|
|
|
|
এক মাস নিরামিষ খাবার আদিবাসী হস্টেলে, ক্ষোভ
নিজস্ব সংবাদাতা • বেলপাহাড়ি |
মাওবাদীদের এক সময়ের ধাত্রীভূমি বেলপাহাড়িতেই সরকারি স্কুলের আবাসিক আদিবাসী ছাত্রীদের খাদ্যতালিকা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে মাছ, মাংস ও ডিম। রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর পরিচালিত ‘বেলপাহাড়ি রাষ্ট্রীয় আদিবাসী আবাসিক উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়’টির ৩৮০ জন আবাসিক পড়ুয়াকে গত এক মাস ধরে কার্যত নিরামিষ খাবার দেওয়া হচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা লম্বা ছুটিতে চলে গিয়েছেন। প্রধান শিক্ষিকার অবর্তমানে দীর্ঘদিনের নানা অব্যবস্থার জেরে টিচার-ইন-চার্জের দায়িত্ব পালন করতে রাজি নন সহ-শিক্ষিকা। এই পরিস্থিতিতে স্কুলটির পরিচালন ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। সোমবার স্থানীয় ‘শিক্ষা বাঁচাও অভিভাবক কমিটি’র উদ্যোগে বেলপাহাড়ি ব্লক অফিস প্রাঙ্গণে অবস্থান-বিক্ষোভ করে বিডিও’কে ১১ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেন অভিভাবকেরা। এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস সদস্য সুব্রত ভট্টাচার্য। বিডিও’র কাছে অভিযোগ জানাতে এসেছিল ছাত্রীরাও। বিডিও সর্বোদয় সাহা অবশ্য পড়ুয়াদের নিরামিষ খাওয়ানোর জন্য হস্টেল কর্তৃপক্ষকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। এ দিন বিষয়টি জানার পরে তড়িঘড়ি হস্টেল সুপারকে শো-কজ করেছেন বিডিও। |
|
বেলপাহাড়ি ব্লক অফিসে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র। |
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে আমিষ খাদ্যের চাহিদাপত্রে বিডিও স্বাক্ষর না-করায় মাছ, মাংস ও ডিম কেনা বন্ধ রেখেছেন হস্টেল কর্তৃপক্ষ। যার ফলে, পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আবাসিক ছাত্রীরা। বিডিও স্কুল পরিদর্শন করতে আসেন না বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকেরা। বিডিওর পাল্টা দাবি, “ওই স্কুলের হস্টেলে ‘পুকুর চুরি’ হচ্ছে। আমি লিখিত ভাবে মাছ, মাংস, ডিম বন্ধ করার কোনও নির্দেশ দিইনি। আমি হস্টেল সুপারকে শো-কজ করেছি।” হস্টেল সুপার উর্মিলা সর্দারকে ফোন করা হলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “বিডিও সাহেব আজ আমাকে ভীষণ ভাবে বকাবকি করছেন। কিন্তু উনি চাহিদাপত্রে সই করেননি বলেই তো আমিষ খাবার দিতে পারিনি। আমার কী দোষ?”
এই ঘটনায় ফের প্রশাসনের গা-ছাড়া মনোভাবকেই দায়ী করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস সদস্য সুব্রত ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রীর বহু কথিত পিঁপড়ের ডিম ও কন্দমূল খেয়ে বেঁচে থাকার অভ্যাসেই আদিবাসী ছাত্রীদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে প্রশাসন।” বিনপুরের সিপিএম বিধায়ক দিবাকর হাঁসদা বলেন, “এই ঘটনাই প্রমাণ করছে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের জঙ্গলমহল কেমন হাসছে। বিষয়টি বিধানসভায় তুলব।” পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার বক্তব্য, “বাম আমল থেকেই স্কুলটিতে অরাজকতার সূত্রপাত। কেন এই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করব।”
আদিবাসী মেয়েদের জন্য রাজ্যের একমাত্র সরকারি আবাসিক স্কুলটির যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করে রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। গত আট বছর ধরে স্কুলটির পরিচালনার ব্যাপারে বহুবিধ সমস্যা রয়েছে। ২০০৬ সালের মার্চে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্বে আসেন তপর্ণা বিশ্বাস। কিন্তু স্কুল পরিচালনার ব্যাপারে তপর্ণাদেবীর বিরুদ্ধে নানা গুরুতর অভিযোগ ওঠায় ২০০৭ সালে তপর্ণা দেবীর হাত থেকে স্কুলের প্রশাসনিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে বেলপাহাড়ির বিডিওকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখনও স্কুলের প্রশাসক হলেন বিডিও-ই। ‘শিক্ষা বাঁচাও অভিভাবক কমিটি’র আন্দোলনের জেরে ২০১১ সলের সেপ্টেম্বরে তপর্ণাদেবীকে স্কুল থেকে সরিয়ে মহাকরণে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের সচিবালয়ে সাময়িক ভাবে পাঠানো হয়। তবে তাঁকে বদলি করা হয়নি। স্কুলের সহ শিক্ষিকা গৌরী মজুমদারকে টিচার-ইন-চার্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত বছরের জুন মাসে ফের তপর্ণাদেবীকে স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা পদে পাঠানো হয়। গৌরীদেবী টিচার ইন চার্জের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তপর্ণাদেবীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। কিন্তু গত নভেম্বরে তপর্ণাদেবী ৯ মাসের লম্বা ছুটিতে (চাইল্ড কেয়ার লিভ) চলে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে গৌরীদেবী আর টিচার-ইন-চার্জের দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। ফলে, একেবারে কর্তৃত্ব বিহীন অবস্থায় চলছে স্কুলটি। শিক্ষা বাঁচাও অভিভাবক কমিটি’র সম্পাদক সুবল সরেনের অভিযোগ, “আবাসিক স্কুলটির বিষয়ে প্রশাসন একেবারেই উদাসীন। স্কুলের ১২টি ক্লাসের মোট ৩৮০ জন ছাত্রীর জন্য শিক্ষিকা রয়েছেন ১২ জন। আদিবাসী স্কুলে সাঁওতালি ভাষায় পঠনপাঠনের কোনও ব্যবস্থা নেই। স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা বা টিচার ইন চার্জ পদে কেউ না থাকায় ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের আবেদনপত্রগুলি পাঠানোর কাজও থমকে রয়েছে।” |
|
|
|
|
|