আপ জঙ্গিপুর প্যাসেঞ্জারটি স্টেশন পেরোচ্ছিল দ্রুত বেগে। আচমকাই রেললাইন থেকে ছিটকে এল আড়াই ফুটের একটি ইস্পাতের শলা। গুলির মতো এসে তা আছড়ে পড়ল প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা মোটবাহক আনারুল মোল্লার (৩০) কপালে। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
সোমবার সকাল সওয়া ৬টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে আগরপাড়া স্টেশনে। পুলিশ সূত্রের খবর, আনারুলের বাড়ি আগরপাড়া স্টেশনের পাশে ঝুপড়িতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রোজই ট্রেন থেকে মাল নামাতে ভোরে স্টেশনে চলে আসতেন তিনি। প্রাথমিক তদন্তে রেলপুলিশ জানিয়েছে, প্ল্যাটফর্মের বৈদ্যুতিক স্তম্ভের সঙ্গে যে ইস্পাতের টুকরোটি দিয়ে লাইনের সঙ্গে সংযোগ করানো হয়, সেটিই ট্রেনের ধাক্কায় ভেঙে গিয়ে ছিটকে ওই মোটবাহকের মাথায় লাগে। তদন্তকারীরা এই ঘটনার জন্য রেলের রক্ষণাবেক্ষণের অব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন। কী করে এই ঘটনা ঘটল, খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন শিয়ালদহের রেলপুলিশ সুপার উৎপলকুমার নস্কর।
ট্রেন চলার সময়ে রেলের লাইন ভেঙে বা ট্রেনের যন্ত্রাংশ খুলে এ ভাবে মৃত্যু বা আহত হওয়ার ঘটনা এর আগেও বার কয়েক হয়েছে। রেল সূত্রে খবর, বছর খানেক আগে এক বার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল দক্ষিণ-পূর্ব রেলের টিকিয়াপাড়ায়। সেখানে ট্রেনের তলায় থাকা একটি হোসপাইপ খুলে ছিটকে গিয়ে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো কয়েক জন যাত্রীর গায়ে লাগে। এই ঘটনায় কয়েক জন জখম হয়েছিলেন। রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটিতে সম্প্রতি দমদমের কাছে লাইন ভেঙে দুর্ঘটনায় পড়েছিল একটি লোকাল ট্রেন। ওই ঘটনায় অবশ্য কারও মৃত্যু হয়নি।
আগরপাড়ার ঘটনায় অবশ্য রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটির কথা স্বীকার করতে চাননি রেলের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, এটি নিছকই একটি দুর্ঘটনা। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্রের কথায়, “ঘটনাটি দুঃখজনক। কেন এমন হল, তা খতিয়ে দেখা হবে।”
রেলপুলিশ সূত্রে খবর, জঙ্গিপুর প্যাসেঞ্জারটি আগরপাড়া স্টেশনে থামে না। তাই ট্রেনটির গতি ছিল বেশি। সকাল সওয়া ৬টা নাগাদ ট্রেনটি তিন নম্বর লাইন দিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার পরে তিন নম্বর লাইনে ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে রেললাইনের ওই অংশ মেরামত করার পরে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয়। |
স্টেশনে ওই সময়ে থাকা যাত্রীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে প্ল্যাটফর্মে যাত্রী সংখ্যা কম ছিল। আনারুলের গায়ে লেগে ইস্পাতের টুকরোটি ঘুরতে ঘুরতে আরও অনেকটা দূরে গিয়ে আছড়ে পড়ে। প্রচণ্ড শব্দে সকলেই হতচকিত হয়ে যান। অনেকে দৌড়ে সরে যান।
আনারুলের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবায়। আগরপাড়া স্টেশনের পাশের একটি ঝুপড়িতে মা মণিজান বিবি, স্ত্রী জাহেরা বিবি, এক মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন তিনি। মেয়ের বয়স ৬ বছর। বড় ছেলে বছর তিনেকের, ছোটটির বয়স বছর খানেক। এই ঘটনার পরে আনিরুলের মা ও স্ত্রী হাসপাতালে চলে যাওয়ায় আশপাশের বাসিন্দারাই এ দিন আনারুলের ছেলেমেয়েদের আগলে রাখেন। পড়শিদের চিন্তা, বাড়ির একমাত্র রোজগেরে আনিরুলের মৃত্যু হওয়ায় পরিবারটি অথৈ জলে ভেসে গেল। রেলকর্তাদের কাছে এই মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও তুলেছেন তাঁরা। রেলকর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, রেলের দোষে কোনও ব্যক্তির মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া নজির রয়েছে। আনারুলের পরিবারকে সে রকম কিছু দেওয়া যায় কি না, তা ভেবে দেখা হচ্ছে। |