অধীর চৌধুরী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার খবর রটতেই যেন বসন্ত ফিরেছে বহরমপুরে।
সোমবার সকালে খবর ছড়িয়ে পড়তেই কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা দলে দলে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে জড়ো হতে শুরু করেন। আসে বাদ্যি, গাড়ি বোঝাই হয়ে আসে সবুজ আবিরের প্যাকেট। নিমেষে শুধু জেলা কার্যালয় নয়, বহরমপুরের আকাশের রং-ই বদলে যায় যেন। অধীর চৌধুরী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার খুশিতে এলইডি আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়। |
দুপুর তখন দেড়টা। ডগর বাদ্য সহযোগে সবুজ আবির মেখে মিছিল বের হয় জেলা কার্যালয় থেকে। অধীর চৌধুরীর বিশাল ব্যানার নিয়ে মিছিল পৌঁছায় জেলা প্রশাসনিক ভবনের উল্টো দিকে গাঁধী মূর্তির সামনে। গাঁধীর মূর্তিতে মালা পরিয়ে দেন জেলা কংগ্রেস নেতারা। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হয়ে মরা গাঙে বান আনবেন অধীর চৌধুরী। এত বড় একটা খুশির খবর আমরা গাঁধীর মূর্তিতে মালা পরিয়ে উদযাপন করেছি।” ফাটানো হয় পটকা। শুরু হয় মিষ্টিমুখ।
অধীর চৌধুরীর আগে মুর্শিদাবাদের ভূমিপুত্র রেজিউল করিম এবং আবদুস সাত্তার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হন। ১৯৬৫ সালে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন রেজাউল করিম এবং ১৯৭১ সালে আবদুস সাত্তার। এ দিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে অধীরকে এআইসিসি মনোনীত করায় উজ্জীবিত কংগ্রেস দল। বহরমপুরের পাশাপাশি লালবাগ, জিয়াগঞ্জ, ভগবানগোলা, রানিতলা, লালগোলা, রানিনগর, ইসলামপুর, ডোমকল, জলঙ্গি, কান্দি, ভরতপুর, সালার, হরিহরপাড়া, বেলডাঙা, রেজিনগর, শক্তিপুর, নওদা এলাকায় মিছিল বের করে কংগ্রেসের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। |
অধীর চৌধুরীকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ঘোষণার পর উচ্ছ্বাস
কংগ্রেস কর্মীদের। বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি। |
জেলা কংগ্রেস কমিটির সদস্য তথা মুর্শিদাবাদ পুরসভার কাউন্সিলর বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, “অধীর চৌধুরী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার ফলে রাজ্য কংগ্রেস উজ্জীবিত হওয়ায় লালবাগ ব্লক কংগ্রেস উৎসব পালন করেছে। সবুজ আবির মেখে কর্মী-সমর্থকদের মিছিল বের হয়েছে লালবাগে।” বহরমপুর শহর কংগ্রেস সভাপতি অতীশ সিংহ বলেন, “প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে অধীর চৌধুরীকে মনোনীত করায় আমরা এআইসিসি’র কাছে কৃতজ্ঞ। তবে যে লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তিনি এই জায়গায় পৌঁছেছেন, তাও সকলের কাছে দৃষ্টান্তমূলক।” বেলডাঙার বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত জবাব, “আমরা সকলেই খুব খুশি। তবে বছর খানেক আগে অধীর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হলে দল আরও ভাল জায়গায় থাকত।” |
আর ওঁরা বলছেন... |
এক ব্যক্তি এক পদ কংগ্রেসের নীতি। সে জন্য জেলা
কংগ্রেসের পদ থেকে সরতে হল অধীরদাকে।
তাকেই করা হল প্রদেশ সভাপতি। কী বলব?
হুমায়ুন কবীর
জেলা কার্যকরী সভাপতি, তৃণমূল |
অধীর চৌধুরী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ায়
আমাদের লাভ-ক্ষতি কিছুই নেই। এতে বরং
কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা উৎসাহিত হবে ।
মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য
জেলা সম্পাদক, সিপিএম |
|
বিজেপি মুর্শিদাবাদ জেলায় তার সংগঠনের
শ্রীবৃদ্ধি করেছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কে
হল, তা নিয়ে আমাদের কোনও হেলদোল নেই।
মালা ভট্টাচার্য
জেলা সভাপতি, বিজেপি |
অধীরকে আগেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি
করা উচিত ছিল। অধীর এই দায়িত্ব পাওয়ায়
শুধু জেলা নয়, রাজ্যেও কংগ্রেস চাঙ্গা হবে।
মান্নান হোসেন
সাংসদ, কংগ্রেস |
|
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মহম্মদ আলি অবশ্য বলেন, “রাজনৈতিক কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মন্তব্য করা উচিত নয়। কোনও ব্যক্তি নয়, আমাদের লড়াই দলের বিরুদ্ধে। তবে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের কাছে এটা খুব উৎসাহ ব্যঞ্জক ঘটনা।” তাঁর কথায়, “অধীর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ায় এক দিক থেকে তৃণমূূল কংগ্রেসেরও সুবিধে। কেননা, একটি জেলায় সীমাবদ্ধ থাকা ব্যক্তির প্রভাব যতখানি ছিল, রাজ্যের নেতৃত্বে গেলে তার ক্ষমতারও বিকেন্দ্রীকরণ হবে। এতে লাভ হবে আমাদের দলের।”
এ দিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ায় খুশি জেলা বণিক সভাও। মুর্শিদাবাদ জেলা চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি অজয় কুমার সিংহ বলেন, “এটা জেলাবাসী হিসেবে আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের বিষয়। তাঁর কাছে আমাদের অনেক আশা রয়েছে।” |
অধীর পরিক্রমা |
• ১৯৯১: নবগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী। নির্বাচনে হার।
• ১৯৯৬: ফের প্রার্থী। অভিযোগ, ভোটের আগে মামলায় জড়িয়ে প্রচারে নবগ্রাম যেতে পারেননি। তবে জয়ী।
• ১৯৯৯: বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে ৯৬ হাজার ভোটে জয়ী।
• ২০০১: জেলা কংগ্রেস সভাপতি।
• ২০০৩: কংগ্রেস প্রথমবার মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ দখল করে।
• ২০০৩: বহরমপুর পুরসভার ২৩টি আসনেই জয়ী হয়ে কংগ্রেস বিরোধীশূন্য বোর্ড গঠন করে।
• ২০০৪: ফের বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী।
• ২০০৫: জোড়া খুনের মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার। জেল হেফাজতে। পরে বেকসুর খালাস পান।
• ২০০৮: বহরমপুর পুরসভার ২৫টি আসনেই জয়ী হয়ে কংগ্রেস বিরোধীশূন্য বোর্ড গড়ে।
• ২০০৯: ফের জয়ী অধীর। লোকসভা ভোটে মুর্শিদাবাদের তিনটি আসনই কংগ্রেসের।
• ২০১২: রেল প্রতিমন্ত্রী হলেন অধীর চৌধুরী।
• ২০১৩: তৃণমূল কর্মী খুনে অধীরের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিল সরকার।
• ২০১৩: বহরমপুর পুরভোটে ২৮টি আসনের মধ্যে ২৬টি দখল করে কংগ্রেস।
• ২০১৪: প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। |
|