আড়ালে আবডালে কথাটা কানে যে আসেনি এমন নয়। এ দিন দিল্লি থেকে ফোন পেয়েই বসে পড়েছিলেন টিভির সামনে। দেওয়াল জুড়ে এলইডি টিভির দিকে তাকিয়ে কাকে যেন ডেকে উঠলেন “এই দেখে যা....।”
ব্যস্ততার শুরুটা এ ভাবেই। মিনিটে মিনিটে বেজে উঠছে মোবাইল। একটু বিরতিতে ঝলতে উঠছে স্ক্রিনম্যাসেজ। তার মাঝেই আবেগ আড়াল করে অধীর-জায়া অর্পিতা বলছেন, “শুধু আমার নয়, আজ বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষের আনন্দের দিন। মানুষের ভালবাসা ও আশীর্বাদে এটা সম্ভব হয়েছে। আমি ভীষণ খুশি। কেননা, তাঁর যে লড়াই, পাশে থেকে সেই লড়াই তো আমিও লড়েছি।”
গোরাবাজার শহীদ সূর্য সেন রোডের চৌধুরী ভিলার দোতলার শোওয়ার ঘরের দেওয়ালে ঝুলছে এলইডি। সোমবার দুপুরের খাবারের পরে খবর শোনার জন্য টিভি খুলতেই পর্দায় ভেসে ওঠে নতুন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে অধীর চৌধুরীর নাম। বাতিল হয়ে যায় দুপুরের ঘুম। খুশিতে উদ্বেল হয়ে ওঠে তাঁর মুখ। ওই খবর পেয়েই তাঁর বাড়িতে ছুটে আসেন ভাই অরিত মজুমদার। শুরু হয়ে যায় মিষ্টিমুখ। |
খবরে নজর। বহরমপুরে অধীর চৌধুরীর বাড়িতে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
তত ক্ষণে অর্পিতাদেবী ফিরে যান শুরুর দিনগুলিতে। তাঁর কথায়, “১৯৮৬ সালে আমার এক মাসতুতো দিদির বিয়ে হয়েছিল। ওই বিয়ে বাড়িতে গিয়ে অধীরকে প্রথম দেখি। তার আগে তাঁর নাম শুনেছিলাম। কিন্তু চোখে দেখিনি। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়। বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরে আসার পরে সে দিন রাতেই অধীর তাঁর এক কাছের বন্ধুর মাধ্যমে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান।” প্রস্তাব পেয়ে একটু অবাক যে হয়েছিলেন তা-ও আড়াল করছেন না। তিনি বলেন, “কেননা, বাবা যদি বিয়েতে মত না দেন, তাহলে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। পরে ওই ঘটনার বছর খানেকের মধ্যেই আমাদের বিয়ে হয়।”
প্রায় তিন দশক পরেও অর্পিতাদেবীর মনে হয়, “ওঁর চরিত্রের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুণ হলো, অসম্ভব মেধাবী। বিয়ের পরে আমার বড় ননদের কাছে শুনেছি, উনি এক বার জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে ভ্যানরিকশা ভর্তি করে বই ও গিটার নিয়ে এসেছিলেন। উনি এক সময়ে ভাল গিটার বাজাতেন। দীর্ঘ দিন চর্চা না থাকায় হয়তো ভুলেই গিয়েছেন। তবে পড়াশোনার অভ্যাস এখনও রয়ে গিয়েছে।” চৌধুরী ভিলার উত্তর-পশ্চিম কোনের কম্পিউটার রুমঅধীরের প্রিয় জায়গা। ওই ঘরে বাংলা-ইংরেজি বইয়ের সম্ভার। |