২২ ফুট ভীমের গলায় সাত লক্ষ টাকার মালা
২ ফুট উঁচু ভীমের মূর্তির গলায় ঝুলছে টাকার মালা। হাতে টাকার চাঁদমালা। প্রায় ৭ লক্ষ টাকার বেশি মালা পরে আছে ব্যবত্তাহাট সংলগ্ন তাড়াগেড়্যা গ্রামের ভীম। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুক শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের পাশে এই গ্রামে প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন ভীমের পূজা হচ্ছে মহা ধূমধামে। সোমবার ভীম একাদশী তিথিতেই পূজার শুরু। এ দিন মন্দিরে পূজা ও অঞ্জলি দিতে ভিড় জমান প্রায় লক্ষাধিক পুণ্যার্থী। মন্দিরের সামনে মাঠে জমে ওঠে ভীমের মেলা।
তাড়াগেড়্যা গ্রামে ভীম পুজো। —নিজস্ব চিত্র।
মহাভারতের কাহিনীর অন্যতম বীরচরিত্র ভীমকে লৌকিক দেবতা হিসেবে পূজা করা হয় গ্রামবাংলার বিভিন্ন এলাকায়। কোথাও জমির রক্ষাকর্তা হিসাবে, কোথাও বলশালী হিসাবে কখনও বা মহামারী থেকে আরোগ্য কামনায় ভীমের পূজা করা হয় বলে জানান তমলুকের ইতিহাস গবেষক জয়দীপ পণ্ডা।
তাড়াগেড়্যা গ্রামের ভীম মেলা কমিটির সভাপতি ৮৩ বছরের প্রবীণ তরেন্দ্রনাথ মান্না বলেন, “ছোটবেলায় খড়ের চালা দেওয়া অস্থায়ী মন্দির গড়ে ভীমের পূজা হত। পরে মাটির দেওয়াল ও টালির চাল দেওয়া মন্দিরে পূজা শুরু হয়। তারও পরে ইটের দেওয়াল হয় মন্দিরের। এই বছর সম্পূর্ণ নতুন করে তৈরি পাকা মন্দিরে ভীমের পূজা হচ্ছে।”
গত কুড়ি বছর ধরেই ভীমপুজো উপলক্ষে মেলা বসছে এলাকায়। মেলা কমিটির সদস্য ৬৪ বছরের প্রবীণ নারায়ণচন্দ্র দাস জানান, “প্রতিমাতেও অভিনবত্ব এসেছে। এখন মহাভারতে ভীমের নানা কাহিনী তুলে ধরা হয় মণ্ডপে। এ বার রয়েছে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রথম দিনের দৃশ্য। প্রতিমা তৈরি করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বালিচকের শিল্পী কুশধ্বজ বেরা।”
তাড়াগেড়্যা গ্রামে ১০ দিনের ভীম মেলা পরিচালনার জন্য রয়েছে ২২ জনের মেলা কমিটি। ওই কমিটির সদস্যা রেনুকা মাইতি তমলুক সান্ত্বনাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষিকা। রেনুকাদেবী বলেন, “লোকমুখে এই মেলার প্রসার ক্রমে বেড়েছে। মেলায় আসা ভক্তদের সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলা থেকে ভক্তরা আসেন। দশ দিন ধরে মেলায় ছৌ নৃত্য, গাজন যাত্রা, নাটক-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।”
মেদিনীপুর শহরের নবীনাবাগে পুজো হচ্ছে ১২ ফুট উচ্চতার ভীম মূর্তি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
এদিন সকালে শ’য়ে শ’য়ে মহিলা ও পুরুষকে হেঁটে, ভ্যান রিকশায় চেপে ভীম মন্দিরের উদ্দেশে রওনা হতে দেখা যায়। কারও মাথায় বাতাসা ভর্তি ঝুড়ি, কারও বাতাসা বোঝাই বস্তা। ভীম মন্দির প্রাঙ্গণে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার ভক্তের সামনে মানতের সেই বাতাসা ছড়ানো হচ্ছে। মন্দিরের পাশে পুকুরে স্নান করে দণ্ডীপাক খাচ্ছে
অসংখ্য ভক্তের দল। নন্দকুমারের বরগোদারগোদা গ্রাম থেকে ৯১ বছরের সুধীর সামন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে এসেছিলেন ভীম মেলায়। সুধীরবাবু বলেন, “অনেকদিন ধরেই এই ভীম মেলার কথা শুনেছি। এ বারই প্রথম এলাম।” দু’বছরের পুত্র সন্তান কৃষ্ণকান্তের জন্য মানত করেছিলেন হাওড়া জেলার শ্যামপুর এলাকার জাল্লাবাজ গ্রামের মন্টু জানা। স্ত্রী-পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে এ দিন ভীম মেলায় এসেছেন তিনি। মন্টুবাবু বলেন, ‘‘ভীমের কাছে মানত করেছিলাম ছেলের মঙ্গলকামনায়। আজ মন্দিরে পূজা দিতে এসেছি।”
তাড়াগেড়িয়া গ্রামের পাশে কুলবেড়িয়া গ্রামের ভীমপূজা দেড়শো বছরের বেশি প্রাচীন। ভক্ত সমাগমে জমজমাট কুলবেড়িয়াও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.