দলকে চাঙ্গা করতেই এ বার দায়িত্বে অধীর
লোকসভা ভোটের মুখে প্রদীপ ভট্টাচার্যকে সরিয়ে অধীর চৌধুরীকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে নিয়োগ করলেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। যে পরিবর্তন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দলের একাংশ বলছেন, তৃণমূলের সঙ্গে যে জোট করা হবে না, ঘোষিত ভাবে মমতা-বিরোধী অধীরকে দলের দায়িত্ব দিয়ে সেটাই বুঝিয়ে দিলেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। অন্য একটি অংশ আবার বলছে, জোটের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল, এমন ভাবে বিষয়টি দেখা উচিত নয়। বরং এটা বলা ভাল, জোট যে তৃণমূলের কাছে আত্মসমর্পণ করে হবে না, সেটাই বোঝালেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দর কষাকষির লক্ষ্যে তাঁরা এগিয়ে দিলেন কড়া বাজি অধীরকে।
রাজ্যে দলীয় সংগঠন বাঁচাতেও সভাপতি বদল জরুরি ছিল বলে কংগ্রেস নেতাদের অনেকের মত। তাঁদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই যে ভাবে একের পর এক জনপ্রতিনিধি দল ছেড়ে তৃণমূলে নাম লেখাতে শুরু করেছেন, তাতে লাগাম দেওয়ার বিশেষ চেষ্টা বর্তমান নেতৃত্ব করেননি। এমনকী, সদ্যসমাপ্ত রাজ্যসভার ভোটেও নিজের ঘরে ভাঙন ঠেকাতে পারেনি কংগ্রেস। দল যে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করেছিল, তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দেন দুই কংগ্রেস বিধায়ক। তা ছাড়া, দলকে আন্দোলনমুখী করে কর্মীদের চাঙ্গা করতেও ব্যর্থ হয়েছেন প্রদেশ নেতৃত্ব। সব মিলিয়ে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের মনোবল ক্রমশ তলানিতে পৌঁছচ্ছিল।
প্রদেশ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার আজ সরস মন্তব্য, “প্রদীপ ভট্টাচার্যকে কেন এত দিন প্রদেশ সভাপতি পদে রাখা হয়েছিল, সেটা বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মতোই রহস্যময়! আমরা তো ভাবতেই পারিনি যে লোকসভা ভোটের আগে সভাপতি বদল হবে।”
রাজ্য জুড়ে প্রবল মমতা-ঝড়েও মুর্শিদাবাদে একের পর এক ভোটে নিজের দুর্গ অটুট রাখা অধীর দলের কান্ডারি হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্য কংগ্রেসে খুশির হাওয়া। বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন, “কংগ্রেস হাইকম্যান্ড সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তে দলীয় কর্মীরা উজ্জীবিত হবেন।”
তৃণমূলের সঙ্গে জোট-বিরোধী বার্তাটাই আজ অন্তত প্রকাশ্যে নতুন করে দিতে চেয়েছেন উজ্জীবিত প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। সদ্য তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যাওয়া সোমেন মিত্র বলেন, “এখনও যাঁরা জোট নিয়ে দোনামনা করছেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তাঁরা তা আর করবেন না। কারণ, এআইসিসি অধীরকে সভাপতি করে বুঝিয়ে দিয়েছে, তারাও জোট চায় না।”
অধীর নিজে অবশ্য এই প্রশ্নে সাবধানী। তাঁর কথায়, “চিরকালই আমি জোট-বিরোধী, এ কথা ঠিক নয়। আমি সম্মান-মর্যাদার সঙ্গে কংগ্রেস দলটা করতে চাই। জোটের ব্যাপারে সর্বদাই হাইকম্যান্ড স্তরে সিদ্ধান্ত হয়। আমার অগ্রাধিকার হবে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে বাঁচানো।”
