিলেন ২টো ৫৬ মিনিটে!”
বিধানসভায় রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর সভায় পৌঁছতে দেরি হলেও নিজের বক্তৃতায় রাজ্যপাল কিন্তু তাঁর ভূয়সী প্রশংসাই করেছেন। নেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনও উদ্বেগের কথাও। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। তার পাশাপাশিই বিতর্ক বেধেছে মুখ্যমন্ত্রীর জবাব দেওয়ার দিনক্ষণ ঠিক করা নিয়ে। আগে ঠিক ছিল, মুখ্যমন্ত্রীর জবাব হবে ১৪ তারিখ। কিন্তু সেই দিন তাঁর কলকাতার বাইরে থাকার কথা। শেষ পর্যন্ত বিধানসভার কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ দিন ঠিক হয়, আগামী সোমবার অর্থমন্ত্রীর বাজেট পেশের আগে বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাজ্যপালের বক্তৃতার উপরে মুখ্যমন্ত্রী জবাব দেবেন। বিরোধীদের বক্তব্য, তখনই তারা আপত্তি জানালে বলা হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু বিধানসভায় সেই ১৭ তারিখের সূচিই ঘোষণা করে দেওয়ায় সংশোধনী এনে ভোটাভুটি চান সিপিআইয়ের বিধায়ক আনন্দ মণ্ডল। স্পিকার তাতে মতও দেন। নিজের আসনে বসা মুখ্যমন্ত্রী তখন দৃশ্যতই ঈষৎ ‘ক্ষুণ্ণ’। ভোটাভুটিতে অবশ্য বিরোধীদের দাবি খারিজ হয়ে গিয়েছে।
রাজ্যপালের ভাষণ নিয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার বাতিল হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর-পর্বও। মুখ্যমন্ত্রীর জবাব এড়াতেই কার্যসূচি এমন ভাবে সাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে সভার পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ৮টি দফতর। কিন্তু তিনি আড়াই বছরে আড়াইটি প্রশ্নেরও জবাব দেননি! শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় আসবেন না। আমাদের কথা না শুনেই সোমবার সকালে একেবারে রাজ্যপালের ভাষণের উপরে আলোচনার জবাব দেবেন! এটা কেমন ব্যাপার?” জবাবে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু বলেন, “প্রশ্ন তোলার আগে ওঁদের লজ্জা পাওয়া উচিত! প্রত্যেক দফতরের কাজ নিয়ে বিধায়কদের বই দেওয়া হয়েছে। ওঁদের কোনও প্রশ্ন থাকলে বিধানসভায় বলুন। জবাব পাবেন।” রাজ্যপালের ভাষণের উপরে আলোচনায় বিরোধীদের বেশি সময় দিতেই শুক্রবার প্রশ্নোত্তর বাদ দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
রাজ্যপালের বক্তৃতায় এ দিন অন্তত ১০ বার আলাদা করে উল্লিখিত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কথা! বেশ কিছু প্রকল্পের আলোচনা প্রসঙ্গে রাজ্যপাল কোথাও বলেছেন, ‘এই কর্মপ্রকল্পটি আমার মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত’। কোথাও বলেছেন, ‘সবক’টি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অবদান রয়েছে’। একপেশে ভাবে রাজ্য সরকারের প্রশংসা থাকলেও রাজ্যপালের ভাষণে রাজ্যে নারী নিগ্রহ বা টেট-কেলেঙ্কারি নিয়ে উল্লেখ নেই বলে সরব হয়েছে কংগ্রেস। প্রধান বিরোধী দল বামফ্রন্ট প্রকাশ্যে রাজ্যপালের বক্তৃতার কোনও সমালোচনা করেনি। বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু বলেন, “মন্ত্রিসভা যা লিখে দেয়, রাজ্যপাল তা-ই পড়েন। সরকার উল্টোপাল্টা যা লিখেছে, রাজ্যপাল পড়েছেন। ওঁকে কিছু বলার
নেই। সরকারকে যা বলার, বিধানসভায় বলব।” তবে সরকারের অনুমোদনের প্রশ্ন উল্লেখ করেও কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেছেন, “জনবিরোধী, অত্যাচারী সরকারের একটি মিথ্যা রাজনৈতিক দলিল রাজ্যপালের এই ভাষণ!”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, মেয়েদের স্কুলে আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা বা রাজ্যের প্রত্যেক অংশে সারা দিনরাত বিদ্যুতের ব্যবস্থা নতুন এই সরকারের সাফল্য বলে তুলে ধরেছেন রাজ্যপাল। এই দু’টি বিষয়েই ব্রিগেড সমাবেশ থেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.