র্যান্টি মার্টিন্স বনাম লুসিয়ানো সাব্রোসা নয়! বেলো রাজাক বনাম জোসিমারের ধুন্ধুমার টক্করও নয়! মঙ্গলবার আই এফ এ শিল্ড সেমিফাইনাল খেলতে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে দুই বাঙালি কোচের কপালে ভাঁজ দুই বঙ্গসন্তানকে নিয়ে। যা অনায়াসে নাইজিরিয়ান বনাম ব্রাজিলিয়ানদের মহাযুদ্ধকে ‘ব্যাকসিট’ পাঠিয়ে দিতেই পারে!
সোমবার সকাল থেকে দুপুর-- যুবভারতীতে ঢুঁ মারতেই একে একে বেরিয়ে এল মহমেডান ও ইউনাইটেডের অন্দরে পুষে রাখা চাপা টেনশনের দু’টো তথ্য! আর সেটা কী? অসীম বিশ্বাসের চোটে মহমেডান কোচ সঞ্জয় সেনের দলে যখন প্রবল স্ট্রাইকার-সমস্যা, তখন লালকমল ভৌমিকের অভাবে মাঝমাঠের সঠিক কম্বিনেশন খুঁজতে হিমশিম ইউনাইটেড কোচ অঞ্জন নাথ। মহমেডান কোচ বলছিলেন, “অসীম ভাল ফর্মে খেলছিল। আগের ম্যাচে গোলও করেছে। শিল্ড সেমিফাইনালে ওর অভাব একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে।” ইউনাইটেড কোচ অঞ্জন আবার বললেন, “আমাদের দলে বল সাপ্লাইয়ের একটা সমস্যা শুরু থেকেই আছে। লালকমল থাকলে সেই অভাব কিছুটা হলেও কম হয়। ওর জায়গায় এখন কোন ফুটবলারকে খেলাব সেটাই ঠিক করে উঠতে পারছি না।”
তবে দুই বাঙালি কোচের ব্যাখ্যা যা-ই হোক না কেন, সমস্যার পাল্লা-ভারী কিছুটা হলেও মহমেডানের দিকে। কারণ, লালকমলের বদলি হিসেবে মাঝমাঠে জয়ন্ত সেন, শৌভিক চক্রবর্তী এবং তপন মাইতিকে অঞ্জন হাতে পেলেও, জোসিমার বাদে ফরোয়ার্ডে সঞ্জয়ের হাতে কোনও বিকল্প নেই। দীপেন্দু বিশ্বাস আছেন, কিন্তু তিনিও যে না খেলে খেলে একেবারে ম্যাচ প্র্যাক্টিসের বাইরে। যদিও আত্মবিশ্বাসী দীপেন্দু বলছিলেন, “সুযোগ পেলে সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করব। এ রকম সেমিফাইনাল আগে অনেক খেলেছি। জানি কী ভাবে দলকে জেতাতে হয়।” |
ফাইনালে যেতে গেল হারাতেই হবে র্যান্টি মার্টিন্সের ইউনাইটেড।
সেই লড়াইয়ের চব্বিশ ঘণ্টা আগে দক্ষিণ কলকাতায় সতীর্থ লুসিয়ানোর
ফ্ল্যাটে জোরদার আড্ডায় মজেছেন মহমেডানের জোসিমার ও দীপেন্দু। ছবি: উৎপল সরকার। |
এ দিন পেনাল্টি কিক অনুশীলনে যে সাত জন সাদা-কালো ফুটবলার ছিলেন, তাতে দীপেন্দুকেও রাখা হয়েছিল।
সঞ্জয়ের প্র্যাক্টিস দেখে অবশ্য মনে হল, স্ট্রাইকার-সমস্যা মেটাতে একা জোসিমারকে খেলাতে চাইছেন তিনি। অর্থাৎ ৪-৪-১-১ ছকে। যে ছক একেবারেই ‘না পসন্দ’ ছিল মহমেডান থেকে ডেম্পোয় যাওয়া সাদা-কালো স্ট্রাইকার টোলগে ওজবের। এমনকী আগের কোচ আবদুল আজিজের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাইকারের ঝামেলার সুত্রপাতও সেখান থেকেই। কিন্তু সঞ্জয়ের আমলে সেই ভয় নেই। জোসিমারের পিছনে পেনকে ফ্রি প্লেয়ার করে দু’টো উইং দিয়ে নবি-ইসফাককে কাজে লাগাতে চাইছেন সঞ্জয়। তবে প্রয়োজনে নবিকেও স্ট্রাইকার হিসেবে খেলানোর রাস্তা খোলা রাখা হচ্ছে। মহমেডান কোচের অবশ্য একটা সুবিধা, ইউনাইটেডের বেশিরভাগ ফুটবলারকেই খুব কাছ থেকে চেনেন তিনি। প্রাক্তন কোচ বলে কথা। তবে ইউনাইটেড কোচ সেটাকে পাত্তা দিতে চাইছেন না। তাঁর যুক্তি, “উনি আমাদের দলকে ভাল করে চেনেন তো কী হয়েছে? আমরাও ওদের সম্পর্কে সব খোঁজ খবর রাখি! ফুটবলারদের একটা কথাই বলেছি, পাহাড়ের এত উপরে এসেছি যখন চূড়ায় উঠতেই হবে।”
দুই বঙ্গসন্তানের অভাব যেন দুই শিবিরের আবহাওয়াও বদলে ফেলেছে! স্বদেশি ফুটবলাররা তো বটেই, বিনয়ের চাদরে তাল ঠুকছেন বিদেশিরাও। সাম্প্রতিক কালে ভারতে খেলতে আসা ডিফেন্ডারদের যে তালিকা তৈরি করেছেন র্যান্টি, তাতে লুসিয়ানোকে বেঙ্গালুরু এফসি-র জন জনসন এবং ইস্টবেঙ্গলের উগা ওপারার পরেই রাখছেন। নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার বললেন, “লুসিয়ানোর মতো এত ঠান্ডা মাথার ডিফেন্ডার খুব কম এসেছে ভারতে। ওকে কাটিয়ে গোল করা সহজ নয়।” র্যান্টির গলায় লুসিয়ানোর গুনগান তো লুসিয়ানোর মুখেও যে র্যান্টি-বন্দনা! “র্যান্টির দু’টো পা-ই সমান চলে। বিপক্ষের ডিফেন্সিভ থার্ডকে কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়, সেটাতেও সিদ্ধহস্ত। ওকে পুলিশ মার্কিং দিয়ে আটকানো সম্ভব নয়। জোনাল মার্কিং করতে হবে।”
সোমবার রাতে ইউনাইটেড কর্তা নবাব ভট্টাচার্য ফেসবুকে একটা পোস্ট করেছেন, “আইএফএ শিল্ড সেমিফাইনাল জেতা খুব খুব দরকার। কারণ ফাইনালে উঠলে কিছু টাকা পাওয়া যাবে। এই মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অস্তিত্বের লড়াই। শুনেছি ভগবান সাহসীদের সহায় হন। এবার দেখি...” প্রার্থনা চলছে মহমেডান শিবিরেও। তবে অস্তিত্ব রক্ষার নয়, মর্যাদার। এখন শুধু দেখার, ওপরওয়ালা কার দিকে ঝোঁকেন! |
মঙ্গলবারে আইএফএ শিল্ড সেমিফাইনাল
ইস্টবেঙ্গল: শেখ জামাল (যুবভারতী, ২-৪০)
মহমেডান: ইউনাইটেড স্পোর্টিং (যুবভারতী ৬-০০) |