|
|
|
|
বদ্ধ ঘরে বধূর দগ্ধ দেহ, ধৃত শাশুড়ি
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
তালাবন্ধ ঘরের ভিতর থেকে বধূর দগ্ধ দেহ উদ্ধার হল। সোমবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক থানার গোড়াইখালি গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, সকিনা বিবি (১৯) নামে ওই তরুণীর মাত্র আট মাস আগে বিয়ে হয়েছিল। ওই বধূর দাদার অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামী, শাশুড়ি, শ্বশুর, ভাসুর ও জায়ের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার পরেই স্বামী, শ্বশুর, ভাসুর, জা পালিয়ে গেলেও শাশুড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বধূর শাশুড়ি ধৃত আনোয়ারা বিবি তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। খুনের মামলায় শাশুড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে ইতিমধ্যে।”
তমলুক থানার সোয়াদিঘী গ্রামের মেয়ে সকিনার সঙ্গে পাশের গোড়াইখালি গ্রামের যুবক আসাদুল মল্লিকের বিয়ে হয়েছিল মাত্র আট মাস আগে। আসাদুল পেশায় রাজমিস্ত্রি। বিয়ের কয়েক মাস পরে সন্তান ধারণ নিয়ে সকিনার সঙ্গে তাঁর স্বামী, শাশুড়ির মতবিরোধ বাধে বলে অভিযোগ। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন সকিনা। তাঁর দাদা শেখ জাহাঙ্গিরের অভিযোগ, “গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য স্বামী, শাশুড়ি-সহ বাড়ির সকলে চাপ দিচ্ছিল বলে বোন আমাদের জানিয়েছিল। এই নিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় পরিবারে অশান্তি হয়। আমার বাবা-মা জানতে পেরে ওদের বাড়িতে গিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মীমাংসা করে দিয়েছিল।”
সোমবার সকাল ৮টা নাগাদ শাশুড়ি আনোয়ারা বিবি শ’খানেক মিটার দূরে সকিনার বাপের বাড়িতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার খবর দেন। বাপের বাড়ির লোকেরা যখন আসেন, ততক্ষণে স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির বাকি লোকজন পালিয়েছেন। তালা ভেঙে বধূর ঝলসানো দেহ উদ্ধার হয়। জাহাঙ্গিরের কথায়, “আমাদের অনুমান সকিনা বাড়ির মধ্যে ঘুমিয়ে থাকার সময় বাইরে থেকে তালা মেরে দিয়ে আগুন লাগানো হয়েছে। আমরা পৌঁছনোর পরেও দরজায় তালা লাগানো ছিল।” আনোয়ারা বিবিও পালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁকে ধাওয়া করে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ধরে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে তমলুক থানার পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও বধূর মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য তমলুক জেলা হাসপাতালে পাঠায়।
এদিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় একতলা পাকাবাড়ির সামনে গ্রামবাসীদের জটলা। বাড়ির একটি ঘরে খাটের একাংশ, বিছানা, বালিশ আগুনে পোড়া অবস্থায় রয়েছে। ভিতরে তখনও কেরোসিনের গন্ধ। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশও দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগানো ছিল বলে জানিয়েছে। একটি জানলা খোলা ছিল শুধু। দরজায় তালা লাগানো ছিল কেন তা নিয়ে কিছু বলতে পারেননি ধৃত শাশুড়ি। তমলুক থানায় বসে আনোয়ারা বিবি বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ঠিক নয়। বাড়িতে টিভি দেখা নিয়ে ছেলের সঙ্গে বউমার ঝামেলা হয়েছিল। আজ সকালে বউমা আর আমি একসঙ্গে রুটি খেয়েছিলাম। তারপর আমি একটু বাড়ির বাইরে গিয়েছিলাম। ওইটুকু সময়ের মধ্যে কী ভাবে কী হয়েছে জানি না।”
গোড়াইখালি গ্রামের সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য শেখ মতিউর রহমান অবশ্য জানিয়েছেন, ওই পরিবারের অশান্তির বিষয়ে তাঁদের কিছু জানা নেই। তিনি বলেন, “আজ সকালে ওই বধূর আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনার কথা জানতে পারি। আমরা চাই পুলিশ ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।” |
|
|
|
|
|