শেষ পর্যন্ত নড়েচড়ে বসল পুলিশ-প্রশাসন। এলাকাবাসীর দিনের পর দিন বিক্ষোভ-আন্দোলন সত্ত্বেও বনগাঁ-চাকদর রোডের দু’পাশে বেআইনি ট্রাক-লরি পার্কিং বন্ধ করা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে তৎপর হতে দেখা যায়নি। কিন্তু রবিবার বিকেলে সঞ্জয় দাসের মৃত্যুতে বাসিন্দারা যে ভাবে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাতে রাস্তার দু’পাশে বেআইনি পার্কিং বন্ধ করতে উদ্যোগী হল পুলিশ। বনগাঁ থানার আইসি চন্দ্রেশেখর দাস সোমবার বলেন, “ইতিমধ্যেই ওই সড়কে বেআইনি ভাবে পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড় করানোর জন্য ৮টি ট্রাক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এই অভিযান চলবে।”
প্রসঙ্গত, বনগাঁ-চাকদহ সড়কের দু’পাশ জুড়ে পভ্যবোঝাই ট্রাক পার্কিংয়ের জন্য নিত্য দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন এলাকার মানুষ। প্রতিবার দুর্ঘটনা ঘটলেই পুলিশ-প্রশাসনের তরফে বেআইনি পার্কিং বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা আর বাস্তবায়িত হত না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে চলছিলই। তবে রবিবারের দুর্ঘটনায় সঞ্জয় দাস নামে এক বাইক আরোহীর মৃত্যুতে আর ধৈর্য রাখতে পারেননি বাসিন্দারা। চোখের সামনে তাঁকে ট্রাক রাপা পড়তে দেখে রাস্তায় মেনে পড়েন তাঁরা। পুলিশ গিয়ে কোনওরকমে পরিস্থিতি সামাল দেয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষোভ যে কমেনি , তার প্রমাণ পাওয়া যায় রাতে। বেশ কিছু মানূুষ রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি ট্রাক ভাঙচুর করে। সমস্যা মেটাতে সোমবার বৈঠক করেন বনগাঁর মহকুমাশাসক রূপান্তর সেনগুপ্ত। সেখানে ছিলেন পুরসভা ও পেট্রাপোল বন্দরে থাকা সেন্ট্রাল ওয়্যার হাউস কর্পোরেশনের প্রতিনিধিরা। |
রূপান্তরবাবু বলেন, “যে ভাবে দুর্ঘটনা বাড়ছে তাতে বনগাঁ-চাকদহ রোডের দু’পাশেকোনও পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়াতে দেওয়া যাবে না।” পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্য বলেন, “ট্রাকমালিকরা কোথায় ট্রাক রাখবেন সেটা তাঁদের লবিষয়। তবে ওই সড়কের দু’পাশে আর ট্রাক দাংড়াতে দেওয়া হবে না। সড়কের ধারে থাকা ইমারতীর দোকানদাররা যদি তাঁদের জিনিসপত্র সড়কের ধারে রাখেন তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শুল্ক দফতরের ডেপুটি কমিশনার শুভেন দাওশগুপ্ত বলেন, “ভিন রাজ্য থেকে পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে আসার সময় পার্কিয়ের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আগে জেনে নেওয়া উচিত। তাহলে আর সড়কের দু’পাশে এ ভাবে ট্রাক দাঁড় করানোর প্রয়োজন উঠবে না।”
তবে সড়কের দু’পাশ থেকে ট্রাক সরানোর জন্য পুলিশ-প্রশাসনের উদ্যোগেও স্বস্তি পাচ্ছেন না এলাকা মানুষ। কারণ তাঁদের পূর্ব অভিজ্ঞতা। তাঁদের কথায়, এর আগেও পুলিশ-প্রশাসন তৎপরতা দেখিয়েছিল। কিন্তু তারপর ফের যে কে সেই। সোমবার দেখা গেল সড়কের দু’পাশে কোনও পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে নেই। শহরের বাইরে গোপানগরের দিকে কিছু ট্রাক একধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ দিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইক-প্রচারের মাধ্যমেও রাস্তার দু’পাশে পার্কিং না করতে লরিচালকদের সতর্ক করা হয়। মিলিটারি রোডে দেখা গেল কোনও ট্রাক রাস্তার ধারে দাঁড়ানোর উপক্রম করলেই সে দিকে তেড়ে যাচ্ছেন বাসিন্দারা।
তবে শেষ পর্যন্ত বনগাঁ-চাকদহ রোডের দু’পাশ থেকে বরাবরের মতো বেআইনি পার্কিং পুলিশ-প্রশাসন বন্ধ করে সাধারণ মানুষ ও যানচালকদের স্বস্তি দিতে পারে কিনা সেটাই দেখার। |