অধীরের সঙ্গে মমতার সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘ। সেই ১৯৯৬ সালে কংগ্রেসে থাকাকালীনই অধীরকে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করার প্রতিবাদ করেছিলেন মমতা। হুমকি দিয়েছিলেন আত্মহত্যার। তার পর গোটা রাজ্যে মমতার উত্থান হলেও মুর্শিদাবাদে নিজের গড়ে তাঁকে দাঁত ফোটাতে দেননি অধীর। মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসকে ভাঙিয়ে অধীরকে দুর্বল করার
চেষ্টা কম করেননি মমতা। যেমন একদা অধীর-ঘনিষ্ঠ হুমায়ুন কবীরকে কংগ্রেস থেকে টেনে এনে মন্ত্রী করেছেন। কিন্তু উপনির্বাচনে জিততে না পেরে মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে হুমায়ুনকে।
পঞ্চায়েত ভোটে অন্যত্র ঘাসফুল ফুটলেও মুর্শিদাবাদ অধরাই থেকে গিয়েছে মমতার। সেখানে জেলা পরিষদ দখল করেছে কংগ্রেস। বহরমপুর পুরসভা ভোটের মুখে অধীরের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে খুনের মামলা। যার জেরে দীর্ঘদিন নিজের শহরে পা রাখতে পারেননি অধীর। শেষ পর্যন্ত আগাম জামিন নিয়ে এসেছেন প্রচারের একেবারে শেষ পর্বে। এবং দখলে রেখেছেন পুরসভা।
এ-হেন অধীর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পরেও জোটের জানলা পুরোপুরি বন্ধ বন্ধ হল না, এ কথা বলার ব্যাখ্যা কী? কংগ্রেস এবং তৃণমূল দুই শিবিরের নেতারাই বলছেন, আসলে দু’দলের বর্তমান সাংসদরাই জোটের দিকে তাকিয়ে। কারণ, জোট না হলে কংগ্রেসের ৬ সাংসদের সবার জয় যেমন অনিশ্চিত, তেমনই স্বস্তিতে থাকবেন না কিছু তৃণমূল সাংসদও।
এই পরিস্থিতির দিকে তাকিয়েই সম্ভবত কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব কিছুটা কৌশল বদল করলেন বলে মত, রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের বড় অংশের। তাঁদের বক্তব্য, এত দিন প্রদীপ ভট্টাচার্যকে সভাপতি পদে রেখে আপসের মাধ্যমে জোটের আশা করছিলেন কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। এ বার অধীরকে এনে বোঝালেন, তাঁরা দর কষাকষি করতে চান।
কেন এই কৌশল পরিবর্তন? প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা বলছেন, জোট না-হলে কংগ্রেসের যতটা ঝুঁকি, তৃণমূলের যে তার চেয়ে কম নয়, সে খোঁজ বিলক্ষণ রাখেন রাহুল। অধীর নিজেই এ দিন বলেন, “এমন তো নয় যে শুধু পশ্চিমবঙ্গের আসনের উপরেই কংগ্রেস নির্ভরশীল। সেই উৎকণ্ঠা তৃণমূল বা সিপিএমের থাকতে পারে, কংগ্রেসের নেই।” আর সেই কারণেই ধাপে ধাপে দর বাড়াচ্ছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। প্রথমে সোমেন মিত্রকে ঢাকঢোল পিটিয়ে কংগ্রেসে সামিল করেছেন। তার পর তাঁকে প্রার্থী করার কথা ঘোষণা করেছেন উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে। আর এ বার বিগ্রেডে সিপিএম শক্তি প্রদর্শন করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অধীরকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে বসিয়ে মমতার উপরে চাপ বাড়ালেন রাহুল গাঁধী।
তৃণমূল নেতৃত্ব অধীর-অভিষেককে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “উনি (অধীর) দলের সাইনবোর্ডে পরিণত হওয়া আটকাতে পারেন কিনা, সেটাই আগে দেখুন!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.