কলকাতার দিকে গঙ্গার পূর্ব পাড় সেজে উঠেছিল আগেই। এ বার সে ভাবেই সাজানো হবে হাওড়ার দিকে গঙ্গার পশ্চিম পাড়কেও।
বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় এই সৌন্দর্যায়নের কাজ হবে বাঁধাঘাট থেকে নাজিরগঞ্জ পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার নদীতীর বরাবর। এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে মূলত কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। আর ওই সংস্থাকে সাহায্য করবে হাওড়া পুরসভা। সম্প্রতি নবান্নে মুখ্যসচিবের ঘরে হওয়া একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর।
কলকাতার পাশাপাশি হাওড়ার দিকে গঙ্গার তীর সাজিয়ে তোলার ব্যাপারে প্রথম উদ্যোগী হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উদ্যোগেই তেলকল ঘাট থেকে রামকৃষ্ণপুর ঘাট পর্যন্ত গঙ্গার তীর ত্রিফলা আলো দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। সেই সঙ্গে পাল্টে ফেলা হয় গঙ্গাপাড়ের রেলিংও। সকাল-সন্ধ্যার ভ্রমণার্থীদের জন্য চওড়া করা হয় ফুটপাথ। আবার নদীতীরে বসে গঙ্গার সৌন্দর্য দেখার জন্য বসার জায়গা বাঁধিয়ে দেওয়া হয় শ্বেতপাথর দিয়ে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার ফের মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় হাওড়া পুরসভার এলাকাধীন গঙ্গাতীরের বাকি অংশ সাজাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি নবান্নে মুখ্যসচিবের ঘরে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক হয়। হাওড়া পুরসভার তরফে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুর-কমিশনার নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।
সোমবার এ ব্যাপারে পুর-কমিশনার বলেন, “বৈঠকে ঠিক হয়েছে, উত্তরে বাঁধাঘাট থেকে দক্ষিণে নাজিরগঞ্জ পর্যন্ত হাওড়া পুরসভা এলাকার যে ১৩ কিলোমিটার অংশে গঙ্গার তীর রয়েছে, তা সাজানো হবে। তৈরি হবে মিলেনিয়াম পার্কের মতো একাধিক উদ্যান, মেরিন ড্রাইভের মতো রাস্তাও। এই ১৩ কিলোমিটার অংশ জুড়েই থাকবে ত্রিফলা আলোর ব্যবস্থা এবং প্রাতর্ভ্রমণ ও সান্ধ্যকালীন ভ্রমণের জন্য চওড়া ফুটপাথ। আর সেখানে থাকবে আরামদায়ক বসার জায়গাও।” পুর-কমিশনার জানিয়েছেন, গঙ্গার তীরের ওই জায়গা কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের। যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তাই সে বিষয়ে বন্দর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে রাজ্য সরকার।
এ বারের পুর-নির্বাচনে তৃণমূলের প্রতিশ্রুতি ছিল “ক্লিন হাওড়া, গ্রিন হাওড়া”। নির্বাচনে বাম বোর্ডকে হারিয়ে হাওড়া পুরবোর্ড দখল করার পরেই সেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করার লক্ষ্যে কোমর বেঁধে নেমে পড়ে নতুন বোর্ড। এর মধ্যে রাজ্য সরকার উন্নয়নের জন্য এককালীন ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করায় দু’মাসের মধ্যে শুরু হয়ে যায় রাস্তাঘাট সংস্কার ও বড় রাস্তাগুলিতে ত্রিফলা আলো লাগানোর কাজ। এর পরেই গঙ্গার তীর সৌন্দর্যায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায় হাওড়ার পরিচিত ছবিটা যে অনেকটাই পাল্টে যাবে তা মেনে নিয়েছেন মেয়র রথীন চক্রবর্তীও।
রথীনবাবু বলেন, “হাওড়ার দিকে গঙ্গার তীর সাজাতে বিশ্বব্যাঙ্ক এগিয়ে আসায় খুবই ভাল হয়েছে। হাওড়ার ছবিটা দ্রুত পাল্টে যাবে। আমরা এটাই চেয়েছিলাম।” মেয়র জানান, গঙ্গার তীর সাজানোর ব্যাপারে সমস্ত সাহায্য করছে কেএমডিএ। ওই সংস্থাই এই প্রকল্পের একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরির দায়িত্ব নিয়েছে। রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরই আশা করছি কাজ শুরু হয়ে যাবে। মেয়র জানান, হাওড়ার বর্জ্য ফেলার জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিনের একটা সমস্যা রয়েছে। এ ব্যাপারে একটি ব্রিটিশ সংস্থা সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সে বিষয়েও কথা চলছে। |